taliban

Taliban: তালিবান-শাসনের বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপনেও ব্রাত্য মেয়েরা

আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ফেরার বর্ষপূর্তির দিনে উৎসবে মাতল তালিবান। সঙ্গে থাকা ছোট লাউড স্পিকারে বাজল ধর্মীয় গান।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কাবুল শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২২ ০৮:৪৫
Share:

আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ফেরার বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে তালিবান নেতারা ছবি রয়টার্স।

কারও হাতে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র, কারও হাতে সাদা-কালো পতাকা। কেউ আবার আমেরিকান বাহিনীর ছেড়ে যাওয়া পোশাক চড়িয়ে দিনের বেলাতেও চোখে নাইট ভিশন চশমা লাগিয়ে নিয়েছেন। পিক আপ ভ্যানে চড়ে গত কাল এ ভাবেই কাবুলের রাস্তা চষে বেড়াল তালিবদের বাহিনী। আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ফেরার বর্ষপূর্তির দিনে উৎসবে মাতল তালিবান। সঙ্গে থাকা ছোট লাউড স্পিকারে বাজল ধর্মীয় গান। কেউ কেউ ঐতিহ্যবাহী আফগান আট্টান নাচ নাচলেন। তবে আফগান মহিলাদের দেখা গেল না সেই উদ্‌যাপনে শামিল হতে। ছুটির দিনে অধিকাংশ সাধারণ মানুষও নিজেদের ঘর-বন্দি করে রাখলেন। তালিবানের উৎসবে যোগ দেননি তাঁদের একটা বড় অংশও।

Advertisement

দেশের মহিলারা এই উৎসবে অংশ নিলেন না কেন? এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল তালিব বাহিনীর কাছে। যার জবাবে এক জন বললেন, ‘‘ওঁদের নিজেদের অনেক কাজ রয়েছে।’’ আর এক জনের উত্তর, ‘‘শরিয়তি আইনে এ সব চলে না।’’ তৃতীয় জন বললেন, ‘‘আগামী বছর দেশের মেয়েদেরও এই উৎসবে শামিল হতে দেখতে পাবেন।’’

এক দিকে যখন দেশের নানা প্রান্তে নিজেদের শাসনের বর্ষপূর্তির উৎসব পালনে ব্যস্ত তালিবান, কাবুলের এক গোপন জায়গায় সেই সময়েই একত্র হয়েছিলেন ‘রেভলিউশনারি অ্যাসোসিয়েশন অব দ্য উইমেন অব আফগানিস্তান’ (রাওয়া)-এর সদস্যেরা। আরও এক বার তালিবানের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সংকল্প নিলেন তাঁরা। দেশের শাসনভার তালিবানের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য আমেরিকান প্রশাসনের যথেচ্ছ নিন্দাও করলেন ওই আফগান মহিলারা। ক্ষোভের সঙ্গে জানালেন, আমেরিকার সরকারই অর্থ দিয়ে সাহায্য করে তালিবানকে এ দেশে ক্ষমতায় ফিরিয়েছে।

Advertisement

গত কাল বর্ষপূর্তি উৎসব পালনের জন্য দিনভর বিভিন্ন জায়গায় নানা অনুষ্ঠানের করেছিল তালিবান সরকার। কয়েক জন মন্ত্রী সেই সব অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে এলেও দেখা মেলেনি সিরাজুদ্দিন হক্কানির মতো শীর্ষ স্থানীয় তালিবান নেতার। কাবুলের গ্রিন জ়োনে একেবারে আমেরিকান দূতাবাসের নাকের ডগায় আয়োজন করা হয়েছিল একটি সভার। সেখানে কমবয়সি কিছু তালিবান নেতা ভাষণ দিতে গিয়ে সদ্য প্রয়াত আল কায়দা নেতা আয়মান আল জ়াওয়াহিরির উপরে হামলা নিয়ে আমেরিকান প্রশাসনের নিন্দা করলেন। সরকারি সংবাদমাধ্যমের এক অডিটোরিয়ামে দুপুর থেকে শুরু হয় নানা অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ভিআইপি-দের গাড়ির ভিড়ে এক সময়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল রাজধানী কাবুলের একাংশ। ছোট ছেলেদের গলায় শোনা গেল তালিবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের প্রশংসাসূচক গান। তবে সব নেতা অবশ্য সুর চড়িয়ে ভাষণ দেননি কাল।

আগের দফার শাসনের সময়ে নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের যে নেতা তালিবানি অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই আহমেদ শাহ মাসুদের নামাঙ্কিত মাসুদ সার্কল-এও ভিড় জমান অনেকে। আমেরিকায় ৯/১১-র হামলার ঠিক দু’দিন আগে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় মাসুদের। তাঁর মৃত্যুর পরে আমেরিকার সমর্থিত তৎকালীন সরকার এই এলাকার নাম রেখেছিল মাসুদের নামে। সেখানকার কংক্রিটের দেওয়ালে এখন আঁকা ছবি, স্লোগান। লেখা, ‘স্বাধীনতা বসন্তের মতো সুন্দর’। কাবুলের দক্ষিণে লাঘমান প্রদেশ থেকে উৎসবে শামিল হতে এসেছিলেন আবদুল কাহার আগা জান। বললেন, ‘‘আমেরিকাকে হারিয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তাই উৎসব করতে এসেছি।’’ মাসুদ সার্কলে দাঁড়িয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ওই কর্মী আরও বললেন, ‘‘এখন আমরা ক্ষমতায়। এই সব এলাকাই আমাদের। আমরা মাসুদের পরিবার বা অন্য মুজাহিদিনদেরও বলতে চাই যে আসুন একত্রে শান্তিতে এ দেশে বাস করি।’’

তবে সরকার বিরোধীদের জন্য শান্তির বাণী শোনালেন না প্রয়াত মোল্লা ওমরের পুত্র মোল্লা ইয়াকুব। এখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্বে রয়েছেন ইয়াকুব। বললেন, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে যারা চক্রান্ত করছে, তাদের শাস্তি পেতেই হবে। ওদের পরিকল্পনা সফল হবে না।’’ তবে সুর নরম করে অন্যান্য দেশগুলির প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও দেশের সঙ্গে আমরা ঝামেলায় জড়াতে চাই না। আশা করি সব দেশকে এটা বোঝাতে পেরেছি যে আমাদের দেশকে অন্য কারও বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে দেব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন