আইএস ভিডিওয় পণবন্দি সাংবাদিকের মুণ্ডচ্ছেদ

জল্পনা শেষ। বিফলে গেল ছেলের হয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে মায়ের প্রাণভিক্ষার আর্জিও। শেষমেশ আশঙ্কাই সত্যি হল। জঙ্গি ডেরাতেই নিহত হলেন পণবন্দি জাপানি সাংবাদিক কেনজি গোতো। তাঁর মুণ্ডচ্ছেদের ভিডিও প্রকাশ করে এমনটাই দাবি ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিগোষ্ঠীর। একই সঙ্গে ভিডিওতে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে জাপানকে। প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে প্রথম থেকেই জঙ্গিদের সামনে মাথা নোয়াতে নারাজ। আজ ফের পাল্টা হুমকি দেন তিনি। জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় সরব আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়া-সহ বিশ্বের একটা বড় অংশ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

টোকিও শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২৫
Share:

আইএসের সেই ভিডিও-ফুটেজ। ছবি: রয়টার্স

জল্পনা শেষ। বিফলে গেল ছেলের হয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে মায়ের প্রাণভিক্ষার আর্জিও। শেষমেশ আশঙ্কাই সত্যি হল। জঙ্গি ডেরাতেই নিহত হলেন পণবন্দি জাপানি সাংবাদিক কেনজি গোতো। তাঁর মুণ্ডচ্ছেদের ভিডিও প্রকাশ করে এমনটাই দাবি ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিগোষ্ঠীর। একই সঙ্গে ভিডিওতে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে জাপানকে। প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে প্রথম থেকেই জঙ্গিদের সামনে মাথা নোয়াতে নারাজ। আজ ফের পাল্টা হুমকি দেন তিনি। জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় সরব আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়া-সহ বিশ্বের একটা বড় অংশ।

Advertisement

কেনজি গোতোই প্রথম নন। সপ্তাহ খানেক আগে এ ভাবেই মুণ্ডচ্ছেদের ভিডিও প্রকাশ করা হয় আর এক জাপানি নাগরিক হারুনা ইউকাওয়ার। গোতোর ভিডিও প্রকাশে তাই নড়ে বসেছে টোকিও। ক্ষুব্ধ আবে আজ জানান, আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আন্তর্জাতিক বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে জাপান। ইরাক ও সিরিয়ায় ন্যাটো বাহিনী ও যুদ্ধবিধ্বস্তদের জন্য সম্প্রতি ২০ কোটি ডলার অর্থসাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। তার প্রেক্ষিতেই গোতোকে পণবন্দি করা হয় বলে অনুমান।

এখনও পর্যন্ত ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব না হলেও, জাপানি কর্মকর্তারা ভিডিওটি আসল বলেই বিশ্বাস করছেন। এর আগে মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফোলি ও স্টিভেন সটলফকে যে ভাবে মারা হয়েছিল, গোতোকেও মারা হয়েছে সে ভাবেই। মনে করা হচ্ছে, এ বারও ভিডিওতে জন্মসূত্রে ব্রিটিশ ‘জেহাদি জন’-কেই ছুরি হাতে দেখা গিয়েছে। গোতোর পরনেও ফোলি-সটলফের মতোই সেই এক কমলা জোব্বা, দু’হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। তবে অন্য বারের মতো মরুভূমিতে নয়, পাহাড়-ঘেরা কোনও এলাকাতেই গোতোর মুণ্ডচ্ছেদ করা হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান।

Advertisement

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহত কেনজি গোতোর মা জুনকো ইশিদো। ছবি: এএফপি

বছর সাতচল্লিশের সাংবাদিক গোতো গত বছর অক্টোবরে সিরিয়া গিয়েছিলেন। তখনই তাঁকে পণবন্দি করে জঙ্গিরা। দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে গত সপ্তাহেই ছেলের প্রাণভিক্ষার আর্জি জানান মা জুনকো ইশিদো। জঙ্গিদের সঙ্গে দরকষাকষিতে জর্ডন এবং জাপান একজোট হওয়ায় তিনি আশা করেছিলেন, ছেলে ঠিক ফিরবেই। কিন্তু গত কালের ভিডিও দেখে শোকে হতবাক জুনকো। ধরা গলায় সংবাদমাধ্যমকে তিনি আজ বলেন, “আমার মুখে আর কোনও ভাষা নেই। আমার ছেলেটা তো অন্য এক জনকে ফেরাতেই জঙ্গিডেরায় পা রেখেছিল। ওর কী দোষ! তবু ওকে মরতেই হল। আশা করব, দেশের মানুষ গোতোর সাহস আর এই আত্মত্যাগ মনে রাখবে।” গোতোর ভাই বলেন, “ভেবেছিলাম, ভাইটা ফিরে এলে সরকারকে ধন্যবাদ জানাব। সেই সুযোগটাই তো পাওয়া গেল না।” শোকের আবহেও জঙ্গিদের প্রকাশিত ভিডিও ঘিরে উত্তাল গোটা দেশ। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। জঙ্গিদের কড়া বার্তা দেওয়ার কথা বলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট।

গোতোর পরিণতি জানা গেলেও, জর্ডনের বিমানচালক মুয়াথ আল-কাসিসবে আদৌ বেঁচে আছেন কিনা, খোঁজ নেই। সাম্প্রতিক ভিডিওতে তাঁর নাম পর্যন্ত উল্লেখ করেনি জঙ্গিরা। অথচ গত সপ্তাহের মাঝামাঝি অডিও-বার্তা প্রকাশ করে আইএস জানায়, ২০০৫ সালে জর্ডনের রাজধানী আম্মানে আত্মঘাতী হামলার মূল চক্রী তথা প্রাক্তন আল কায়দা নেত্রী সাজিদা-আল-রিশওয়াইয়ের বিনিময়ে দুই পণবন্দিকে ছাড়তে রাজি তারা। বন্দি বিনিময়ে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমাও বেঁধে দেয় জঙ্গিরা। তার পর প্রায় দু’দিন কোনও বার্তা আসেনি। ইতিমধ্যে গোতোর সাম্প্রতিক ভিডিও প্রকাশ পাওয়ায় উদ্বিগ্ন জর্ডন। কাসিসবে জীবিত কিনা প্রমাণ চেয়ে, দিন তিনেক আগেই আইএস-কে পাল্টা হুমকি দেয় জর্ডন। সাফ জানানো হয়, অপহৃতের কিছু হলে জর্ডনে বন্দি এক জন জঙ্গিকেও ছাড়া হবে না। আজ অবশ্য সুর নরম সে দেশের। এখনও তাঁরা বন্দি-বিনিময়ে রাজি বলে জানান এক সরকারি মুখপাত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন