International

দক্ষিণ চিন সাগরে রকেট লঞ্চার মোতায়েন করল ভিয়েতনাম, সতর্ক চিন

১৯৮৮ সাল। স্প্র্যাটলিস দ্বীপপুঞ্জ ভিয়েতনামের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে বিশাল নৌবহর পাঠিয়ে দিয়েছে চিন। ভিয়তেনামের নৌসেনা নেহাতই দুর্বল। তবু সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে স্প্র্যাটলিসে তারা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৬ ১৫:০৫
Share:

ভিয়েতনামের রকেট লঞ্চারের লক্ষ্য কি এখন চিনের সামরিক পরিকাঠামো? এই প্রশ্নকে ঘিরেই উত্তাপ বাড়ছে দক্ষিণ চিন সাগরে।

১৯৮৮ সাল। স্প্র্যাটলিস দ্বীপপুঞ্জ ভিয়েতনামের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে বিশাল নৌবহর পাঠিয়ে দিয়েছে চিন। ভিয়তেনামের নৌসেনা নেহাতই দুর্বল। তবু সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে স্প্র্যাটলিসে তারা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে।

Advertisement

একের পর এক দ্বীপ হাতছাড়া হচ্ছিল। সুবি, ফায়ারি ক্রস, মিসচিফ রিফ দখল করে চিনা নৌবহর অগ্রসর হচ্ছিল সাউথ জনসন রিফের দিকে। ভিয়েতনাম নৌসেনার ৬৪ জন জওয়ান তখন দাঁড়িয়ে সেই দ্বীপে। হাতে অস্ত্রশস্ত্র খুব বেশি নেই। চিনা বাহিনী আগুন ওগরাতে ওগরাতে এগোচ্ছিল। সাউথ জনসন রিফে দেশের পতাকাটা রক্ষা করার জন্য তবু দাঁড়িয়ে রইলেন ভিয়েতনাম নৌসেনার জওয়ানরা। চিনা বাহিনী ৬৪ জনকেই হত্যা করে দখল নিয়েছিল সাউথ জনসন রিফের।

ভিয়েতনামে আজও অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে স্মরণ করা হয় এই কাহিনি। কিন্তু এমন বেদনাদায়ক ঘটনার মুখে যাতে আর পড়তে না হয়, তার জন্য হ্যানয়ের প্রস্তুতিও এখন যথেষ্ট। স্প্র্যাটলিসের অধিকাংশ এলাকাই এখন চিনের দখলে। কিন্তু দক্ষিণ চিন সাগরের ওই বিতর্কিত দ্বীপপুঞ্জের ২১টি ছোট-বড় দ্বীপ এখনও ভিয়েতনামের হাতে রয়েছে। গত মাসে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল দক্ষিণ চিন সাগরে বেজিং-এর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ায় নিজেদের হাতে থাকা এলাকা দুর্ভেদ্য করে তুলতে ময়দানে নেমে পড়েছে ভিয়েতনাম। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের খবর, স্প্র্যাটলিসে মোবাইল রকেট লঞ্চার পাঠিয়ে দিয়েছে ভিয়েতনাম। পাঁচটি নৌঘাঁটিতে সেগুলি মোতায়েন করা হয়েছে। এমন কয়েকটি ঘাঁটিতেই সেগুলি মোতায়েন করা হয়েছে, যেখানে থেকে স্প্র্যাটলিসে চিনের গড়ে তোলা বিমানঘাঁটি এবং অন্যান্য সামরিক পরিকাঠামোয় যে কোনও মুহূর্তে আঘাত হানা সম্ভব। আকাশ থেকে যাতে দেখা না যায়, সে ভাবেই মোতায়েন করা হয়েছে মোবাইল রকেট লঞ্চারগুলি। খবর ওয়াশিংটন সূত্রের।

Advertisement

ভিয়েতনামের এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে দক্ষিণ চিন সাগরের উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দেবে, বলছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। আন্তর্জাতিক আদালতের রায় সম্পূর্ণ বিপক্ষে যাওয়া সত্ত্বেও বেজিং দক্ষিণ চিন সাগরে দখলীকৃত এলাকা ছাড়তে এখনও রাজি নয়। ভিয়েতনাম যে ভাবে স্প্র্যাটলিসের চিনা ঘাঁটিগুলিকে নিশানা করে মোবাইল রকেট লঞ্চার মোতায়েন করেছে বলে খবর, তাতে চিনা নৌসেনাও চুপচাপ বসে থাকবে না। পাল্টা পদক্ষেপ বেজিং নেবেই। ফলে দক্ষিণ চিন সাগরের বুকে অস্ত্রের পরিমাণ লাফিয়ে বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ভিয়েতনাম যে মোবাইল রকেট লঞ্চার মোতায়েন করেছে বলে খবর, সেগুলি নাকি ইজরায়েলের কাছ থেকে সম্প্রতি কেনা ‘এক্সট্রা’ রকেট আর্টিলারি সিস্টেম। ইজরায়েলের এই ‘এক্সট্রা’ রকেট অত্যন্ত নির্ভুল ভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। ১৫০ কিলোমিটার পাল্লা এই রকেটের। টার্গেটিং ড্রোনের মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রণ করা যায় বলে সাধারণ লক্ষ্যবস্তুর পাশাপাশি যুদ্ধজাহাজেও আঘাত হানতে পারে ‘এক্সট্রা’।

আরও পড়ুন: একটা মাত্র এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার, তাও যুদ্ধের অযোগ্য, প্রবল চাপে চিন

হ্যানয় অবশ্য স্প্র্যাটলিসে মোবাইল রকেট লঞ্চার মোতায়েন করার কথা এখনও স্বীকার করেনি। ভিয়েতনামের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, স্প্র্যাটলিসে রকেট মোতায়েন করার খবর ‘নির্ভুল’ নয়। কিন্তু এই মন্তব্যের বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। ভিয়েতনামের উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সিনিয়র লেফটেন্যান্ট জেনারেল নগুয়েন চি ভিন জুন মাসেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, স্প্র্যাটলিসে রকেট মোতায়েন করা হতে পারে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে সিঙ্গাপুরে তিনি বলছিলেন, ‘‘স্প্র্যাটলিসে এখনও পর্যন্ত কোনও অস্ত্র মোতায়েন করা হয়নি, কিন্তু সে রকম পদক্ষেপ করার সব অধিকারই হ্যানয়ের রয়েছে।’’ ভিনের ওই মন্তব্যের পর থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছিল। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে স্প্র্যাটলিসে রকেট লঞ্চার মোতায়েনের খবর আসার পর, উত্তেজনা বাড়তে শুরু করেছে। চিনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘‘চিনের সশস্ত্র বাহিনী স্প্র্যাটলিসের চারপাশের জলভাগে এবং আকাশে সতর্ক নজর রাখছে।’’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘আমরা আশা করি, দক্ষিণ চিন সাগরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট দেশটি চিনের সঙ্গে হাত মিলিয়েই চলবে।’’ চিনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এই বিবৃতিতে ভিয়েতনামের প্রতি প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারিই দেখছেন প্রতিরক্ষে বিশেষজ্ঞরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন