মেদিনীপুর কলেজে চলছে লোকসভা ভোটের ইভিএম পরীক্ষায় কাজ। রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। এই কাজে যারা সাহায্য করছেন, তাঁদের তল্লাশি করা করা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
গত লোকসভা ভোটে চন্দ্রকোনা বিধানসভার ফলাফলই জয় এনে দিয়েছিল আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থীকে। মার্জিন সামান্য হলেও লোকসভাটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল শাসক দল। এ বার লোকসভা ভোটে ব্যবধান বাড়িয়ে আগের ট্র্যাডিশন ধরে রাখতে তৎপর ঘাসফুল শিবির। গত বারের ছবিটা বদলাতে মরিয়া গেরুয়া শিবিরও। তাদের দাবি, চন্দ্রকোনায় এ বার পদ্ম ফুটবে।
পড়শি জেলা হুগলির লোকসভা কেন্দ্র এই আরামবাগ। তার অধীন ৭টি বিধানসভার মধ্যে ৬টিই হুগলির। শুধু চন্দ্রকোনা বিধানসভাটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অধীন। উনিশের লোকসভা ভোটে আরামবাগে তৃণমূল-বিজেপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত চন্দ্রকোনার উপরই জয়-পরাজয় নির্ভর করেছিল।
গত বার চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগে কখনও বিজেপি প্রার্থী এগিয়ে যাচ্ছিলেন তো কখনও আবার তৃণমূল প্রার্থী। শেষে আড়াই হাজারের মতো ব্যবধানে পদ্ম প্রার্থীকে হারিয়ে জিতেছিলেন তৃণমূলের অপরূপা পোদ্দার। আর সেই লিড এনে দিয়েছিল চন্দ্রকোনা। ফলে, এ বারও লোকসভার লড়াইয়ে চন্দ্রকোনার উপর বাড়তি নজর থাকছে যুযুধানের। চন্দ্রকোনার তৃণমূল বিধায়ক অরূপ ধাড়ার দাবি, “চন্দ্রকোনায় বিজেপির কোনও সংগঠন নেই। সারা বছর মানুষের পাশেও নেই। এ বার চন্দ্রকোনায় আমাদের লিড আরও বাড়বে।” বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক তথা চন্দ্রকোনা বিধানসভার আহ্বায়ক সুদীপ কুশারীর পাল্টা দাবি, “চন্দ্রকোনায় তৃণমূলের দুর্নীতিতে মানুষ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এ বার লোকসভা ভোটে তার জবাব দিবেন এলাকাবাসী।”
দু’টি ব্লক এবং তিনটি পুরসভা নিয়ে চন্দ্রকোনা বিধানসভা। রয়েছে ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতও। এমনিতে চন্দ্রকোনা ঐতিহাসিক শহর। গোটা শহর ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কয়েকশো বছরের পুরনো মন্দির। চন্দ্রকোনা নিয়ে প্রচলিত পংক্তি, ‘বাহান্ন বাজার-তিপান্ন গলি তবে জানলি চন্দ্রকোনায় এলি’।
এলাকাবাসীর ক্ষোভ, প্রায় হাফ ডজন লোকসভা ভোট এবং ততোধিক বিধানসভা ভোটের পরেও হাল ফেরেনি চন্দ্রকোনার। কৃষি প্রধান এলাকায় আনাজ সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ার দাবি বহুদিনের। মন্দিরময় চন্দ্রকোনাকে পর্যটন মানচিত্রে অন্তর্ভুক্তির দাবিও বহু পুরনো। দু’টির কোনওটিই পূরণ হয়নি। চন্দ্রকোনার গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট, প্রত্যন্ত গঞ্জে পানীয় জল নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে। চাষের জন্য বিভিন্ন এলাকায় অগভীর নলকূপ তৈরি এবং ভগবন্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় শিলাবতী নদীর উপর একাধিক স্থায়ী সেতুর কাজও শুরু হয়নি। ক্ষীরপাই এলাকায় কলেজ তৈরি নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে। বিধাসভা এলাকার দু’টি গ্রামীণ হাসপাতালের উন্নতিও হয়নি এতটুকু।
তবে ভোটের বাজারে এ সব প্রচারে নেই। রাজ্য সরকারের জনমুখী প্রকল্প এবং লক্ষ্মীর ভান্ডারে টাকা বাড়ানোর কথা জানাচ্ছে তৃণমূল। আর বিজেপির প্রচার জুড়ে থাকছে সন্দেশখালি। তবে পুড়শুড়ার সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আলু,পেঁয়াজ এবং টম্যাটোর ক্লাস্টার তৈরি এবং আনাজ সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ার কথা প্রতিশ্রুতি দিলেও বিজেপির প্রচারে সে সব ততটা গুরুত্ব পাইনি। আর সিপিএম বেকারত্ব এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে হাতিয়ার করে প্রচারে নেমেছে।
তবে এ সব সমস্যা বা ক্ষোভ-বিক্ষোভের প্রভাব তৃণমূলের ভোটের ফলে পড়েনি। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে চন্দ্রকোনা বিধানসভায় তৃণমূল প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ১,০৬,৮০০টি। পদ্ম প্রার্থী পেয়েছিলেন ১,০৩,১৬৯টি ভোট। বাম প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ১৪,৮২৭। একুশের বিধানসভা ভোটে চন্দ্রকোনায় তৃণমূল পায় ১,২১,৮৪৬টি ভোট। বিজেপি পেয়েছিল ১,১০,৫৬৫টি ভোট। চন্দ্রকোনা বিধানসভার তিনটি পুরসভা ও ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতও ঘাসফুলের দখলে।
ফলে, অঙ্কের ভরসাতেই জয় দেখছে তৃণমূল। আর বিজেপির আশা, অঙ্ক বদলাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy