শনিবারের মধ্য রাত। সিমফেরোপোল রেল স্টেশনের বড় ঘড়িটা এক নিমেষেই দু’ঘণ্টা এগিয়ে গেল। দশটা থেকে বারোটার ঘরে কাঁটা পৌঁছতেই স্টেশনে জড়ো হওয়া অসংখ্য মানুষ চিৎকার করে উঠলেন “ক্রাইমিয়া! রাশিয়া!” আসলে কালই আনুষ্ঠানিক ভাবে মস্কোর সময়ের সঙ্গে জুড়ে গেল ক্রাইমিয়ার সময়।
সেই উপলক্ষে অত রাতেই অসংখ্য মানুষ জড়ো হয়েছিলেন স্টেশনে। তাঁদের সকলের গায়ে রাশিয়ার পতাকা জড়ানো। চোখে জল। প্রত্যেকেই গাইছেন রুশ জাতীয় সঙ্গীত। ক্রাইমিয়ার প্রধানমন্ত্রী সের্গেই আকসিওনভ তাঁদের উদ্দেশে বললেন, “আমি নিশ্চিত যে আমরা যা করেছি, তা ক্রাইমিয়া ও তার অধিবাসীদের ভালর জন্যই।” সঙ্গে সঙ্গে হাততালিতে ফেটে পড়ল গোটা এলাকা। আকসিওনভ তাঁর বক্তৃতায় ‘তাঁদের’ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি।
৩৫ বছরের তাতিয়ানা এসেছিলেন ওই জমায়েতে। বললেন, “এটা একটা দারুণ মুহূর্ত। আমরা সকলেই এটার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু সাহস করিনি কোনও দিন। ভাবতেই পারিনি এত তাড়াতাড়ি এই সময়টা আসবে।”
এই পরিস্থিতিতে আজ আবার প্যারিসে বৈঠকে বসছেন রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি। আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দেশগুলি চিন্তিত থাকুক না কেন, লাভরভ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা ইউক্রেনের পূর্বাংশে কোনও ভাবেই অভিযান চালাবেন না। যদিও ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল আন্দ্রে রাসমুসেন গত শনিবারও এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের সীমান্তে বিপুল পরিমাণে রুশ সেনার উপস্থিতি নিয়ে তাঁর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁর কথায়, “যে কোনও সময় রাশিয়া ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ অংশে অভিযান চালাতে পারে।” তবে এই সতর্কবার্তায় আমল দিতে নারাজ রাশিয়া। মস্কো বারবারই বলছে, ক্রাইমিয়ার মতো ইউক্রেনের পূর্বাংশ নিয়ে তারা আদৌ উৎসাহিত নয়।
তবে রাশিয়া যা-ই বলুক না কেন, ইউক্রেনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত গোটা বিশ্ব। মে মাসে সেখানে ভোট। আর তা হবে মূলত জোড়া ব্যক্তিত্বের লড়াই। কারণ ইউক্রেনের প্রাক্তন বক্সার তথা বিরোধী দল নেতা ভিটালি ক্লিটসকো সদ্য জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্টের দৌড়ে তিনি সামিল হতে চান না। আসন্ন ভোটে তাঁর দাঁড়ানোর কথা থাকলেও সেই দৌড় থেকে আপাতত সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তবে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর আনুগত্য থাকবে পেট্রো পোরোশেঙ্কোর দিকেই। অন্য দিকে থাকবেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া টাইমোশেঙ্কো। এই দু’জনের মধ্যে কে হবেন ইউক্রেনের ভাবী প্রেসিডেন্ট, তা দেশের জনতা জানাবে ৫ মে।