শরীর বিগড়ে গিয়েছে। তা ঢাকতেই কি নিয়মিত চুলে রং? জীবজন্তু পোষেন, কিন্তু তাদের দেখভাল করেন না। লোকটা আসলে হ্যাকার। আর একটা সময়ে রাশিয়ার হয়ে কাজ করতেন।
এই ধরনের কথাবার্তা যাঁর সম্পর্কে বলা হয়, তিনি জুলিয়ান আসাঞ্জ। কিন্তু তাঁর সংস্থা উইকিলিকসের দাবি, এ সব ‘ফালতু কথা’। এই ধরনের ‘অপপ্রচার’ রুখতে তাই মাঠে নেমেছে লক্ষ লক্ষ মার্কিন কূটনৈতিক নথি ফাঁস করে দেওয়া উইকিলিকস। কাল বিশ্বের প্রথম সারির বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম সংস্থাটি একটি পাঁচ হাজার শব্দের ই-মেল পাঠিয়েছে তারা। যার সাবজেক্টে লেখা— ‘গোপন আইনি বার্তা বিনিময়। প্রকাশের জন্য নয়।’ তবে ব্রিটেনের একটি সংবাদমাধ্যমকে তা ছাপার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। ই-মেলে আলাদা করে ১৪০টি বিষয় দেগে দেওয়া হয়েছে, যা উইকিলিকসের মতে ‘মিথ্যে এবং সম্মানহানিকর’। যেমন আসাঞ্জের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে বিরূপ মন্তব্য, তাঁর সাজপোশাক এবং পোষ্যদের প্রতি তাঁর আচরণ। এই ধরনের ‘ফালতু কথা’ আর লেখা যাবে না বলে সংবাদমাধ্যমগুলিকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছে উইকিলিকস।
২০১০-এর একেবারে গোড়ায় মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি গোপন ভিডিয়ো ফাঁস করে প্রথম বার শিরোনামে এসেছিল উইকিলিকস। সেটা ছিল ২০০৭-এ বাগদাদে মার্কিন বোমারু-কপ্টারের হামলার ভিডিয়ো। তাতে দুই সাংবাদিক-সহ প্রাণ যায় ডজনখানেকের। সেই বছরেই আরও প্রায় ৫ লক্ষ গোপন মার্কিন নথি ফাঁস করে দেয় সংস্থাটি। সঙ্গে, আফগানিস্তান আর ইরাকে মার্কিন সেনা জোট কী ভাবে বিতর্কিত হামলা চালাচ্ছে, তার সবিস্তার রিপোর্টও।
ব্যস, এর পরেই বিশ্বের একাংশের কাছে রাতারাতি ‘নায়ক’ হয়ে যান আসাঞ্জ। আর ওয়াশিংটনের চোখের বালি। জল্পনা ছড়াতে থাকে, উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা নিশ্চিত আমেরিকা, রাশিয়া কিংবা অন্য কোনও দেশের গুপ্তচর সংস্থার সঙ্গে জড়িত। না হলে এত তথ্য উনি পাচ্ছেন কী ভাবে? আসাঞ্জ-জুজু দেখেই ধরপাকড় শুরু করে দেয় প্রশাসন। এখনও বিচারের অপেক্ষায় প্রাক্তন মার্কিন সেনার বেশ কয়েক জন প্রাক্তন আধিকারিক।
এরই মধ্যে হঠাৎ আসাঞ্জের বিরুদ্ধে সুইডেন থেকে উঠে আসে যৌন হেনস্থার মামলা। সাঁড়াশি চাপে বাধ্য হয়েই ২০১২-য় ব্রিটেনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন আসাঞ্জ। ছ’বছর ধরে সেখানেই স্বেচ্ছানির্বাসিত এই ‘হুইসলব্লোয়ার’। সুইডেন বার বার তাঁর প্রত্যর্পণ চাইলেও, পাল্টা মামলা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর আইনজীবীরা। আসাঞ্জের আশঙ্কা, সুইডেন আদতে তাঁকে আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়ারই ছক কষছে।
কেমন আছেন আসাঞ্জ? তাঁর আইনজীবীদের দাবি, গত বছরের গোড়াতেই ইন্টারনেটের সংযোগ কেড়ে নিয়ে তাঁর ডানা ছেঁটে ফেলা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে সংস্থার সম্পাদক পদ থেকেও ইস্তফাও দিয়েছেন আসাঞ্জ। তবু নানাবিধ অপপ্রচারে এখনও তাঁকে নিশানা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এ বার তাই সংবাদমাধ্যমকে পাঠানো ইমেলে সংস্থাটি লিখেছে, ‘‘উইকিলিকস কিংবা জুলিয়ান আসাঞ্জকে নিয়ে কিছু লেখার আগে, সাংবাদিকদের কাছে যথাযথ তথ্য যাচাইয়ের আর্জি রাখছি। আর মেলে উল্লিখিত ১৪০টি বিষয়ে তো আমাদের স্পষ্টই আপত্তি আছে।’’