গাঁধী মূর্তি। নিজস্ব চিত্র।
ভোট টানতে ভরসা মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী! তা-ও আবার বিলেতের মাটিতে।
লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কোয়ারে গাঁধীর একটি মূর্তি নিয়ে আলোচনা চলছে অনেক দিন ধরেই। কথা ছিল গাঁধীর মৃত্যুবার্ষিকীতেই উন্মোচন করা হবে সেটি। কিন্তু সেই দিনটি অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্যস্ত ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সফর নিয়ে। তার পরে বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করেও মোদীর সময় মেলেনি। এ দিকে দরজায় কড়া নাড়ছে নির্বাচন। কনজারভেটিভ পার্টির চোখ এখন এশীয় ভোটে। এই মূর্তিটির কথা ঘোষণা করেছিল তারাই। তাই মে মাসে নির্বাচনে কঠিন লড়াইয়ের আগে প্রতিটি এশীয় ভোট সুনিশ্চিত করতে চাইছে তারা।
তাই তড়িঘড়ি আগামী শনিবার গাঁধীমূর্তি উন্মোচন করা হচ্ছে। আর সেই অনুষ্ঠানে মোদীর পরিবর্তে মূর্তি উন্মোচন করবেন ভারতের অর্থ এবং তথ্যসম্প্রচার মন্ত্রী অরুণ জেটলি। পাঠ করবেন বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চন। সম্ভবত গাঁধীরই লেখা বা উদ্ধৃতি থেকে তিনি কিছু পড়বেন বলে খবর। গাঁধীর নাতি গোপালকৃষ্ণ গাঁধীরও থাকার কথা ওই অনুষ্ঠানে।
পার্লামেন্ট স্কোয়ারে উইনস্টন চার্চিল, নেলসন ম্যান্ডেলা, আব্রাহাম লিঙ্কনের পাশাপাশি এ বার দেখা যাবে গাঁধীকেও। ১৯৩১ সালে এক বার লন্ডনে এসেছিলেন গাঁধী। ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সিঁড়িতে সে সময় গাঁধীর যে ছবি তোলা হয়েছিল, সেই ছবিই এই মূর্তি তৈরিতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে বলে জানিয়েছেন ভাস্কর ফিলিপ জ্যাকসন। ৬ লক্ষ পাউন্ড ব্যয় করে তৈরি হয়েছে মূর্তি। যার মধ্যে এক লক্ষ পাউন্ড দান করেছেন ইনফোসিস-কর্তা নারায়ণ মূর্তি।
গাঁধীবাদি চিন্তা যাঁর মনে প্রভাব ফেলেছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার সেই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং বর্ণবৈষম্য-বিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার মূর্তির পাশেই রাখা হবে গাঁধীর মূর্তিটি। পার্লামেন্ট স্কোয়ারে এমন দুই ব্যক্তিত্বের মূর্তি রয়েছে, যাঁরা বাস্তব জীবনে গাঁধীকে তেমন পছন্দ করতেন না। আছেন ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল, যিনি জীবদ্দশায় গাঁধীকে ‘অর্ধনগ্ন ফকির’ বলেই সম্বোধন করতেন। স্কোয়ারের সামনেই আছে চার্চিলের মূর্তি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকাকালীন সেখানকার ভারতীয়দের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছিলেন গাঁধী। সেই সময় সে দেশেরই আর এক নেতা জেনারেল জ্যান স্মুটসের সঙ্গে মতাদর্শের সংঘাত হয় তাঁর। পরবর্তীকালে স্মুটস অবশ্য শ্রদ্ধা করতে শুরু করেন গাঁধীকে। পার্লামেন্ট স্কোয়ারে রয়েছেন সেই স্মুটসের মূর্তিও।
১৯ বছর বয়সে আইনের ছাত্র হিসেবে লন্ডনে পা রেখেছিলেন গাঁধী। তাঁর যে মতাদর্শ পরে গোটা পৃথিবী অনুসরণ করবে, তার ভিত গড়ে উঠেছিল এই শহর থেকেই। এই শহরের ট্যাভিস্টক স্কোয়ারে গাঁধীর (বসে থাকা) আরও একটি মূর্তি রয়েছে। গাঁধী স্মরণে এত দিন লন্ডনে ভারতীয় হাই কমিশনের তরফে সেখানেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হতো। এ বার পার্লামেন্ট স্কোয়ারেও পালিত হবে ২ অক্টোবর এবং ৩০ জানুয়ারি, গাঁধীর জন্ম ও মৃত্যুবাষির্কী।