আমেরিকার হুন্ডাই কারখানায় অভিযানের সময় দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কর্মীরা (উপরের ছবি)। চলছে অভিযান (নীচের ছবি)। ছবি: সংগৃহীত।
এ যেন ছোটখাট এক ‘যুদ্ধক্ষেত্র’! হাতে অস্ত্র নিয়ে কারখানা চত্বরে রীতিমতো চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছেন সরকারি অফিসারেরা। সুরক্ষার বর্ম পরে দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কর্মীরা। ভয়ে বেশিরভাগেরই মুখ পাংশু। আমেরিকার হুন্ডাইয়ের কারখানায় তদন্তকারীদের একটি দল হানা দেওয়ার সময়ে ঠিক কী ঘটেছিল, প্রত্যক্ষদর্শী কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তার একটি ছবি প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন। সেখানেই জানা গিয়েছে, হুন্ডাই কারখানার প্রত্যেক কর্মীকে ধরে ধরে ভিসার মেয়াদের বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য জানতে চেয়েছেন তদন্তকারীরা। তার পরে কাউকে ছাড় দিয়েছেন, কাউকে গ্রেফতার। অনেকে পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে পুকুরে ঝাঁপ দেন, কেউ আবার গরম হাওয়া বার করার পাইপে লুকিয়ে পড়েন বলে অভিযোগ।
অবৈধ অভিবাসীদের খোঁজে দক্ষিণ-পূর্ব জর্জিয়ার সাভান্নাথ থেকে ২৫ মাইল পশ্চিমে এলাবেল এলাকায় হুন্ডাইয়ের কারাখানায় গত বৃহস্পতিবার হানা দেয় মার্কিন তদন্তকারীদের বিশাল একটি দল। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশেই এই তল্লাশি অভিযান বলে মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টার তল্লাশির পর ওই কারখানা থেকে ৪৭৫ জন শ্রমিককে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের অধিকাংশই দক্ষিণ কোরিয়ার বাসিন্দা। অনেকের কাছে বৈধ কাগজপত্র থাকায় তাঁদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। সে রকমই কয়েক জন কর্মী সিএনএনের কাছে মুখ খুলেছেন।
এক কর্মী সিএনএনকে বলেন, ‘‘ওঁরা (তদন্তকারীরা) সকলকে দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়াতে বললেন। ও ভাবে প্রায় ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে ছিলাম। তার পরে অন্য এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করার পরে অন্য এক ভবনে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমাদের বার করে দেওয়া হয়।’’ অন্য এক কর্মী জানিয়েছেন, আমেরিকার অভিবাসন দফতরের কর্মীদের আসতে দেখে অনেকেই পালিয়ে যান। কেউ কেউ এসির গরম হাওয়া বার করে দেওয়ার পাইপে গিয়ে লুকিয়ে পড়েন। অনেকে কারখানা চত্বরেরই পুকুরে ঝাঁপ দেন। আমেরিকার অ্যাটর্নির দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ‘‘এজেন্টরা নৌকায় চেপে পুকুর থেকে তাঁদের খুঁজে বার করেছে। এক জন আবার নৌকার নীচে সাঁতরে এসে সেটি উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেন। যদিও লাভ হয়নি। পুকুর থেকে সকলকে ধরা হয়েছে। তাঁরা সকলেই অবৈধ অভিবাসী।’’
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অফিসারদের তরফে জানানো হয়েছে, হুন্ডাইয়ের কারখানা থেকে যাঁদের ধরা হয়েছে, তাঁদের বেশিরভাগই অবৈধ ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে আমেরিকায় এসেছেন। নয়তো ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও থেকে গিয়েছেন। যাঁদের ধরা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে প্রায় ৩০০ জন আমেরিকার বন্ধু দেশ বলে পরিচিত উত্তর কোরিয়ার বাসিন্দা। এর পরেই নড়েচড়ে বসে কোরিয়ার সরকার। আমেরিকায় কূটনীতিবিদদের পাঠিয়ে সমঝোতার প্রক্রিয়া শুরু করে সে দেশের সরকার। রাজধানী সোলে আমেরিকার দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং এই ঘটনার পর জরুরি ভিত্তিতে বৈঠকে বসেন। ধৃত কোরীয়দের সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপের নির্দেশ দেন তিনি। কোরিয়ার বিদেশমন্ত্রী চো হিউন জানান, প্রয়োজনে তিনি নিজে ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত। তার পরেই জানা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তাঁদের দেশে ফেরাতে বিমান পাঠানোর কথা জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম থেকেই অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন ট্রাম্প। দেশ জুড়ে ধরপাকড় শুরু করেছেন। সীমান্তে বাড়িয়েছেন নজরদারি। ভারতীয়দের অনেককেও দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন। এমনকি, অবৈধ অভিবাসনের জন্য সীমান্তবর্তী কানাডা এবং মেক্সিকোর দিকে আঙুল তুলেছিলেন তিনি। জর্জিয়ার ঘটনাকে এই পর্বে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অভিবাসী খোঁজার তল্লাশি অভিযান বলা হচ্ছে।