‘কুমারী, সুন্দরী, বয়স ১২, দাম...’ হোয়াটসঅ্যাপে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে আইএস!

হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে ভেসে উঠছে বিজ্ঞাপনগুলো। টেলিগ্রাম অ্যাপে আরও বেশি করে দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞাপনটা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৬ ১৫:৩৭
Share:

হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে ভেসে উঠছে বিজ্ঞাপনগুলো। টেলিগ্রাম অ্যাপে আরও বেশি করে দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞাপনটা।

Advertisement

‘‘কুমারী, সুন্দরী, বয়স ১২ বছর। ... দাম ১২৫০০ ডলারে পৌঁছে গিয়েছে এবং খুব তাড়াতাড়িই বিক্রি হয়ে যাবে।’’

এই বিবরণ যার সম্পর্কে দেওয়া হয়েছে, সেই কিশোরী ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের। ইরাক, সিরিয়া সহ মধ্য এশিয়ায় বসবাসকারী এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের রয়েক হাজার মহিলা, তরুণী, কিশোরী ও শিশু এখন আইএস জঙ্গিদের হাতে বন্দি। বিভিন্ন বয়সের এই সব নারীকে যৌনদাসী বানিয়েছে ইসলামিক স্টেট। এই মুহূর্তে অন্তত ৩০০০ ইয়াজিদি যৌনদাসী রয়েছে জঙ্গিদের কব্জায়। মোটা টাকা উপার্জনের জন্য তাদের অনেককেই এখন বিক্রি করে দিচ্ছে জঙ্গিরা। ভাল খরিদ্দার পেতে হোয়াটসঅ্যাপে, টেলিগ্রাম অ্যাপে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

২০১৪ সালের অগাস্ট নাগাদ ইয়াজিদি এলাকা দখল করে নিয়েছিল আইএস। কুর্দ-ভাষী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টার গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে দেওয়া হয়েছিল। বহু ইয়াজিদি পুরুষকে খুন করা হয়। বাকিদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়। আর কিশোরী, তরুণী, যুবতী সহ বিভিন্ন বয়সের নারীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গি শিবিরে। তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ইয়াজিদি শিশুদেরও। সেই থেকে বন্দি মহিলাদের যৌনদাসীতে পরিণত করা হয়েছে। প্রত্যেক মহিলার মালিকানা তুলে দেওয়া হয়েছে কোনও না কোনও আইএস নেতা বা যোদ্ধার হাতে। গত কয়েক বছর ধরে রোজ ধর্ষিতা হচ্ছেন ইয়াজিদি মহিলারা, তরুণীরা।

ইয়াজিদি মেয়েদের এ বার বিক্রি করে দেওয়াও শুরু হয়েছে। একের পর এক তেলের খনি জঙ্গি সংগঠনটির হাতছাড়া হয়েছে। ন্যাটো এবং রুশ বাহিনীর দ্বিমুখী হামলায় ক্রমশ জমি হারাচ্ছে আইএস। রোজ পিছু হঠছে। আর্থিক অবস্থা বেশ সঙ্কটে। তাই নিজেদের জিম্মায় থাকা ইয়াজিদি মেয়েদের মোটা টাকায় অন্য কারও কাছে বিক্রি করে কিছু রোজগার করে নিতে চাইছে জঙ্গিরা। জানাচ্ছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক এবং সিরিয়ায় কর্মরত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা। সেই বেচাকেনার জন্যই টেলিগ্রাম আর হোয়াটসঅ্যাপকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: তারিশির মা-বাবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী গুলশনে হামলাকারীর বাবা

অনেক ইয়াজিদি মহিলা জঙ্গি শিবির থেকে পালিয়েও গিয়েছেন। মহিলাদের আইএস শিবির থেকে গোপনে উদ্ধার করে নিরাপদে সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ঢুকিয়ে দেওয়াটা এখন অনেক চোরাকারবারির পেশা। তাদের সহায়তায় অনেক মহিলা পালাতে পেরেছেন। দীর্ঘ দিন অত্যাচার এবং অকথ্য যৌন নির্যাতন সহ্য করার পরে জঙ্গি শিবির ছেড়ে পালাতে পারা তাঁদের কাছে নতুন জীবন পাওয়ার সমান। কিন্তু ইয়াজিদি মহিলাদের পালানো রুখতে আইএস এখন নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছে। কোন ইয়াজিদি মেয়ে কার মালিকানাধীন, সে সব রেজিস্ট্রি করে করে রাখা হচ্ছে ছবি সহ। কোনও বন্দি মহিলা চোরাকারবারীর সঙ্গে পালালেই হোয়াটসঅ্যাপে খবর ছড়িয়ে যাচ্ছে। যিনি পালিয়েছেন, তাঁর ছবি পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন চেক পয়েন্টের রক্ষীদের কাছে। ফলে কোনও চেক পয়েন্ট পেরনোর চেষ্টা করলেই ধরা পড়ে যাচ্ছেন তাঁরা। কুর্দিস্তানের আঞ্চলিক সরকারের দেওয়া হিসাব বলছে, আগে প্রতি মাসে গড়ে ১৩৪ জন ইয়াজিদি মহিলা চোরাকারবারিদের সঙ্গে পালিয়ে আসতে সক্ষম হতেন। এখন সেই সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে ৩৯-এ। এতটাই নজরদারি বাড়িয়েছে আইএস। ক্রমশ মাটি হারাতে থাকা জঙ্গিরা এখন রোজগারের এই জঘন্য, বর্বর উপায় হাতছাড়া করতে চাইছে না কিছুতেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন