যুদ্ধ ‘জয়ের’ আনন্দে গাজায় খুদের হাতে বন্দুক

হাতে বন্দুক। মুখে ‘জয়ের’ উল্লাস। বয়স ছয় কি সাত! গাজার রাস্তায় এমন মুখের ছড়াছড়ি। প্যালেস্তাইনি জঙ্গিগোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে টানা সাত-সাতটা সপ্তাহ যুদ্ধ চলার পর মিশরের প্রস্তাবিত সংঘর্ষ-বিরতি মেনে নিয়েছে ইজরায়েল। গত কাল স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে গাজা ভূখণ্ডে বন্ধ হয়েছে ইজরায়েলি সেনার বোমাবর্ষণ। সেই আনন্দে পথে নেমেছে অসংখ্য মানুষ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

গাজ়া শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০৬
Share:

উল্লাসে হাতে বন্দুক প্যালেস্তাইনি শিশুদের। ছবি: রয়টার্স।

হাতে বন্দুক। মুখে ‘জয়ের’ উল্লাস। বয়স ছয় কি সাত!

Advertisement

গাজার রাস্তায় এমন মুখের ছড়াছড়ি। প্যালেস্তাইনি জঙ্গিগোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে টানা সাত-সাতটা সপ্তাহ যুদ্ধ চলার পর মিশরের প্রস্তাবিত সংঘর্ষ-বিরতি মেনে নিয়েছে ইজরায়েল। গত কাল স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে গাজা ভূখণ্ডে বন্ধ হয়েছে ইজরায়েলি সেনার বোমাবর্ষণ। সেই আনন্দে পথে নেমেছে অসংখ্য মানুষ। বড়দের সঙ্গে পা মিলিয়েছে খুদেরাও। এদের অনেকেই কিন্তু যুদ্ধে হারিয়েছে বাবা-মা-পরিজন। তছনছ হয়ে গিয়েছে ঘরবাড়ি-শহর। যদিও আধভাঙা গাড়িতে বসে কাউকে দেখা গেল খুদে খুদে আঙুলে ‘ভিকট্রি’ দেখাতে। কারও হাতে হামাসের পতাকা, কারও বা বন্দুক।

গত ৫০ দিনের লড়াইয়ে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা শহরটা। মারা গিয়েছেন ২১৪৩ প্যালেস্তাইনি। আহত ১১ হাজার, ঘরছাড়া লক্ষাধিক মানুষ। যদিও প্যালেস্তাইনের দাবি, জিতেছে তারাই। গাজার বাসিন্দাদের দেখা গেল ঘরবাড়ি-স্বজন হারানোর যন্ত্রণা ভুলে উৎসবে মাততে। কেউ রাস্তায় নেমে বাজি পোড়ালেন। কাউকে দেখা গেল ভগ্নপ্রায় বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে পাগলের মতো নাচতে। বড়-ছোট, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেককেই হামাসের পতাকা গায়ে জড়িয়ে জড়ো হয়েছিলেন রাস্তায়। এরই মধ্যে মাঝেমাঝে ভেসে আসছিল বন্দুকের আওয়াজ, যুদ্ধজয়ের হুঙ্কার। ৩২ বছরের মাহা খালেদ বললেন, “এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না আমি বেঁচে আছি! গত দু’টো মাসে রক্ত, মৃত্যু, বিস্ফোরণের আওয়াজ গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল। প্রতি মুহূর্তে চলত বাঁচার লড়াই।” যুদ্ধ থামায় এ বার ঘরে ফিরছেন মাহার মতো আরও অনেকেই। বাড়ির যে ঠিক কী অবস্থা, তা অবশ্য জানা নেই।

Advertisement

যে দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয় ঘোষণা করেছে প্যালেস্তাইন, সেই ইজরায়েলের মৃত্যুতালিকা কিন্তু তুলনায় অনেক সংক্ষিপ্ত। এই সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন তাদের দেশের ৬৪ জন সেনা। মারা গিয়েছেন ছ’জন সাধারণ নাগরিক। যদিও ইজরায়েলে কোনও উৎসবের মেজাজ নেই। প্রাথমিক ভাবে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা এই জঙ্গি-নিধন সমর্থন করলেও দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে কোনও উল্লেখযোগ্য সাফল্য না মেলায় মন্ত্রিসভার একাংশের সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁকে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করছে এই লড়াইয়ের খরচ নিয়েও। রাজনৈতিক শিবির মনে করছে, আন্তর্জাতিক আবেদনে কর্ণপাত না করে কায়রোর শান্তি আলোচনা ভেস্তে দিলেও এ বার নিজের মন্ত্রিসভার চাপেই নতি স্বীকার করতে হল নেতানিয়াহুকে।

মিশরের তরফে জানানো হয়েছে, দু’পক্ষের কাছেই বিরতি-প্রস্তাবের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে। ইজরায়েল সেই প্রস্তাবে সায় দিলেও হামাসের তরফে কোনও বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। সে নিয়েও বেশ চাপে নেতানিয়াহু-সরকার। আদৌ যুদ্ধে বিরতি টানবে নাকি হামাস, তা নিয়ে যথেষ্টই সন্দিহান তারা। তবে ইজরায়েল সরকারের মুখপাত্র মার্ক রেগেভের আশা, “এ বার হয়তো সত্যিই সংঘর্ষ বিরতি কার্যকর হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন