ইউনেস আবুইয়াকুব
অবশেষে সাফল্য পেল স্পেনের পুলিশ। চার দিন আগে বার্সেলোনার জনপ্রিয় রাস্তা ‘লা রামব্লা’-এ পথচারীদের পিষে মেরেছিল একটি ঘাতক ভ্যান। ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ ছিল ভ্যান চালক, ২২ বছরের জঙ্গি ইউনেস আবুইয়াকুব। আজ তল্লাশি অভিযানের সময় তাকে গুলি করে মেরে ফেলেছে পুলিশ। নিহত ব্যক্তি ইউনেস কি না, তা প্রথমে স্পষ্ট করে বলেনি পুলিশ। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমই প্রথমে বলতে শুরু করে, নিহত ওই সন্দেহভাজনই ইউনেস। ঘণ্টাখানেক পরে সরকারি ভাবে অবশ্য পুলিশ জানিয়ে দেয়, ইউনেসকেই মেরেছে তারা।
বার্সেলোনার পশ্চিমে সাবিরাৎস এলাকার একটি পেট্রোল পাম্পে ইউনেসের মতো দেখতে এক ব্যক্তির খোঁজ মিলেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছিলেন কেউ। তার পরই ওই এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ। সংঘর্ষের সময় ওই জঙ্গি বিস্ফোরকে মোড়া বেল্ট পরেছিল বলেও জানা গিয়েছে। পরে অবশ্য বম্ব স্কোয়াডের সদস্যরা এসে জানান, ওই বেল্টটি ভুয়ো।
বার্সেলোনা কাণ্ডের ঠিক পরের দিন ভোরে ক্যামব্রিলস শহরে একই কায়দায় পথচারী আর পুলিশকে পিষে মারার চেষ্টা করে আরও একটি গাড়ি। মারা যান এক মহিলা। ওই হামলায় জড়িত পাঁচ জঙ্গিকে সঙ্গে সঙ্গেই গুলি করে মারে পুলিশ। কিন্তু ইউনেসকে ধরতে গত চার দিনে কার্যত হিমশিম খেয়েছে পুলিশ বাহিনী।
গত বৃহস্পতিবার হামলার পরে পায়ে হেঁটেই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়েছিল ইউনেস। হামলার নব্বই মিনিটের মাথায় সিসিটিভি ফুটেজে সেই প্রমাণ মেলে। কিন্তু তার পর থেকে কোনও হদিস মিলছিল না আদতে মরোক্কোর বাসিন্দা ওই যুবকের। যে ভ্যানে করে ইউনেস সে দিন হামলা চালিয়েছিল, সেটি ভাড়ার ছিল না। ভ্যানের আসল মালিককে ছুরি দিয়ে খুন করে পিছনের আসনে তাঁর দেহ বসিয়ে সে দিন ‘লা রামব্লা’-এ তাণ্ডব চালিয়েছিল সে। আজ পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ওই ভ্যান মালিকের নাম পাও পেরেজ। বয়স ৩৪। এই তথ্য হাতে আসার পরে হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ইউনেস একা নয়। গোটা ষড়যন্ত্রে অন্তত ১২ জন জড়িত ছিল। যাদের মধ্যে কিছু কিশোরও রয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীদের তালিকায় রয়েছে রিপোলের এক ইমামের নামও। বছর চল্লিশের ওই ইমামকে গত মঙ্গলবার অর্থাৎ হামলার দু’দিন আগে থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সে স্থানীয় যুবকদের কট্টর মৌলবাদের রাস্তায় হাঁটার পরামর্শ দিত বলে অভিযোগ। পুলিশ জানিয়েছে, বার্সেলোনা কাণ্ডের আগের রাতে আলসানারের একটি বাড়িতে বোমা বাঁধতে গিয়ে মৃত্যু হয় ওই ইমামের। এর আগে জেলও খেটেছে সে। পুলিশের ধারণা, সেখানেই সম্ভবত মাদ্রিদ বিস্ফোরণে সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় ওই ইমামের। তদন্তকারীরা নিশ্চিত, গোটা স্পেন জুড়ে অন্তত তিনটি হামলার ছক ছিল ইউনেসদের। পরিকল্পনা ছিল, ঘরে তৈরি বোমার দিয়েই হামলাগুলি চালানো হবে। কিন্তু বোমা তৈরি করতে গিয়ে ইমামের মৃত্যুর পরেই সম্ভবত হামলার ছক পাল্টাতে বাধ্য হয় তারা।