Chhaad movie review

এক আকাশ মুক্তি আর বন্ধ ঘরের দ্বন্দ্ব, কেমন হল পাওলি অভিনীত ‘ছাদ’?

নারী দিবসে আরও প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পায় এ ছবি। বহু বার উচ্চারিত প্রশ্নটিই ঘুরেফিরে আসে— সত্যিই কি আজও নারীরা মুক্ত?

Advertisement
দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৫ ১৭:৫৪
Image of Paoli Dam

‘ছাদ’ ছবির একটি দৃশ্যে পাওলি দাম। ছবি: সংগৃহীত।

ছাদ। মধ্যবিত্ত বাঙালি জীবনের এক টুকরো মুক্তি। আর সে মুক্তির গল্প শোনাতেই, নারী দিবসে মুক্তি পেল ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী পরিচালিত ‘ছাদ’ ছবিটি। কলকাতা বদলাচ্ছে। হাইরাইজ় ঢেকে দিচ্ছে শহর। হারিয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত পাড়া। হারাচ্ছে মানুষের নিজের সঙ্গে কাটানোর একান্ত মুহূর্তগুলি। হারাচ্ছে সেই সব মধ্যবিত্ত পাড়ার ছাদেরাও। কোথাও হালের ছাউনি দিয়ে ঢাকা হচ্ছে খোলা আকাশ। কোথাও চিলেকোঠা ভেঙে উঠে যাচ্ছে ফ্ল্যাটবাড়ি। একান্ত মধ্যবিত্তের নিজস্ব স্বপ্নগুলো কোথায় যেন মরে যাচ্ছে। হারাচ্ছে কলঘরের গান। হারাচ্ছে সান্ধ্য ছাদের হাতে হাত রাখার অভিমানও...।

Advertisement

এই সব নিয়েই ‘ছাদ’ ছবিটি। বড় ধীর লয়ের এই ছবি। এক, জমে না ওঠা দাম্পত্য। সে দম্পতির বাবা-মা। আর অন্য দিকে এক নারীর স্বাধীন হয়ে ওঠার একান্ত লড়াই। তাকে কেউ ঠিক বুঝতে পারে না চার দেওয়ালের ঘেরাটোপে। তার নিজের জীবনেও শিল্প ছিল, লেখা ছিল, ছিল একার ছাদের গান। কিন্তু সে সবকে পাত্তাই দেয় না সংসার। স্রেফ কেজো হিসেব দিয়েই তাকে বুঝতে চায় সকলে। আর সেখানেই বাধে বিরোধ। আর সেখানেই নাছোড় মুক্তিও খুঁজতে থাকে সেই নারী।

আপাত ভাবে এই থিম নতুন নয়। অনেক ছবি বা সাহিত্য তৈরি হয়েছে এই বিষয়কে ঘিরে। তবে এ ছবির গুরুত্ব কোথায়? ঠিক বোঝা যায় না। কিন্তু কোথাও যেন মনে হয়, এ ছবি আজও প্রাসঙ্গিক খুবই। বিশেষত, নারী দিবসে আরও প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পায় এ ছবি। বহু বার উচ্চারিত প্রশ্নটিই ঘুরেফিরে আসে— সত্যিই কি আজও নারীরা মুক্ত? পুরুষ যতটা চায়, তার একটু বাইরে পা রাখলেই কি সত্যিই সমস্যা বাধে না আজও? কতটা সে নিজের, আর কতটা সংসারের? স্বামীর মতো সে-ও লিখতে চাইলে বা নিজের খেয়ালে কোনও বন্ধুর সঙ্গে কফি খেতে গেলেই কি জট পাকায় না পরিস্থিতিতে?

Review of Bengali film Chhaad starring Paoli Dam

‘ছাদ’ ছবির একটি দৃশ্যে পাওলি দাম (বাঁ দিকে) এবং রণজয় বিষ্ণু। ছবি: সংগৃহীত।

এই সব নিয়েই মধ্যবিত্ত জীবনের গল্প বলে এ ছবি। বলতে চায়, যে ধূসর বিকেল আর শ্যাওলাধরা ছাদ ফেলে দ্রুত এগোচ্ছি আমরা, সে এগোনো কতটা ঠিক? সেপিয়া টোনে মধ্যবিত্ত উত্তর কলকাতা দেখতে বড় মায়াবী লাগে তাই ছবি জুড়ে। নানা আত্মীয়ের উপস্থিতি তাকে আরও মায়াবী করে তোলে। কেউ উপরতলায় এখনও কলের গান শোনে, তো কেউ চুলের ফিতে বাঁধে আনমনে বিকেলবেলার ছাদে।

পাওলি দাম বড় সুন্দর মানিয়ে গিয়েছেন স্বাধীনচেতা নারীর ভূমিকায়। তাঁর সংসারী হয়েও মুক্তমনা চরিত্র অনবদ্য ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। ভাল লাগে রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের গম্ভীর স্বামীর ভূমিকা। পাওলির সঙ্গে সঙ্গত করে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন এই চাপা চরিত্রটিকে। তাই জমে গিয়েছে। ভাল লাগে সাংবাদিক চরিত্রে রণজয়ের ভূমিকা এবং অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিনয়ও।

ছবিটি দেখতে দেখতে সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মায়ানগর’ ছবিটির কথা মনে পড়ছিল। সেখানেও উত্তর কলকাতার এক ভাঙা পরিবারের গল্প। আর তার সঙ্গেই ছিল সমকালের দুর্নীতিময় চারপাশ আর এক অদ্ভুত নাগরিক শূন্যতার বোধ।

Review of Bengali film Chhaad starring Paoli Dam

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কিন্তু এ ছবির প্রসঙ্গে সেই সমকালের উপস্থিতি না থাকাটা কোথাও বেমানান লাগল। যে সমস্যা নিয়ে এ ছবি, নারীমুক্তি, তার নানাবিধ নতুন দিক আজ সমাজে বা সমাজমাধ্যমে দেখা যায়। কিন্তু এ ছবিতে সে সবের উপস্থিতি প্রায় নেই। ‘চারুলতা’র সময়ের সংসারে নারীর একাকিত্ব আর আজকের এক নারীর একাকিত্ব তো এক নয়! বদলেছে সময়। সে বদলের অনেক প্রবণতাই এ ছবিতে ধরা নেই। তাই ভাল অভিনয়, ভাল চিত্রনাট্য সত্ত্বেও গল্পে কোথাও মার খেয়ে যায় এ ছবি।

তবু, শেষে এটাই বলার, এই প্রবল গতিময়তার যুগে নব্বই দশকের হারিয়ে যাওয়া এক ছাদের কথা মনে করানোর জন্য কিছুটা কৃতজ্ঞতা থেকেই গেল পরিচালকের কাছে। আশা করি, আগামী গল্পে তিনি আরও সমকালীন হয়ে উঠবেন।

Advertisement
আরও পড়ুন