মৃত্যুতে যন্ত্রণামুক্তি ‘সৎপাত্র’ সুদানের

বয়স হয়েছিল ৪৫। সারা দুনিয়ায় সুদান ছিল ‘নর্দার্ন হোয়াইট রাইনো’ প্রজাতির একমাত্র পুরুষ গন্ডার

Advertisement

সংবাদ সংস্থা 

নাইরোবি শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৮ ০৩:০৬
Share:

তখনও বেঁচে। কেনিয়ার ওল পেজেতা সংরক্ষণ কেন্দ্রে ‘সুদান’। ছবি: এপি।

প্রায় এক বছর আগেই ডেটিং অ্যাপ টিন্ডারে তার নামে প্রোফাইল তৈরি হয়েছিল। অনুরাগীরা বলেছিলেন, দুনিয়ার ‘মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলর’ সে। তার জন্য মোতায়েন থাকত বন্দুকধারী প্রহরী। গত কাল মারা গেল সেই ‘সৎপাত্র’ সুদান। সংক্রমণ-জনিত যন্ত্রণা থেকে বাঁচাতে তাকে নিষ্কৃতি-মৃত্যু দিতে বাধ্য হলেন কেনিয়ার ওল পেজেতা বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ কেন্দ্রের চিকিৎসকেরা।

Advertisement

বয়স হয়েছিল ৪৫। সারা দুনিয়ায় সুদান ছিল ‘নর্দার্ন হোয়াইট রাইনো’ প্রজাতির একমাত্র পুরুষ গন্ডার। তার মৃত্যুর পরে ওই প্রজাতির দু’টি মহিলা গন্ডারই শুধু অবশিষ্ট রইল। তারা সুদানেরই দুই মেয়ে— নাজিন (২৮) এবং ফাতু (১৭)।

ওল পেজেতা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বয়সের ভারে ঝুঁকে পড়েছিল সুদান। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র যন্ত্রণায় দিন কেটেছে তার। পিছনের ডান পায়ে গভীর ক্ষত হয়েছিল। তা থেকেই সংক্রমণ ছড়ায়। গত ২৪ ঘণ্টায় অবস্থার আরও অবনতি হতে শুরু করে। ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারছিল না সে। এত যন্ত্রণার মধ্যে দেখেই চিকিৎসকদের একটি দল তাকে নিষ্কৃতি-মৃত্যু দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

Advertisement

সুদানের মৃত্যুর পরে প্রাকৃতিক উপায়ে এই প্রজাতির গন্ডারের প্রজননের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল। তবে ওল পেজেতা জানাচ্ছে, সুদানের ডিএনএ সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। পরবর্তী কালে অ্যাডভান্সড সেলুলার প্রযুক্তি এবং ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ)-এর মাধ্যমে তা কাজে লাগিয়ে কৃত্রিম প্রজননের চেষ্টা হবে। যা কিঞ্চিৎ আশার আলো দেখাচ্ছে।

দক্ষিণ সুদানের শাম্বের জঙ্গলে ১৯৭৩ সালে জন্মেছিল সুদান। সেই সময়ে ওই প্রজাতির অন্তত সাতশোটি গন্ডার ছিল। চোরাশিকারিদের দাপটে তারা বিলুপ্ত হতে শুরু করে। তখন চেক প্রজাতন্ত্রের একটি চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সুদানকে। ২০০৯ সালে তাকে আফ্রিকায় ফেরানো হয়। সুদানের সঙ্গেই ওল পেজেতায় জায়গা হয় নাজিন, ফাতু এবং ওই প্রজাতিরই একটি পুরুষ গন্ডারের। কর্তৃপক্ষ মনে করেছিলেন, নয়া বাসস্থান ‘নর্দার্ন হোয়াইট রাইনো’ প্রজাতির গন্ডারের প্রজননের উপযুক্ত হবে। কিন্তু মেয়ে গন্ডারগুলি আর গর্ভবতী হয়নি। ২০১৪ সালের অক্টোবরে অন্য পুরুষ গন্ডারটির মৃত্যু হয়। বাকি থেকে যায় সুদান ও তার দুই মেয়ে। এর পরেই সুদানের জন্য ২০১৭ সালে টিন্ডারে প্রোফাইল বানানো হয়। আইভিএফ পদ্ধতিতে ডিম্বাণুর কৃত্রিম নিষেক কখনও গন্ডারের ক্ষেত্রে করা হয়নি। তা নিয়ে গবেষণা চলছে আমেরিকা, জার্মানি, জাপানে। যার খরচ পড়বে প্রায় ৯০ লক্ষ ডলার। তার টাকা তুলতেই টিন্ডারে সুদানের প্রোফাইল বানানো হয়েছিল।

‘মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলর’-এর মৃত্যুতে শোকের ছায়া ওল পেজেতায়। টুইটারে শোক প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন