পুলওয়ামা কাণ্ডের পর আজ প্রথম মুখোমুখি হলেন ভারত ও আমেরিকার নেতৃত্ব। ওয়াশিংটনে আজ মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়োর সঙ্গে বৈঠক করলেন বিদেশসচিব বিজয় কেশব গোখলে। সূত্রের খবর, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য আমেরিকার দেওয়া এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান, ভারতের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো নিয়ে ওয়াশিংটনকে ক্ষোভ জানানো হয়েছে। পাকিস্তানের হাতে যে সব যুদ্ধবিমান আছে, সেগুলির মধ্যে একমাত্র এফ-১৬ থেকেই ‘আমরাম ক্ষেপণাস্ত্র’ ছোড়া যায়। সেই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সীমান্তে ভারতীয় সেনাছাউনি আক্রমণ করার বিষয়টিও তুলেছেন বিদেশসচিব। বৈঠকে যে বিষয়টির উপর জোর দিয়েছেন গোখলে তা হল, আমেরিকা প্রচুর ভর্তুকি দিয়ে পাকিস্তানকে যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছিল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য। ভর্তুকির সেই অর্থ এসেছে মার্কিন করদাতাদের অর্থে। কিন্তু তার চূড়ান্ত অপব্যবহার হচ্ছে। পাকিস্তান ওই যুদ্ধ-সরঞ্জাম ভারতের বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে।
গোটা বিশ্বে পাকিস্তানকে একঘরে করতে জোরদার চেষ্টা চলছে অন্যান্য ভাবেও। এবং ভারতের এই ‘অল আউট’ চেষ্টায় কাজও হচ্ছে বলে মনে করছে সাউথ ব্লক। তাদের মতে, সন্ত্রাস দমনের প্রশ্নে ভারত-পাক চলতি উত্তেজনার পর্বে নয়াদিল্লি কূটনৈতিক ভাবে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ফোনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তায়িপ এর্দোগানকে বিশেষ জোর দিয়ে বুঝিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদের সমস্যা চিরদিনের জন্য মুছে ফেলতে অবিলম্বে কার্যকর কিছু পদক্ষেপ করতেই হবে। এর্দোগান ভারতে জঙ্গি হানায় হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। মোদী ফোনে কথা বলেছেন আবু ধাবির যুবরাজ শেখ মহম্মদ বিন জায়েদ আল নাহানের সঙ্গেও। মুসলিম দেশগুলির মঞ্চ ওআইসি-র সম্মেলনে প্রথম বার ভারতকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য যুবরারাজকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সৌদি আরবের উপ-বিদেশমন্ত্রী আদেল আল জুবেইরের ভারত সফরকেও পাকিস্তানকে একঘরে করার লক্ষ্যে যথা সম্ভব কাজে লাগানো হচ্ছে। নয়াদিল্লিতে জুবেইরের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে আজ দিনভর পাক ভূমিকার নিন্দায় মুখর থেকেছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। অনুরোধ জানিয়েছেন, সৌদি আরব যেন পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামো ধ্বংস করার জন্য ইসলামাবাদের উপরে চাপ তৈরি করে। পুলওয়ামা কাণ্ডের আগেও ভারতে এসেছিলেন সৌদি যুবরাজ। তখনও যৌথ বিবৃতিতে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস এবং জইশের কথা বলা হয়। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ রুখতে সৌদি আরবের পূর্ণ সহযোগিতার কথাও ছিল সেই বিবৃতিতে।
ভারতকে ডাকার প্রতিবাদ করে পাকিস্তান ওআইসি-র মতো মুসলিম মঞ্চ বয়কট করেছে এ বার। কিন্তু প্রকাশ্যেই ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। তারাই ছিল ওই সম্মেলনের আয়োজক। পুলওয়ামা হামলার পর অন্য মিত্রদেরও সে ভাবে পাশে পাচ্ছে না পাকিস্তান। আজ পম্পেয়ো-গোখলে বৈঠকের পর বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর আমেরিকা যে ভাবে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে, তার জন্য পম্পেয়োকে ব্যক্তিগত ভাবে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন গোখলে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলির কথাও জানানো হয়েছে তাঁকে।’’ বিবৃতিতে এ-ও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘‘পম্পেয়ো আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস নিয়ে ভারতের উদ্বেগের বিষয়টি খতিয়ে দেখেছেন। দু’পক্ষই একমত, পাকিস্তানকে তাদের ভূখণ্ডে জঙ্গিদের স্বর্গোদ্যান নির্মূল করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।’’