সমুদ্রের অতলে খোঁজ অসাধ্য, মত বিশেষজ্ঞদের

নতুন উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়ল আরও ১২২টি বস্তু। এমএইচ ৩৭০ ঘিরে এত দিনের তল্লাশি অভিযানে পাওয়া এটাই সম্ভবত সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ছবি, তেমনটাই দাবি করলেন মালয়েশিয়ার পরিবহণ মন্ত্রী হিশামুদ্দিন হুসেন। বুধবার তিনি জানালেন, অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে ভাসমান ১২২টি সন্দেহজনক বস্তু দেখা গিয়েছে ফ্রান্সের ‘এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস’ সংস্থার উপগ্রহচিত্রে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৪ ০২:০০
Share:

কেউ ফিরবেন না জেনেও নজর শুভেচ্ছাবার্তাতেই। বেজিংয়ে। ছবি: রয়টার্স।

নতুন উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়ল আরও ১২২টি বস্তু। এমএইচ ৩৭০ ঘিরে এত দিনের তল্লাশি অভিযানে পাওয়া এটাই সম্ভবত সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ছবি, তেমনটাই দাবি করলেন মালয়েশিয়ার পরিবহণ মন্ত্রী হিশামুদ্দিন হুসেন।

Advertisement

বুধবার তিনি জানালেন, অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে ভাসমান ১২২টি সন্দেহজনক বস্তু দেখা গিয়েছে ফ্রান্সের ‘এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস’ সংস্থার উপগ্রহচিত্রে। ফরাসি সংস্থাটি রবিবারে তোলা ওই ছবি আজ মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছে। হিশামুদ্দিন বলেছেন, অস্ট্রেলিয়াকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। ওরা পরীক্ষা করে দেখবে, ওই সন্দেহজনক বস্তুগুলি এমএইচ ৩৭০-রই অংশ কিনা।

তবে বুধবার অন্ধকার হওয়ার আগে তল্লাশিতে ভাসমান বস্তুগুলি মিলবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান হিশামুদ্দিন। সে ক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার পারথ শহর থেকে অন্তত আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ প্রান্তে ওই বস্তুগুলির ছবি ধরা পড়েছে উপগ্রহচিত্রে। যেগুলি ১-২৩ মিটার লম্বা। হিশামুদ্দিন জানিয়েছেন, চারশো বর্গকিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়েছিটিয়ে ছিল সেগুলি। তার মধ্যে কয়েকটি বস্তু রয়েছে বেশ উজ্জ্বল ধরনের।

Advertisement

গত কাল খারাপ আবহাওয়ার জন্য তল্লাশি বন্ধ থাকলেও এ দিন ফের শুরু হয়েছে খোঁজ। তবে অস্ট্রেলীয় মেরিটাইম সেফটি এজেন্সি জানিয়েছে, দু’টি বস্তু তাদের চোখে পড়েছে। সম্ভবত দড়ি জাতীয় কিছু। এ ছাড়া, নিউজিল্যান্ডের সেনাবিমান থেকে একটি নীল বস্তু দেখা গিয়েছে। কিন্তু কোনওটাই এমএইচ ৩৭০-র অংশ নয় বলেই মনে হয়েছে তাদের। সারা দিন ধরে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণে বিমান ভেঙে পড়ার সম্ভাব্য এলাকা জুড়ে তল্লাশি চালিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, চিন, নিউজিল্যান্ড, আমেরিকা, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিমান। সঙ্গে যোগ দিয়েছে একটি অস্ট্রেলীয় এবং চারটি চিনা জাহাজ। হিশামুদ্দিন আজ এটাও বলেছেন, যদি সাম্প্রতিক উপগ্রহচিত্রের বস্তুগুলি হারিয়ে যাওয়া মালয়েশীয় বিমান এমএইচ ৩৭০-রই হয়, তবে পরবর্তী পদক্ষেপ হবে এটা বোঝা, যেখানে বিমান ভেঙে পড়েছিল, তার থেকে কত দূর সরে গিয়েছে ধ্বংসস্তূপের অংশ। তার পরেই শুরু হবে সমুদ্রের নীচে নেমে খোঁজ।

আর সেই প্রসঙ্গে উঠছে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা। যে অংশে খোঁজ চলছে, পারথের দক্ষিণপশ্চিমে আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণের সেই অংশটি অসম্ভব বিপজ্জনক। যাকে একবাক্যে সকলেই বলছেন, পৃথিবীর সব চেয়ে দুর্গম জায়গা। পদে পদে গিলতে আসছে সমুদ্রের নীচে থাকা আগ্নেয়গিরি আর বিশাল বিশাল উঁচু ঢেউ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্রের নীচে তল্লাশি শুরু করলেই ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে পড়তে হবে অনুসন্ধানকারীদের। কী ভাবে?

নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র-বিশেষজ্ঞ এরিক ভ্যান সেবিল বলছেন, “ওই অঞ্চলটি গর্জনশীল চল্লিশার (রোরিং ফর্টিজ) প্রভাবে এমনিতেই দারুণ দুর্যোগপূর্ণ। সব চেয়ে বেশি ঝোড়ো হাওয়া আর পর্বতের সমান উঁচু ঢেউয়ের দৌরাত্ম্য এই অংশেই। শীতকালে এখানে ১০-১৫ মিটার উঁচু ঢেউ দেখা যায় এখানে।” আমেরিকার সৌফান গ্রুপ নামে একটি নিরাপত্তা সংস্থা বলছে, এই রকম অবস্থায় বিমানের ছোট ছোট টুকরো খুঁজতে যাওয়া খড়ের গাদায় ছুঁচ খোঁজার মতোই দুঃসাধ্য ব্যাপার। তারা জানাচ্ছে, হয়তো কোনও একটা বস্তুতে চোখ আটকাল। কিন্তু ঢেউয়ের দাপট আর সূর্যের ছটায় চোখ ঝলসে যাবে মুহূর্তে। আর হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না সেই বস্তু।

ভূতত্ত্ববিদ রবিন বিম্যান বলছেন, ধরা যাক, এমএইচ ৩৭০-র কোনও একটি অংশ খুঁজে পাওয়া গেল। দুর্গম ওই অংশে তলিয়ে যাওয়া ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করাটা কিন্তু সাংঘাতিক কঠিন। কারণ বাধা হয়ে উঠবে সমুদ্রের নীচে থাকা অসংখ্য আগ্নেয়গিরি। ভারত মহাসাগরের তিন হাজার মিটার গভীরে যেগুলি বেশ সক্রিয়। বিম্যানের মতে, যদি ব্ল্যাক বক্স ওই রকম কোনও জায়গায় গিয়ে পড়ে, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছুই হবে না।

এত রকম সম্ভাবনা আরও বেশি করে হতাশ করে তুলছে বিমানযাত্রীদের আত্মীয়দের। বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলছেই। অব্যবস্থার অভিযোগে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের প্রতি এ দিন ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা। মালয়েশিয়ার জিনিস বয়কটের হুমকি দিয়েছেন। তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন চিনা সেলিব্রিটিরাও। হিশামুদ্দিন এ সব মানতে নারাজ। তিনি বলেছেন, “ইতিহাস আমাদের বিচার করবে। একটা কাজে বিশ্বের ২৬টি দেশকে সামিল করা মুখের

কথা নয়।”

এর মধ্যে এ দিনই আবার কয়েক কোটি ডলারের মামলার মুখে পড়েছে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স। এমএইচ ৩৭০-র এক যাত্রীর বাবা জানুয়ারি সিরেগারের হয়ে ওই মামলা দায়ের করেছে শিকাগোর এক আইনি সংস্থা। তারা মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের কাছে বিমানের নকশা চেয়েছে। তাতে যান্ত্রিক কোনও ত্রুটি ছিল কিনা, জানতে চেয়েছে তা-ও। যদিও এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেনি মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স।

সাহায্যের হাত অস্ট্রেলিয়ার

এমএইচ ৩৭০-র মৃত যাত্রীদের আত্মীয়দের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল অস্ট্রেলিয়া। যে মুহূর্তে নিশ্চিত করে জানানো হবে, সাম্প্রতিক উপগ্রহচিত্রে পাওয়া বস্তুগুলি এমএইচ ৩৭০-র অংশ, তখনই বেশির ভাগ যাত্রী মালয়েশিয়া এবং বেজিং থেকে রওনা দেবেন পারথের উদ্দেশে। অস্ট্রেলীয় সরকার তাই ঘোষণা করেছে, যাত্রীদের আত্মীয়দের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে। প্রয়োজনে মকুব করা হবে ভিসার মূল্যও। এগিয়ে এসেছেন পারথের স্থানীয় বাসিন্দারাও। তাঁরা জানিয়েছেন, স্বজনহারাদের নিজেদের বাড়িতেই থাকার বন্দোবস্ত করে দেবেন। বেজিংয়ে এমন অনেক যাত্রীর আত্মীয়কেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মারফত ফোন করেছেন পারথের বাসিন্দারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement