আক্রান্ত করাচি বিমানবন্দর, রাতভর যুদ্ধে নিহত সাত

আক্রান্ত এ বার পাক বিমানবন্দর। রবিবার রাত ১১টা নাগাদ পাকিস্তানের বাণিজ্যিক রাজধানী করাচির জিন্না আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হামলা চালাল অন্তত ১০ জন সশস্ত্র জঙ্গি। তাদের গুলিবৃষ্টি এবং পরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষে অন্তত ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। নিহতদের মধ্যে দু’জন জঙ্গি এবং বাকিরা বিমানবন্দর নিরাপত্তা বাহিনী (এএসএফ)-এর জওয়ান। আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৭টি বিমান। গভীর রাত পর্যন্ত লাগাতার গুলি ও বিস্ফোরণের আওয়াজে কেঁপে উঠেছে করাচি বিমানবন্দর। কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী এখনও ঘটনায় দায় স্বীকার করেনি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৪ ১৪:৩৭
Share:

বিমানবন্দরে পাক সেনা। ছবি: এপি।

আক্রান্ত এ বার পাক বিমানবন্দর।

Advertisement

রবিবার রাত ১১টা নাগাদ পাকিস্তানের বাণিজ্যিক রাজধানী করাচির জিন্না আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হামলা চালাল অন্তত ১০ জন সশস্ত্র জঙ্গি। তাদের গুলিবৃষ্টি এবং পরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষে অন্তত ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। নিহতদের মধ্যে দু’জন জঙ্গি এবং বাকিরা বিমানবন্দর নিরাপত্তা বাহিনী (এএসএফ)-এর জওয়ান। আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৭টি বিমান। গভীর রাত পর্যন্ত লাগাতার গুলি ও বিস্ফোরণের আওয়াজে কেঁপে উঠেছে করাচি বিমানবন্দর। কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী এখনও ঘটনায় দায় স্বীকার করেনি।

এই ঘটনা ভারত-পাক শান্তি প্রক্রিয়াকে বানচাল করার চেষ্টা কি না, তাই নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। অতীতেও দেখা গিয়েছে, লাহৌর বাসযাত্রার পর-পরই ঘটেছিল কার্গিল যুদ্ধ। এ বার নরেন্দ্র মোদীর শপথে এসেছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। সৌহার্দ্যের আবহেই হয়েছে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। তার আগেই অবশ্য হামলা হয়েছে হেরাটের ভারতীয় কনসুলেটে। কূটনীতিকদের একাংশের মতে, আইএসআই বা মোল্লাতন্ত্রের মতো পাকিস্তানের যে অংশটি ভারত-পাক শান্তি আলোচনার বিপক্ষে, এই ধরনের হামলায় ভূমিকা থাকে তাদেরই। অতএব আজকের হামলার পিছনেও তারাই রয়েছে কি না, সেটা নিয়েই এখনও প্রশ্ন তুলছেন কূটনীতিকরা।

Advertisement

করাচি বিমানবন্দরের রবিবার রাতে কী ঘটেছে?

পুলিশ সূত্রের খবর, এএসএফের ইউনিফর্ম পরে বিমানবন্দরে ঢোকে জঙ্গিরা। সঙ্গে ছিল ভুয়ো পরিচয়পত্রও। বিমানবন্দরের পুরনো টার্মিনালের ‘ফকার গেট’ দিয়ে কার্যত বিনা বাধাতেই ঢুকে পড়ে তারা। রানওয়ে ও হ্যাঙ্গারে যাওয়ার জন্য ওই গেটটি ব্যবহার করেন প্রধানত ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্মীরা। পরের পর গ্রেনেড ছুড়তে ছুড়তে জঙ্গিরা পৌঁছয় ইস্পাহানি হ্যাঙ্গার এবং কার্গো টার্মিনালে। সেই সঙ্গে চলে এলোপাথাড়ি গুলিবৃষ্টি।

নিমেষে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় বিমান ওঠানামা। দেশের সমস্ত বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি হয়। বিমানবন্দরমুখী সব ক’টি রাস্তা সিল করে দেওয়া হয়। পাক রেঞ্জার বাহিনীর ডিজি-র সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। দ্রুত পৌঁছয় সেনা ও জঙ্গি দমনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষ বাহিনী। পরিস্থিতি যে গুরুতর তা বোঝা যায় অচিরেই, যখন প্রথম দফায় আসা বাহিনীর একাংশকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে আসার জন্য বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়।

গোলাগুলি থেকেই গভীর রাতে পুরনো টার্মিনালের একটি বাড়িতে বড় ধরনের আগুন লেগে যায়। সম্ভবত সেটি অয়েল টার্মিনাল। তার খুব কাছেই পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের সদর দফতর। পাক সংবাদমাধ্যম সূত্রে পাওয়া ছবিতে দেখা যায়, রানওয়েতে দাঁড়িয়ে থাকা বিমানের সারির খুব কাছেই দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। জঙ্গিরা কেন দাঁড়িয়ে থাকা বিমানগুলির উপরে চড়াও হল, তা-ও বোঝার চেষ্টা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আবার অনেকের সন্দেহ, বিমানবন্দরের দখল নেওয়ার পাশাপাশি ৯/১১-র কায়দায় কয়েকটি বিমান ছিনতাই করাও উদ্দেশ্য ছিল জঙ্গিদের। অনেকে আবার মিল পাচ্ছেন ২৬/১১-র সঙ্গেও। সেখানেও হানাদার জঙ্গির সংখ্যা ছিল ১০!

আজকের ঘটনা মনে পড়াচ্ছে ২০১১-র মে মাসে মেহরান-এ পাক নৌবাহিনীর বিমানঘাঁটিতে তালিবান হানাকে। সে দিনের ওই হামলায় মারা গিয়েছিলেন অন্তত ১৮ জন। সে বারও জখম হয়েছিল বেশ কয়েকটি বিমান।

শেষ পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে, বিমানবন্দরে উপস্থিত যাত্রীদের নিরাপদে বাইরে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। বিমানবন্দর লাগোয়া সব ক’টি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে আরও বাহিনী পাঠানো হচ্ছে। রাতভর চলছে যুদ্ধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন