কে গুলি করল বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার অন্যতম উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানকে? হিংসায় উন্মত্ত বাংলাদেশে আতঙ্কের মধ্যেও আপাতত এই প্রশ্নেরই জবাব খুঁজছেন মানুষ।
মঙ্গলবার রাতে বিএনপি-র অবরোধ চলাকালীন প্রাক্তন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ গুলশনের দফতরে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান। তার পর ফিরে যাওয়ার সময়ে তাঁর গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। রিয়াজের কোমরে ও পায়ে চারটি গুলিও করা হয়। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
খালেদা অবরোধের ডাক দেওয়ার পর গত নয় দিন ধরেই চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে ঢাকায় গাড়ি পোড়াচ্ছে তাঁর দলের কর্মীরা। শুধু রাজধানীতেই এ পর্যন্ত ৫০টির বেশি গাড়ি তারা পুড়িয়েছে। আজ ভোরে বাসে ছোড়া পেট্রোল বোমায় এক শিশু-সহ পাঁচ যাত্রী পুড়ে মারা গিয়েছেন। মারাত্মক ভাবে দগ্ধ হয়েছেন আরও ১৮ জন। গোটা দেশে হামলায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২।
পোড়া গাড়ির সংখ্যা অন্তত ৩০০। হিংসার প্রকোপ যেমন তীব্র হয়েছে, তেমনই সরকারও ধরপাকড় তীব্র করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজও সাবধান করে জানিয়েছেন, দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা তিনি কঠোর হাতে মোকাবিলা করবেন। দেশবাসীকেও প্রতিরোধে নামার ডাক দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু রিয়াজ রহমানকে গুলি করল কারা? বিএনপি-র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি দাবি করেছেন, শাসক দলের দুর্বৃত্তরাই তাঁর গাড়ি জ্বালিয়ে রিয়াজকে হত্যার চেষ্টা করেছে। আওয়ামি লিগের কর্মীরাই সারা
দেশে গাড়ি পুড়িয়ে বিএনপি-র ওপর দোষ চাপাচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। যদিও এ দিন ভোরেই চট্টগ্রামে একটি চলন্ত গাড়িতে পেট্রোল বোমা ছোড়ার সময়ে গাড়ি চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন বিএনপি-র শরিক জামাতে ইসলামির এক কর্মী। তবে রিজভি তা মানতে নারাজ।
কিন্তু শাসক দল আওয়ামি লিগের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক নজর কাড়তে পরিকল্পনা মাফিক নিজেদের নেত্রীর উপদেষ্টার ওপর হামলা চালিয়েছে বিএনপি-ই। রিয়াজ বিদেশনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা। আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন-সহ নানা দেশের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখেন। সে জন্যই তাঁকে বাছা হয়েছে। আওয়ামি লিগের মুখপাত্র ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বলেছেন, “বেআইনি পথে ক্ষমতা দখলে বিএনপি-জামাতের নীলনকশারই একটি অংশ রিয়াজের ওপর হামলা।” আওয়ামি লিগ নেতৃত্বের দাবি, আন্তর্জাতিক গুরুত্ব পেতে এর আগে খালেদা জিয়ার দু’টি প্রচেষ্টা জালিয়াতি বলে প্রমাণ হয়েছে। মার্কিন প্রতিনিধি সভার বিদেশ বিষয়ক কমিটির নামে ভুয়ো বিবৃতি প্রকাশ করে তারা ধরা পড়ে গিয়েছে। আবার ভারতের শাসক দল বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ খালেদাকে ফোন করেছেন বলে প্রচার করেও তারা কোণঠাসা হয়েছে। কারণ অমিত বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি খালেদাকে ফোন করেননি। হানিফের অভিযোগ, তার পরে এ বার তাই রিয়াজের ওপরে সাজানো হামলা। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রিয়াজের ওপর হামলার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। আততায়ীরা ধরা পড়লেই সব রহস্যের সমাধান হয়ে যাবে।