দিলীপ ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
ভুল মূর্তিতে মাল্যদান করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দিলীপ ঘোষ অবশ্য দাবি করেছিলেন শাহ যখন মূর্তিতে মালা দিয়েছেন, তখন সেটিই বিরসা মুন্ডারই মূর্তি। এ বার নিজে ভুল মূর্তিতে মালা দিয়ে বিতর্কে জড়ালেন বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভার বিজেপি প্রার্থী দিলীপ। মূর্তির পরিচয় শুনে দিলীপের কৌতূহলী প্রশ্ন, ‘‘এখানে আবার কপূর এল কোথা থেকে?’’ বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষের সুযোগ হাতছাড়া করেনি তৃণমূল ।
রবিবার চা চক্রে বেরিয়েছিলেন দিলীপ। সেখানে বর্ধমানের রাজা ভেবে রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠের গলায় মালা দিয়ে দেন বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী। মালা দিয়ে দিলীপ ‘মহারাজ উদয়চাঁদ অমর রহে’ বলে জয়ধ্বনিও দেন। ঠিক ওই সময়েই ঘনিষ্ঠেরা দিলীপকে বোঝান, ওটা বনবিহারী কপূরের মূর্তি। যা শুনে দৃশ্যত বিস্মিত হয়ে যান বিজেপি নেতা। এ নিয়ে তৃণমূল খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘‘উনি মেদিনীপুরের মানুষ। বর্ধমানের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানেন না।’’ তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাসের কটাক্ষ, ‘‘যিনি গরুর দুধে সোনা খুঁজে পান, তাঁর কাছে এটাই স্বাভাবিক। ওঁরা ইতিহাস-ভূগোল জানেন না। মনীষীদের চেনেন না। এই সব ভুল আরও সহ্য করতে হবে বর্ধমানের মানুষকে।’’
বস্তুত, উদয়চাঁদ ছিলেন বিজয়চাঁদ মাতাবের জ্যেষ্ঠ পুত্র। পিতার মৃত্যুর পর বর্ধমান রাজপরিবারের সদস্য সিংহাসনে বসেন। বঙ্গভঙ্গ সভার অমুসলিম ব্লকের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন উদয়চাঁদ। স্বাধীনতার পর প্রথম নির্বাচনে ১৯৫২ সালে ভোটে লড়াই করেছিলেন তিনি। উদয়চাঁদের হয়ে ভোটপ্রচার করেছিলেন জওহরলাল নেহরু স্বয়ং। যদিও বিনয় চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন। ইতিহাস গবেষক সর্বজিৎ যশ বলেন, ‘‘বনবিহারী কপূর ছিলেন পেশায় জ্যোতিষী। পূর্ব বর্ধমানের গলসির কাছে তাঁর বাড়ি ছিল। রাজা আফতাবচাঁদের পুত্র বিজয়চাঁদকে দেখে দত্তক নেওয়ার ইচ্ছা হয় তাঁর। বিনিময়ে রাজা তাঁকে ‘এস্টেট’ দেখাশোনার দায়িত্ব পান বনবিহারী। বিজয়চাঁদের জন্ম ১৮৮১ সালে। তাঁকে রাজার আসনে বসানো হয় ১৮৮৭ সালে। আফতাবচাঁদের মৃত্যুর পর। তখন তিনি নাবালক।’’ ইতিহাস গবেষক জানান, ওই সময় রাজবাড়ির ‘এস্টেট’ দেখাশোনা করতেন বনবিহারী। তিনি সম্মানের সঙ্গে কাজ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর রাজবাড়ি চত্বরে একটি মূর্তি বসানো হয়। তাঁর নামে বর্ধমানের প্রথম ফুটবল কাপও চালু হয়। অন্য দিকে, ১৯৪৩ সালে রাজা হিসেবে অভিষেক হয় বিজয়চাঁদের পুত্র উদয়চাঁদের। সম্পর্কে বনবিহারী কপূর তাঁর দাদু (যার সঙ্গে দিলীপ ঘোষ উদয়চাঁদকে গুলিয়েছেন)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy