প্রথম থেকেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে তাদের দিকে। আর প্রতি বারই এমএইচ-১৭ ধ্বংসের দায় অস্বীকার করেছে ইউক্রেনের রুশপন্থী জঙ্গিরা। কিন্তু ইতালির এক দৈনিকের দাবি, তাদের কাছে ‘ভুল’ কবুল করেছে রুশপন্থী জঙ্গিদেরই এক সদস্য। জানিয়েছে, পণ্যবাহী বিমান ভেবে ভুল করে তারাই এমএইচ-১৭ ধ্বংস করেছিল। তবে রুশপন্থী জঙ্গিদের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্দার বরোদাই এখনও পুরনো অবস্থানে অনড়। তার ব্যাখ্যা, এমএইচ-১৭ কাণ্ডে দায়ী ইউক্রেনের সেনাবাহিনীই।
দাবি, পাল্টা দাবি, প্রমাণ, পাল্টা প্রমাণ গত বৃহস্পতিবার থেকে এ রকম ঘটনাপ্রবাহেরই সাক্ষী থেকেছে দুনিয়া। কিন্তু ইতালীয় দৈনিকের এই দাবিতে হতবাক গোটা বিশ্ব। ওই দৈনিকে জানানো হয়েছে, দেহবোঝাই যে ট্রেনটি মঙ্গলবার খারকিভে এসে পৌঁছয়, তোরেজ স্টেশনে তার সামনেই দাঁড়িয়ে কথা বলেছিল ওই রুশপন্থী জঙ্গি। নিজের পরিচয় না জানালেও ছবি তুলতে বাধা দেয়নি সাংবাদিকদের। রুশপন্থী জঙ্গিদের তরফ থেকে এ নিয়ে অবশ্য কিছু বলা হয়নি। তবু ঘটনাটিকে উড়িয়ে দিতে পারছেন না কেউই।
দৈনিকটিকে ওই জঙ্গি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে হঠাৎই বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পায় তারা। কম্যান্ডাররা জানায়, ইউক্রেনের এক পণ্যবাহী বিমানকে নামানো হয়েছে। তারই ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে ওই জঙ্গি-সহ আরও ক’জনকে দুর্ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। ভুলটা ভাঙে তখনই। ওই জঙ্গির বয়ানে, “কোনও বায়ুসেনা-পাইলট প্যারাশুট নিয়ে মাটিতে নামতে পেরেছিল কি না, সেটাই দেখতে যাই। দেখি একটা ছোট্ট মেয়ের দেহ পড়ে আছে।...বুঝলাম ওটা একটা যাত্রিবিমান। যাঁরা মারা গিয়েছেন সকলেই সাধারণ যাত্রী।”
তার কাছে হয়তো এটা স্রেফ একটা ভুল। এই ভুলের মাসুল দিতে হয় ২৯৮ আরোহীকে। তদন্তকারীদের অবশ্য দাবি, এ পর্যন্ত ২০০ জনের দেহাংশ হাতে পেয়েছেন তাঁরা। বাকি দেহাংশ এখনও ইউক্রেনের গ্রাবোভো গ্রামে পড়ে রয়েছে। সেগুলো উদ্ধার করা দরকার। আর তাই আন্তর্জাতিক তদন্তকারীরা যাতে রুশপন্থী জঙ্গিদের কবলে থাকা ওই গ্রামে অবাধে যেতে পারেন তার জন্য আলোচনা চলছে বলে এ দিন জানান অস্ট্রেলিয়ার বিদেশমন্ত্রী জুলি বিশপ।
দেহ উদ্ধারের পাশাপাশি দেহ-ফেরত পাঠানোর কাজও চলেছে এ দিন। গত কাল ৪০টি দেহ এসে পৌঁছয় নেদারল্যান্ডসে। এ দিন আরও ৭৪টি দেহ এসে পৌঁছয় বলে খবর। তা বাদে ব্ল্যাক বক্স নিয়েও কাজ শুরু হয়েছে। বুধবারই ব্রিটেনকে এমএইচ ১৭-র ব্ল্যাকবক্স দু’টি দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে ককপিট ভয়েস রেকর্ডারের তথ্য গত কালই উদ্ধার করেছিল ব্রিটেন। জানিয়েছিল বিমান ভেঙে পড়ায় যত টুকু যা ক্ষতি হয়েছে, তা বাদ দিয়ে আর কোনও ধরনের তথ্যবিকৃতি করা হয়নি। এ দিন ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডারের তথ্য উদ্ধারের কাজ শুরু হয়। তবে সব তথ্যই বিশ্লেষণ করবে আন্তর্জাতিক তদন্তকারী দল। যার নেতৃত্বে থাকবেন নেদারল্যান্ডসের বিশেষজ্ঞরা।
অর্থাৎ তদন্ত চলবে নিজের মতো। আমেরিকা গত কালই জানিয়েছিল এ ঘটনার সঙ্গে পুতিনের যোগাযোগের কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও তদন্তপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে রাশিয়ার উপর বড়সড় আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে এ দিন। ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধিবেশনে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। তবে এ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলির মধ্যেই যে বিভেদ রয়েছে, তা স্পষ্ট। ফলে তীব্র নিন্দার মুখে পড়লেও বাস্তবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ঠিক কতটা কড়া পদক্ষেপ করা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। বৃহস্পতিবার সুর চড়িয়েছে রাশিয়াও। উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্তনি আন্তোনোভ এ দিন প্রশ্ন তোলেন, যে প্রমাণের ভিত্তিতে মার্কিন গোয়েন্দা দফতর দাবি করেছিল যে রুশপন্থী জঙ্গি-অধ্যুষিত এলাকা থেকেই মিসাইলটি ছোঁড়া হয়, সে প্রমাণ আদৌ আছে কি?