Advertisement
Mahalaya Rituals

তর্পণে পশুর ভেক ধরে পূর্বপুরুষরা জলগ্রহণ করতে আসেন!

সামনের শনিবারই মহালয়া। আর মহালয়া তিথি অর্থাৎ সেদিনের অমাবস্যা তিথি কাটলেই শুরু দেবীপক্ষের। সেই সঙ্গে ফুরোবে তার আগের ষোলো দিনের পিতৃপক্ষের।

আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:৩৯
Share: Save:

কৈলাস থেকে উমার মর্ত্যে ওরফে বাপের বাড়ি আসার এ বছরের সময়কাল প্রায় এসেই গেল! দেবীপক্ষ পড়ল বলে। সামনের শনিবারই মহালয়া। আর মহালয়া তিথি অর্থাৎ সেদিনের অমাবস্যা তিথি কাটলেই শুরু দেবীপক্ষের। সেই সঙ্গে ফুরোবে তার আগের ষোলো দিনের পিতৃপক্ষের। এবং সেদিন মানে মহালয়ায় পিতৃলোক থেকে আমাদের প্রয়াত পূর্বপুরুষেরা মর্ত্যলোকে তাঁদের বর্তমান বংশধরদের প্রিয় আত্মীয়স্বজনের কাছে আসেন। এঁদের হাত থেকে জলগ্রহণ করতে। ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি-পুতিদের তর্পণ নিতে।

শাস্ত্র মতে আমাদের মৃত পূর্বপুরুষরা তাঁদের আত্মীয়স্বজন, বংশধরদের সম্পূর্ণ ছেড়ে যেতে পারেন না! তাই তো বছরের অন্তত এই একটা দিনে হলেও সেদিন পিতৃলোক থেকে মর্ত্যলোকে পূর্বপুরুষরা তাঁদের বংশধর, আত্মীয়স্বজনের কাছে তর্পণ-জল গ্রহণ করতে আসেন। কিন্তু এলেও আত্মা মনুষ্যমূর্তি ধারণ করতে পারেন না। পাঁচ অন্য শরীরের মাধ্যমে মর্ত্যলোকে আসেন এদিন।

আর সেটা পরিস্ফূট হয় মহালয়ার সকালে পবিত্র গঙ্গাঘাটে অগণিত মানুষের তর্পণ অথবা পিন্ডদান কিংবা আদ্যশ্রাদ্ধ করার মধ্য দিয়ে। শাস্ত্র অনুসারে মহালয়ায় তর্পণ হোক, অথবা পিন্ডদান কিংবা শ্রাদ্ধকর্ম— তিনটেই আমরা করি মৃত পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায়।

উল্টো দিকে পূর্বপুরুষরা তত ক্ষণে পিতৃলোক থেকে মর্ত্যলোকে নেমে আসেন। ফলতঃ, একটা অদৃশ্য অনিন্দ্যসুন্দর আত্মিক যোগ সৃষ্টি হয় পূজার্চনা, মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে। শাস্ত্রে বলে, আমাদের পূর্বপুরুষরা অন্য ভেক ধরে তাঁদের বর্তমান উত্তরসুরিদের কাছ থেকে অন্ন-জল গ্রহণ করতে আসেন। শাস্ত্রে তার নাম পঞ্চতত্ত্ব।

তর্পণে আমরা পূর্বপুরুষদের জল দান করি। পিন্ডদানে পূর্বপুরুষদের করে থাকি অন্নদান। কিন্তু শাস্ত্রমতে, এদিন পূর্বপুরুষদের শ্রাদ্ধকার্য আমরা না করা পর্যন্ত তাঁরা মর্ত্যলোক ছাড়তে পারেন না, ফিরে যেতে পারেন না পিতৃলোকে, আবার এক বছরের জন্য।

সে কারণে, পিন্ডদানের খাবারের মুখ সামান্য খুলে বাইরের দিক করে রাখাটা দস্তুর। পূর্বপুরুষরা কুকুর, কাক, গরু, পিঁপড়ে এবং দেবতা— এই পঞ্চের ভেক ধরে, অর্থাৎ এদের মাধ্যমে অন্ন-জল গ্রহণ করেন। তার জন্য এর নাম পঞ্চতত্ত্ব।

এমনকি এত পশুপাখি থাকা সত্ত্বেও ওই চার প্রাণী এবং পাশাপাশি দেবতার ভেক আমাদের পূর্বপুরুষদের ধরার পিছনেও শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা আছে। যেমন, যে পাঁচ অন্য দেহের ভেক ধরে পূর্বপুরুষরা আমাদের কাছে আহার গ্রহণ করতে আসেন, সেটা এমনি এমনি নয়। এঁরা প্রত্যেকে পঞ্চভূতের একেকটি প্রতীক। গরু পৃথিবীর প্রতীক, কাক বায়ুর প্রতীক, কুকুর জলের প্রতীক, পিঁপড়ে অগ্নির প্রতীক এবং দেবতা প্রতীক হলেন আকাশের। সেজন্য পিন্ডদানের খাবার এই পাঁচ জায়গাকে উদ্দেশ্য করে পাঁচটি আলাদা জায়গায় রাখা হয়। কাকের খাবার মাটিতে দেওয়া হয়। বাদবাকি চারটে খাবার পাতায় নিবেদন করা হয়। একে বলে পঞ্চবলি।

পূর্বপুরুষরা গরু, কাক, কুকুর, পিঁপড়ে ও দেবতার শরীরের মাধ্যমে পঞ্চবলি-তে এসে অন্নজল খেয়ে আবার এক বছরের জন্য ফিরে যান তাঁদের পিতৃলোকে!

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mahalaya 2023 Durga Puja 2023
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE