‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’তে ফাঁসি দেখে সিরিয়ার শিশুরাও

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার ক্যালেন্ডারে পাল্টে গিয়েছে একটা দিনের নাম। পরিবর্তে এসেছে আতঙ্ক আর মৃত্যুর অনুষঙ্গ। প্রতি শুক্রবার সেখানে বিচারসভা বসায় জঙ্গিরা। আর তাতেই প্রার্থনার দিনেই এখন অশনি সঙ্কেত দেখে সিরিয়া। সপ্তাহান্তের প্রতিটি শুক্রবার অন্ধকার ডেকে আনে। তাই প্রতি সপ্তাহান্তই সেখানে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

দামাস্কাস ও বাগদাদ শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০৪
Share:

এ ভাবেই চলে গণহত্যা। ছবি: এপি।

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার ক্যালেন্ডারে পাল্টে গিয়েছে একটা দিনের নাম। পরিবর্তে এসেছে আতঙ্ক আর মৃত্যুর অনুষঙ্গ। প্রতি শুক্রবার সেখানে বিচারসভা বসায় জঙ্গিরা। আর তাতেই প্রার্থনার দিনেই এখন অশনি সঙ্কেত দেখে সিরিয়া। সপ্তাহান্তের প্রতিটি শুক্রবার অন্ধকার ডেকে আনে। তাই প্রতি সপ্তাহান্তই সেখানে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’।

Advertisement

রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রকাশ করা একটি রিপোর্টে জানা গিয়েছে, নিয়ম করে প্রতি শুক্রবার তৎপর হয় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসআইএস। সংখ্যালঘু এবং বিরোধী পক্ষের এক বা একাধিক নিরীহ মানুষের প্রকাশ্যে মুণ্ডচ্ছেদ, গণহত্যা, প্রকাশ্যে ফাঁসি, বেত্রাঘাত, অঙ্গচ্ছেদ সবই হয় শুক্রবার। মধ্য এবং উত্তর সিরিয়ায় আইএসআইএস অধ্যুষিত এলাকায় রীতিমতো ফতোয়া জারি করে ফাঁসি দেখার আমন্ত্রণ জানানো হয় আবালবৃদ্ধবণিতাকে। শিশুদেরও ফাঁসি দেখতে আসা বাধ্যতামূলক।

সিরিয়া নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের তদন্তকারী কমিশনের এক মুখপাত্র বলেন, “ওখানে মুণ্ডচ্ছেদ প্রায়শয়ই হয়। বিশেষত, রাকা এবং আলেপ্পো সংলগ্ন অঞ্চলে গণহত্যার পরে দেহগুলো দিন কয়েকের জন্য সর্বসমক্ষে ঝুলিয়ে রাখা হয়।” ৪৫ পাতার ওই রিপোর্ট বলছে, ধূমপান করা, মুখ না ঢেকে সঙ্গীকে রাস্তায় বেরোতে দেওয়া বা পুরুষসঙ্গীকে ছাড়া রাস্তা দিয়ে হাঁটার অপরাধে ১৪ বছরের কিশোর থেকে ৭৫ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত সব বয়সের মানুষকেই এ ভাবে সর্বসমক্ষে ফাঁসি দেয় জঙ্গিরা। সেই সঙ্গে দশ বছরের শিশুদের বন্দুক চালানো বা বোমা তৈরি, আত্মঘাতী হামলার প্রশিক্ষণও দেয় তারা।

Advertisement

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে জঙ্গিগোষ্ঠী এবং সরকারের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে তিন বছর আগে তদন্ত কমিশন গঠন করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। গত কাল প্রকাশিত রিপোটে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তোলা হয়েছে প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের বিরুদ্ধেও। সব মিলিয়ে তিন বছরে সিরিয়ায় দু’লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।

গত কাল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে জঙ্গিদের পোস্ট করা সেনা-হত্যার ছবিগুলিতে সেনাদের শনাক্ত করতে পেরেছে সিরিয়া প্রশাসন। মানবাধিকার পরিষদের তরফে জানানো হয়েছে, গত রবিবার জঙ্গি-সেনা সংঘর্ষের সময়ে তাবকা বিমানঘাঁটি থেকেই অপহরণ করা হয়েছিল তাদের।

ওয়াশিংটন সূত্রে খবর, আইএসআইএস-কে ঠেকাতে সিরিয়ায় অনতিবিলম্বে বিমান হামলা চালাতে পারে আমেরিকা। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যৌথ ভাবে সিরিয়া অভিযান শুরু করার পরিকল্পনাও রয়েছে। একটি মার্কিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথাবার্তাও বলতে শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। গত কালই নর্থ ক্যারোলাইনায় একটি প্রশাসনিক বৈঠকে মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফোলিকে হত্যার প্রসঙ্গ টেনে ওবামা নাশকতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশকে এগিয়ে আসার আর্জি জানান। গত কালই ওয়াশিংটনকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদ। তবে নাশকতা প্রসঙ্গে আজ আসাদের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অঁলাদও। বাসারকে সরাসরি আক্রমণ করে তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন না আসাদ। পশ্চিমী দেশগুলোকে সাহায্যও করছেন না। জিহাদিরা কার্যত ওঁর বন্ধুই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন