দুর্গম এলাকা এখনও অধরাই সেনার

ভূকম্পে মৃত বেড়ে ৩৪০, সাহায্যের আশ্বাস তালিবানের

ভূমিকম্পের জেরে এখনও বেসামাল পাকিস্তান-আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ অংশ। গত কাল দুপুরে কয়েক সেকেন্ডের কম্পনেই কার্যত ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে দু’দেশের পাহাড় ঘেঁষা বেশ কয়েকটি জনপদ। তিনশো ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ইসলামাবাদ ও কাবুল শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৫ ০২:৫১
Share:

প্রকৃতির কোপে হারিয়েছে ঠাঁই। ধ্বংসস্তূপেই শেষ সম্বলের খোঁজ।

ভূমিকম্পের জেরে এখনও বেসামাল পাকিস্তান-আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ অংশ। গত কাল দুপুরে কয়েক সেকেন্ডের কম্পনেই কার্যত ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে দু’দেশের পাহাড় ঘেঁষা বেশ কয়েকটি জনপদ। তিনশো ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে উদ্ধারকাজে নেমেছে পাক সেনা। তবে হিন্দুকুশের দুর্গম এবং বিচ্ছিন্ন এলাকার সব জনপদে এখনও পৌঁছতেই পারেনি উদ্ধারকারী দল। ফলে ক্ষয়ক্ষতির সার্বিক চেহারাটা এখনও সামনে আসেনি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, দেশের দুর্দিনে ভূকম্প-দুর্গতদের সব রকম ভাবে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়ে ইন্টারনেটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে তালিবান। জানিয়েছে, তাদের সংগঠনের নেতারাও সব রকম ভাবে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াবে।

Advertisement

আজ রাত পর্যন্ত সরকারি সূত্রে পাওয়া খবর অনুসারে, দু’দেশ মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ৩৪০। আজ পাকিস্তানের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা পর্ষদ জানিয়েছে, শুধু পাকিস্তানেই মারা গিয়েছেন ২৫০ জন। অপেক্ষাকৃত ভাবে মৃতের সংখ্যা কম আফগানিস্তানে। কাবুল প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আজ রাত পর্যন্ত সে দেশে ৭৬ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। আহত দেড় হাজারেরও বেশি। নিখোঁজ বহু।

পাক সংবাদ সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, পুলিশ এবং সেনার একাংশ জানাচ্ছে, একে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পৌঁছনো যাচ্ছে না, তার উপর বাদ সেধেছে লাগাতার বৃষ্টি। কুনার প্রদেশের পুলিশ প্রধান আব্দুল হাবিব সৈয়দ খিলের কথায়, ‘‘আমাদের কাছে যে খাবার বা ত্রাণের জিনিস রয়েছে তা যথেষ্ট নয়। এই কুনারেই ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত বহু। তার উপর চার দিন ধরে টানা বৃষ্টি। ভয়ঙ্কর ঠান্ডা। সময়মতো উদ্ধারকাজ না চললে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে।’’

Advertisement

গত কাল দুপুর ২টো ৪০ মিনিট নাগাদ কেঁপে ওঠে আফগানিস্তান, পাকিস্তান আর উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। কম্পনের উৎসস্থল ছিল কাবুলের ১৬০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বের জুর্ম এলাকা। রিখটার স্কেলে কম্পন মাত্রা ছিল ৭.৫। কম্পন অনুভূত হয় ভারতের জম্মু-কাশ্মীর, দিল্লি, রাজস্থান, পঞ্জাব, হরিয়ানাতেও। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জম্মু-কাশ্মীর। গত কালই ভারতে তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল। আজ আরও এক আহতের মৃত্যু হয়েছে কাশ্মীরে। একটি বিবৃতিতে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন জানিয়েছে, ভূকম্পের জেরে ৫৩টি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ২০ জন আহত হয়েছেন।

ভাইকে নিয়ে পথেই আশ্রয় নিয়েছে খুদে। মঙ্গলবার পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের একটি গ্রামে।

ভূমিকম্পে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পাকিস্তানের তালিবান অধ্যুষিত খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফাটা-র (ফেডেরালি অ্যাডমিনিস্ট্রেটেড ট্রাইবাল এরিয়া) নিয়ন্ত্রণাধীন পঞ্জাব প্রদেশের পাঁচটি জনপদ এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি এলাকা। পাশাপাশি, চিত্রাল, সোয়াট, সাঙ্গলা, দির, বুনেরের মতো জেলার বহু এলাকা এখন ধ্বংসস্তূপের তলায়। জোরালো কম্পন অনুভূত হয় ইসলামাবাদ, করাচি, রাওয়ালপিন্ডি, লাহৌর, পেশাওয়ার, কোয়েটা, কোহাট, মালাকান্দেও। আজ বহু চেষ্টার পরে তালিবান অধ্যুষিত খাইবার পাখতুনখোয়ায় পৌঁছেছে পাক সেনা।

পাক বিপর্যয় মোকাবিলা পর্ষদের বিজ্ঞপ্তি বলছে, ‘‘আজ সকাল পর্যন্ত শুধু খাইবার পাখতুনখোয়া থেকেই ১৮৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।’’ এলাকাভিত্তিক বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সাতটি দল তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে উদ্ধার কাজ চালানো হচ্ছে। প্রচুর কম্বল, খাবার, জল,
তাঁবু পাঠানো হয়েছে চিত্রাল
প্রদেশে।’’ বিপর্যস্ত এলাকাগুলিতে চিকিৎসক-দলও পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তবে হিন্দুকুশ পর্বতের মাঝখানে অবস্থিত জুর্ম এলাকায় মাটি থেকে ২১৩.৫ কিলোমিটার গভীরে কম্পনের জেরে ধস নেমেছে একটা বিশাল অংশে। ধসে পড়েছে প্রচুর বহুতল। বহু গ্রাম কার্যত চাপা পড়ে গিয়েছে কাদা-মাটির তলায়। বিপর্যস্ত প্রতিটি এলাকায় পৌঁছনো গেলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে দু’দেশের প্রশাসন। পাশাপাশি, তালিবান এবং অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের কব্জা করা এলাকায় কী করে সুষ্ঠু ভাবে ত্রাণকার্য চলবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দু’দেশের প্রশাসনের অন্দরমহলেই।

যদিও দেশের মানুষকে এই বিপদের সময় সব রকম ভাবে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তালিবান। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিবানের বিবৃতি বলছে, ‘‘দুর্গতদের সাহায্যকারী সংস্থা, ত্রাণকর্মী এবং উদ্ধারকারী দলগুলো কাজ চালিয়ে যাক। আমাদের মুজাহিদিনদের (জঙ্গি সংগঠনের সদস্য) নির্দেশ, তাঁরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষদের পাশে দাঁড়ান এবং সব রকম ভাবে সাহায্য করেন।’’

ছবি: এএফপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন