Tejaswi Jaiswal

যশস্বীকে ক্রিকেটার করতে খেলা ছেড়েছিলেন দাদা তেজস্বী, দাদাকে আবার ক্রিকেটে ফেরালেন ভাই

যশস্বী জয়সওয়ালের সঙ্গে মুম্বইয়ে ক্রিকেট শিখতে যান তাঁর দাদা তেজস্বী জয়সওয়ালও। কিন্তু সাফল্য পাননি। সংসারের হাল ধরতে রোজগার করতে বেরোতে হয় তাঁকে। দাদাকে আবার ২২ গজে ফিরিয়েছেন ভাই।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:৫৮
picture of cricket

(বাঁ দিকে) তেজস্বী জয়সওয়াল এবং যশস্বী জয়সওয়াল (ডান দিকে)। ছবি: এক্স।

ভাইয়ের জন্য নিজের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ত্যাগ করেছিলেন তেজস্বী জয়সওয়াল। ভাই জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর দাদাকে আবার ক্রিকেট মাঠে ফেরান। গত বছর ত্রিপুরার হয়ে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে অভিষেক হয়েছে যশস্বী জয়সওয়ালের দাদার। এ বার উত্তরাখণ্ডের বিরুদ্ধে প্রথম অর্ধশতরান করেছেন তেজস্বী।

Advertisement

নুন আন্তে পান্তা পুরনো সংসারের হাল ধরতে ক্রিকেট ছাড়তে হয়েছিল তেজস্বীকে। তখন তাঁর দু’টি লক্ষ্য। প্রথম, পরিবারের আর্থিক সুরাহা। দ্বিতীয়, ভাইকে ক্রিকেটার তৈরি করা। ব্যাট, প্যাড তুলে রেখে দিল্লিতে সেলসম্যানের চাকরি নেন তেজস্বী। ভাই যশস্বী ক্রিকেট খেলে আর্থিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখার পর চাকরি ছাড়িয়ে দাদাকে ফেরান ২২ গজে। ভাইয়ের উৎসাহে নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেন ২৮ বছরের অলরাউন্ডার। শুরু হয় অনুশীলন।

ক্লাব পর্যায়ের ম্যাচে সাফল্য পাওয়ার পর জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ খুঁজছিলেন। নিজের রাজ্য উত্তরপ্রদেশ বা ভাইয়ের মুম্বই দলে সুযোগ পাওয়া কঠিন। সুযোগ নেই বুঝে তেজস্বী নজর দেন দেশের উত্তর-পূর্বে।

২০২৪ সালে পেয়ে যান সুযোগ। ত্রিপুরার হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক মেঘালয়ের বিরুদ্ধে। সাফল্য পাননি। পরের ম্যাচে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধেও হতাশ করেন। তৃতীয় ম্যাচে বডোদরার বিরুদ্ধে খেলেন ৮২ রানের ইনিংস। কিন্তু ধারাবাহিকতার অভাবে প্রথম একাদশে জায়গা পাকা করতে পারেননি। ৫০ ওভারের এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও একই দশা। তবু হাল ছাড়েননি।

এ বার রঞ্জি ট্রফিতে শুধু মহারাষ্ট্রের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পান। তেমন কিছু করতে পারেননি। উত্তরাখণ্ডের বিরুদ্ধে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে প্রথম ম্যাচ খেলার সুযোগ পান গত ৬ ডিসেম্বর। সেই ম্যাচেই ৫১ রানের ইনিংস খেলে আলোচনায় উঠে এসেছেন ভারতীয় দলের ওপেনারের দাদা। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে তেজস্বী বলেছেন, ‘‘আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। আমাকে কাজে যেতে হত। বাধ্য হয়ে কাজ করতে হত। কিন্তু প্রথমে কাজে আমার মন থাকত না। নিজেকে বোঝাই, এটা বাধ্যবাধকতা। প্রয়োজন। তবু আশা দেখতাম। ভাবতাম, যশস্বী বড় হয়ে গেলে আবার ক্রিকেট খেলা শুরু করব।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘কখনও মনে হয়নি, আবার খেলতে পারব না। সব সময় ভাবতাম, আমাকে মাঠে ফিরতেই হবে। ভাইও উৎসাহ দিত। যশস্বীও চাইত। আমি আবার ক্রিকেট খেলি। নিজে দাঁড়ানোর পর যশস্বী আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। সত্যি বলতে ওর জন্যই আবার খেলতে পারছি। ভাই আমার সব কিছু।’’

২০১৯ সাল থেকে আবার পুরোপুরি ক্রিকেটে ফেরেন তেজস্বী। ত্রিপুরায় খেলার ব্যবস্থা দাদাকে করে দেন যশস্বীই। মাঝে এক বার দিল্লি ফিরেছিলেন খেলার জন্য। কোভিড বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাঁর স্বপ্নের সামনে। তবে হাল ছাড়েননি। ২০২১ সালে সিদ্ধান্ত নেন ক্রিকেটকেই পেশা হিসাবে নেওয়ার। তেজস্বী বলেছেন, ‘‘২০২১ সালে আইপিএল বন্ধ থাকার সময় রাজস্থান রয়্যালসের অনুশীলনের জন্য বোলার দরকার ছিল। ভাই আমাকে রাজস্থানের শিবিরে নিয়ে যায়। রাজস্থানের শিবিরই আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। নেটে দীর্ঘ সময় বল করতে হত ব্যাটারদের। ওই একটাই কাজ ছিল। রাজস্থানের নেটে বল করতে করতে আবার আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই। নিজেকে নতুন করে ক্রিকেটার হিসাবে গড়ে তুলতে প্রচুর পরিশ্রম করতাম। রাজস্থান দলের খুব সাহায্য পেয়েছিলাম।’’

এক দিনের ক্রিকেটে যশস্বীর প্রথম শতরানের দিনই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম অর্ধশতরানের ইনিংস খেলেছেন তেজস্বী। একই দিনে দু’ভাইয়ের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তেজস্বী। তিনি বলেছেন, ‘‘সে দিন ভাইয়েরও খেলা ছিল। সকালে কথা হয়নি। বাবার কাছে আমার খেলার কথা জেনে মেসেজ করেছিল। লিখেছিল, ‘সুযোগটা কাজে লাগাও। চাপ নিও না।’ পরে রাতে ওর সঙ্গে কথা হয়।’’ দাদা-ভাই দু’জনেই বাঁহাতি ব্যাটার। যশস্বী কি পরামর্শ দেয়? তেজস্বী বলেছেন, ‘‘অবশ্যই। ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছি। ও ভারতীয় দলের খেলোয়াড়। ব্যাটিংয়ের অনেক কিছু শেখায় আমাকে। ভাই সব সময় বলে, ‘পারফরম্যান্স যেমনই হোক আত্মবিশ্বাস হারাবে না।’ আমিও এখন ওর মতো করে ভাবতে শিখে গিয়েছি।’’

ভাইয়ের সাফল্য উপভোগ করেন তেজস্বী। নিজের ক্রিকেট ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে ফেলা নিয়ে তাঁর কোনও আক্ষেপ নেই। তেজস্বী বলেছেন, ‘‘মনে করি না পরিবারের জন্য বা ভাইয়ের খেলার জন্য আমি কোনও ত্যাগ করেছি। বড় ছেলে হিসাবে নিজের দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি শুধু। আমাদের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। দু’জনের ক্রিকেটের খরচ চালানো সম্ভব ছিল না। যশস্বী অনেক বেশি প্রতিভাবান ছিল। চাইনি ওর খেলা বন্ধ হোক। দু’জনে একসঙ্গে মুম্বই গিয়েছিলাম খেলা শিখতে। ভাই পারফর্ম করতে পেরেছে। ও প্রায় সব ম্যাচেই প্রচুর রান করত। আমি পারিনি। যশস্বীকে ছোট থেকে দেখছি। পারফর্ম করেই এই জায়গায় পৌঁছেছে। ওকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছায় আমি পিছনে সরে গিয়েছিলাম।’’

এখন দাদাকে কোনও কাজ করতে দেন না যশস্বী। শুধু খেলতে বলেন। যতদিন ইচ্ছে খেলা চালিয়ে যেতে বলেন। ভাইকে পাশে পেয়ে ছুটছেন অলরাউন্ডার দাদাও। এখনও পর্যন্ত ত্রিপুরার হয়ে পাঁচটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ, একটি ৫০ ওভারের ম্যাচ এবং চারটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। মিডিয়াম পেসারের আপাতত লক্ষ্য ত্রিপুরা দলে নিয়মিত হওয়া।

Advertisement
আরও পড়ুন