Nepal Violence

রাজতন্ত্র উৎখাত করে ‘বিপ্লব’ ঘটান নেপালে! সেই মাওবাদী নেতা তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডও বিদ্রোহীদের নিশানায়

তিন বার নেপালের প্রধানমন্ত্রী হওয়া প্রচণ্ড বর্তমানে নেপালের বিরোধী দলনেতা। নেপালের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে বহু বার জোট এবং সরকার বদল করেছেন তিনি। কিন্তু তার পরেও নেপালে প্রচণ্ডের রাজনৈতিক গুরুত্ব কমেনি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:৩৫
Share:

নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল ওরফে প্রচণ্ড। —ফাইল চিত্র।

নেপালে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকার কথা স্বীকার করেন প্রত্যেকেই। সেই মাওবাদী নেতা পুষ্পকমল দহল ওরফে প্রচণ্ডের বাড়িতেও ভাঙচুর চালালেন ছাত্র-যুবরা। তিন বার নেপালের প্রধানমন্ত্রী হওয়া প্রচণ্ড বর্তমানে নেপালের বিরোধী দলনেতা। নেপালের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে বহু বার জোট এবং সরকার বদল করেছেন তিনি। কিন্তু তার পরেও নেপালে প্রচণ্ডের রাজনৈতিক গুরুত্ব কমেনি।

Advertisement

১৯৯৬ সালে নেপালের তৎকালীন রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (মাওবাদী) নেতা প্রচণ্ড। তাঁর নেতৃত্বেই সেই বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি নেপাল সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যুত্থান শুরু করেন মাওবাদী যোদ্ধারা। সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অপশাসনের অভিযোগ তুলে সরকারি বাসভবন ভাঙচুর করা হয়। নিশানা করা হয় সামরিক বাহিনীকেও। আত্মগোপনে থেকেই এই অভিযান পরিচালনা করেছিলেন প্রচণ্ড।

দমনপীড়়নের মাধ্যমেই এই অভ্যুত্থান থামাতে চেয়েছিল নেপালি রাজতন্ত্রের ছত্রছায়ায় থাকা সে দেশের সরকার। এর ফলে ১০ বছরে মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ১৭ হাজার জনের। ঘরছাড়া হতে হয়েছিল ২ লক্ষ মানুষকে। সেই সময় নেপাল সরকারের বিরুদ্ধে বিচার বহির্ভূত হত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। সরকারি দমনপীড়ন সত্ত্বেও গ্রামীণ নেপালের বড় অংশের দখল নেন মাওবাদী যোদ্ধারা। সেই সমস্ত জায়গায় সমান্তরাল প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করেন তাঁরা। শেষমেশ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০০৬ সালে মাওবাদীদের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে বাধ্য হয় সরকার।

Advertisement

ওই শান্তিচুক্তিতেই নেপালে রাজতন্ত্রের পরিবর্তে সংসদীয় গণতন্ত্র তৈরির কথা বলা হয়। ২০০৮ সালের ২৮ মে নেপালের সংবিধানে রাজতন্ত্রের পরিবর্তে গণতন্ত্র শব্দটি যোগ করা হয়। জুন মাসে কাঠমান্ডুর রাজপ্রাসাদ ছেড়ে চলে যান নেপালের শেষ রাজা জ্ঞানেন্দ্র। ২০০৮ সালের অগস্ট মাসে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হন প্রচণ্ড। তবে পুরো মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি তিনি। ২০২৪ সালে মার্চে নেপালের সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউএমএল) নেতা ওলির সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গড়েছিলেন প্রচণ্ড। ওই বছরের ৩ জুলাই জোট ভেঙে নেপালি কংগ্রেসের হাত ধরে ওলির দল। ১২ জুলাই আস্থাভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন প্রচণ্ড।

প্রচণ্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আবার আদর্শচ্যুত হওয়ারও অভিযোগ তুলেছেন একদা তাঁর সঙ্গী মাওবাদী নেতারা। কিন্তু যে ভাবে সরকার এবং রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে তিনি জনযুদ্ধ চালিয়েছিলেন, তা নেপালে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পথ প্রশস্ত করেছে বলে মনে করেন অনেকেই। দীর্ঘ জনযুদ্ধের পরেও হয়তো কাঙ্খিত বিপ্লব আনতে পারেননি প্রচণ্ড। কিন্তু কার্যত তাঁর আন্দোলনেই মাথা নুইয়েছিল নেপালের রাজতন্ত্র। অন্য দলগুলির সমর্থন নিয়ে, অস্ত্র ছেড়ে নেপালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হয় মাওবাদীরাও। একাধিক রাজনৈতিক উলটপুরাণের পর প্রচণ্ড এখন নেপালের বিরোধী দলনেতা। ছাত্র-যুবর ক্ষোভ থেকেও রেহাই পায়নি তাঁর বাড়িও। মঙ্গলবার নেপালের ললিতপুর জেলার খুমালতারে প্রচণ্ডর বাসভবনে চড়াও হন বিক্ষোভকারীরা। ভাঙচুর করা হয় তাঁর বাড়ি। তার পর থেকে প্রচণ্ড কোথায় রয়েছেন, নেপালেই রয়েছেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement