বাবাকে হারিয়ে। কাঠমাণ্ডুর এক গুম্ফায় আং কাজি শেরপার মেয়ে। ছবি: এএফপি
দুর্ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে তিন দিন। কিন্তু খুম্বু আইসফলে আটকে থাকা অভিযাত্রীরা ক্যাম্প-১ ছেড়ে এক পা-ও এগোতে পারেননি। শুধু দুর্যোগ নয়, তাঁদের অভিযানে প্রশ্নচিহ্ন জুড়ে দিয়েছে শেরপা সংগঠনগুলির বিক্ষোভও। পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে কারও কারও আশঙ্কা, এ বছর এভারেস্ট অভিযানই না বাতিল হয়ে যায়!
শেরপা সংগঠনের দাবি, এখনও বরফের ফাটলে (ক্রিভাস) চাপা রয়েছে তিন শেরপার দেহ। নেপাল প্রশাসন জানিয়েছে, তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। শনিবারের পরে আর উদ্ধার কাজ সম্ভব হয়নি। রবিবার দুপুরের পর থেকে আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় কাজ বন্ধ করে দিতে হয়। তাতে কান দিতে নারাজ শেরপাদের সংগঠন। তাদের বক্তব্য, অবিলম্বে ওই দেহগুলি উদ্ধার করতে হবে। এ ছাড়াও আরও ১২ দফা দাবি পেশ করেছেন তাঁরা। যে দাবিগুলি মানা না হলে এ বছর আর কোনও শেরপা অভিযানে অংশ নেবেন না বলে হুমকি দিয়েছে সংগঠন। তাতেই মাথায় হাত অভিযাত্রীদের।
অভিযানের সময়ে আকছার বিপদের সম্মুখীন হন শেরপারা। সংগঠনের দাবি, তাঁরা যে ভাবে প্রাণ হাতে নিয়ে কাজ করেন, তার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় না। সরকারের কাছে নিজেদের দাবি জানান তাঁরা। শেরপাদের ১২ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, মৃতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিমার আওতায় আনতে হবে শেরপাদের। বরফের ফাটলে আটকে থাকা দেহ তিনটি অবিলম্বে উদ্ধার করতে হবে এবং এ বছরকে কালো বছর হিসাবে চিহ্নিত করতে হবে।
শুক্রবার ভোরে খুম্বু আইসফল থেকে পরবর্তী ক্যাম্পের দিকে রাস্তা তৈরি করার সময় আচমকাই তুষারধস নামে। মৃত্যু হয় ১৩ শেরপার। আহত আরও পাঁচ শেরপা। ওই ধসের কবল থেকে বেঁচে ফিরেছেন, এমনই এক জন চেদ্দার শেরপা। বললেন, “ভয়ে ঘেমে তুষারের ভিতরে খুঁজছিলাম বন্ধুদের।” বেশ কয়েক জনকে উদ্ধারও করেছেন। অন্তত ৬০ জন শেরপা বরফের এক স্তূপ থেকে আর এক স্তূপে মই লাগিয়ে দড়ি ধরে পার হচ্ছিলেন। হঠাৎই গুরু গুরু শব্দ। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তুষার ধসে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সব। শনিবার ক্রিভাস থেকে এক শেরপার দেহ উদ্ধার করা হয়। এখনও তিন জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
নেপাল প্রশাসনের বক্তব্য, ওই এলাকায় দুপুরের পরেই তুষারপাত শুরু হয়। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। তাপমাত্রাও অনেক নীচে নেমে গিয়েছিল। ফলে আর উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব হয়নি। আপাতত সমাধান খুঁজতে শেরপা সংগঠনগুলির সঙ্গে রবিবার বৈঠকে বসেছে নেপাল প্রশাসন। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু নেপাল সরকারের সঙ্গে শেরপাদের এই টানাপড়েনে এ বছর কি এভারেস্ট অভিযানটাই বাতিল হয়ে যাবে রবিবার সকাল থেকে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে পর্বতারোহণ মহলে। অভিযাত্রীরা পরবর্তী ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য খুম্বুর নীচেই ক্যাম্প ১-এ এখনও অপেক্ষা করছেন। এই সপ্তাহের শেষেই তাঁদের এখান থেকে এগিয়ে যাওরার কথা ছিল। পশ্চিমবঙ্গ থেকে এভারেস্ট অভিযানে যাওয়া একটি দলের নেতা গৌতম ঘোষ খুম্বু আইসফল থেকে মোবাইল ফোনে জানান, “শেরপা না থাকলে আমাদের পক্ষে মাল বয়ে নিয়ে পর্বতারোহণ করা এক প্রকার অসম্ভব। ফলে আমরা এখন নেপাল প্রশাসনের মুখের দিকেই তাকিয়ে।” তিনি আরও বলেন, শেরপারা যদি রাজি না হন, তবে আমাদের অনেক আর্থিক ক্ষতিরও সম্মুখীন হতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গের হিমালয় নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের (ন্যাফ) তরফে অনিমেষ বসু রবিবার বলেন, “বেস ক্যাম্পে আমাদের রাজ্যের অনেকে রয়েছেন। এমনকী আমাদের সংগঠনেরও তিন জন রয়েছেন। এই অবস্থায় অত উচ্চতায় অনেক দিন ধরে বসে থাকা মুখের কথা নয়। রাজ্য সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, অবিলম্বে নেপাল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলুন।”