ভেঙে পড়া সেই বিমান। —ফাইল চিত্র।
আছড়ে পড়া বিমান, দাউদাউ করে জ্বলছে স্কুলের একটা অংশ। আর তারপর কালো হয়ে যাওয়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের আবহে সন্তান বা ভাই-বোনকে খুঁজে ফেরা।
সেই আবহে বোনকে ফিরে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে কিশোর দাদা। বলছে, ‘‘আমি তো আসবই তোকে নিতে।’’ আবার ছেলেকে জীবিত দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাবা। বলছেন, ‘‘রাস্তা দিয়ে দৌড়তে দৌড়তে এসেছি। ভেবেছিলাম, আর পাব না।’’ বলেই জড়িয়ে ধরছেন ছেলেকে। ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ার পর সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এমন অনেক দৃশ্যের ভিডিয়ো। শিশুহারানো পরিবারের হাহাকারের পাশাপাশি রয়েছে ফিরে পাওয়ার কান্নাও।
এই ঘটনায় মৃত-আহতদের অধিকাংশই বালক-বালিকা। আগুনে পুড়ে যাওয়া পড়ুয়াদের চিকিৎসা করতে গিয়ে কান্না চাপতে পারছেন না চিকিৎসকেরাও। এক চিকিৎসক বললেন, ‘‘৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে অনেক বাচ্চারই। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু দিয়ে পুলিশকে বলেছিলাম, গ্রিন করি়ডর করে বাচ্চাদের ঢাকাহাসপাতালে নিয়ে যান, যাতে ঠিকমতো চিকিৎসা হয়।’’
দিয়াবাড়ির তারারটেক মসজিদ এলাকায় একই পাড়ার আরিয়ান, বাপ্পি ও হুমায়ের সোমবার সকালে একসঙ্গে স্কুলে গিয়েছিল প্রতি দিনের মতো। বাড়ি ফিরেছে নিথর দেহ হয়ে। একই পরিবারের সদস্য তারা। বাপ্পি পড়ত তৃতীয় শ্রেণিতে। বাবা আবু শাহিন বলছিলেন, হুমায়ের তার ভাইপো আর ১০ বছরের আরিয়ান তার খুড়তুতো ভাই। জোহরের নমাজ শেষে বাপ্পিকে আনতে স্কুলে গিয়েছিলেন শাহিন। পথেই শুনতে পান বিকট শব্দ, দেখতে পান ধোঁয়া পাক খেয়ে উঠছে উপরের দিকে। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলে যে ক্লাসে পড়ে, তার আগের ক্লাসটায় বিমানডা ঢুকছে। দেখে বুঝজি যে ছেলে আর নাই।’’
দুর্ঘটনাস্থল থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল বাপ্পি এবং আরিয়ান। এর কিছুক্ষণ পরেই মারা যায় হুমায়ের। বাকি দুই বালক মারা যায় হাসপাতালে। দুর্ঘটনার সময়ে ক্লাসে না থাকায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছে আরিয়ানের সহপাঠী রাইয়ান আফনান। বলে, ‘‘আমিও স্কুলে ছিলাম। কিন্তু ওই সময় বাইরের লাইব্রেরিতে গেছিলাম। যখন মেন গেট পার হইছি, তখনই বিস্ফোরণের শব্দ।’’ ৯ বছরের কন্যা নুসরতকে হারিয়েছেন আবুল হোসেন। তাঁর হাহাকার, ‘‘সকালে মেয়েটাকে স্কুলে দিয়ে এলাম। ভাবিনি আর দেখতেপাব না।’’
জানা গিয়েছে, বিমান ভেঙে পড়ার সময়ে স্কুলের গেটে জড়ো হচ্ছিলেন অনেক অভিভাবক, সন্তানদের নিয়ে যাবেন বলে। তাঁদের একজন রুবিনা আখতার জানিয়েছেন, ছেলে রাইয়ান আখতার ছিল স্কুলের সিঁড়িতে। তখন বিমান ভেঙে পড়ে। তার শার্টে আগুন লাগে। সে কোনওক্রমে একতলায় নেমে ঘাসে গড়িয়ে পড়ে, শার্ট, গেঞ্জি ছিঁড়ে ফেলে, ফলে কিছু অংশ ঝলসেও গেলেও গভীর ভাবে পুড়ে যায়নি।
এই হাহাকার-বেঁচে ফেরা-উজ্জ্বল উদ্ধারের মধ্যে বড় হয়ে উঠছে ক্ষোভ। এক পুত্রহারা পিতার প্রশ্ন, ‘‘ এইডা কোনও দেশ হইল? কোনও নিরাপত্তা নাই। কেন লোকালয়ের উপর ট্রেনিং বিমান উড়বে, বলেন?’’
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে