E-Paper

জ্বালানির দাম ফেরত সভাধিপতির

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, উনি প্রায় তিন লক্ষ টাকা ফেরত দিয়েছেন জেলা পরিষদের তহবিলে।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৪ ০৯:৪৮
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

অভিযোগ উঠেছিল, গাড়ির জন্য অতিরিক্ত ডিজেল নিয়েছেন। জেলা পরিষদের বাজেট অধিবেশনে তৃণমূলেরই জেলার পরিষদ সদস্য শাহনাজ বেগম জেলা পরিষদের সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছিলেন। ২৫ হাজার কিলোমিটার পথ যাতয়াতের গাড়ির জ্বালানির দাম বাবদ প্রায় তিন লক্ষ টাকা ফেরত দিয়ে শাহনাজের অভিযোগকে কার্যত মান্যতা দিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি। তিনি তিন মাসে ৩ হাজার ১৭৮ লিটার অতিরিক্ত ডিজেলের দাম বাবদ প্রায় ২ লক্ষ ৯৮ হাজার ৬৫ টাকা জেলা পরিষদের তহবিলে ফেরত দিয়েছেন। ওই ডিজেলে প্রায় ২৫ হাজার কিলোমিটার গাড়ি চলাচল সম্ভব। যা নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে জেলা পরিষদের অন্দরে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) মহম্মদ সামসুর রহমান এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, উনি প্রায় তিন লক্ষ টাকা ফেরত দিয়েছেন জেলা পরিষদের তহবিলে।

তবে জেলা পরিষদের কংগ্রেসের দল নেতা আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, ‘‘সভাধিপতির দলের জেলা পরিষদ সদস্যই ভরা বৈঠকে অভিযোগ তুলেছিলেন অতিরিক্ত ডিজেল নেওয়া এবং জেলা পরিষদের তহবিল থেকে কলকাতার নামী হোটেল মোটা বিল মিটিয়েছেন বলে। তাই আমরা তথ্যের অধিকার আইন অনুযায়ী বিষয়টি প্রশাসনের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখনও তার উত্তর পাইনি। আমরা আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করব।’’

জেলা পরিষদের সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা বলেন, ‘‘এগুলি কিছু ব্যক্তিগত ইস্যু থাকে। সেটা সবাইকে প্রকাশ্যে বলা যায় না। আধিকারিকদের জানানো আছে। কোনও কারণে যদি আধিকারিকরাও (অতিরিক্ত ডিজেল) ব্যবহার করে থাকেন সেটা ফেরত দেওয়া যায়। সেটা কোনও সমস্যা নেই। আধিকারিকরাও অনেক সময় করেন। আমাদের ব্যক্তিগত কিছু কারণ‌ে যদি (ডিজেল নিয়ে থাকি) করে থাকি। সেটা ফেরত দিতে পারি। এটা কোনও দোষ না।’’ নাম না করে এই ইস্যুতে দলের জেলা পরিষদ সদস্য শাহনাজ বেগমের সমালোচনা করেছেন সভাধিপতি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘যে মহিলা বলছেন তাঁর দলের প্রতি আক্ষেপ আছে। তাঁর বর্তমানে কোনও অস্তিত্ব নেই। নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য কাউকে আঁকড়ে ধরে আলোচনায় থাকতে চাইছেন। এই মূহূর্তে সব থেকে হাইলাইটেড ফেস রুবিয়া সুলতানা। তাঁকে ধরেই তিনি নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে চাইছেন। এটা তুচ্ছ একটা ব্যাপার। এক জন সভাধিপতির কাছে কোনও ব্যাপারই নয়। সামান্য জিনিস। সে দেখাক না কোটি কোটি, লাখ লাখ টাকার দুর্নীতি।’’ তিনি এসব করছেন তো দলীয় নেতৃত্বকে বলছেন না কেন? রুবিয়া বলছেন, ‘‘দল সেগুলি জানে। বিগত দিন থেকে তিনি এই রকম। তাই দল তাঁকে দায়িত্ব দেয়নি। দল তাঁর বিরুদ্ধে ভিতরে ভিতরে ব্যবস্থা নিয়েছে। ওই জন্য সে কোনও পদে নেই।’’ যদিও শাহনাজ বেগম বলেন, ‘‘আমি যে প্রশ্ন তুলেছিলাম সেটা যে সত্যি তা তিনি নিজেই প্রমাণ করেছেন। ফলে তাঁর বাকি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না।’’

জেলা পরিষদের বাজেট অধিবেশনে অভিযোগ উঠেছিল সভাধিপতি ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এই তিন মাসে প্রায় ৬ হাজার লিটার ডিজেল নেন গাড়ির জ্বালানির জন্য। যা নিয়ে সে সময় খুব হইচই হয়েছিল। একই সঙ্গে কলকাতায় জেলা পরিষদের তহবিল থেকে মোটা টাকার হোটের বিল মেটানোর অভিযোগ উঠেছিল।

অভিযোগ ওঠার পরে গত মার্চে দু’টি গাড়ির নম্বর দিয়ে সভাধিপতি জেলা পরিষদের আর্থিক নিয়ামক ও হিসাব রক্ষক আধিকারিককে জানান, অফিসের কাজে সেই গাড়ি দু’টি তিনি ব্যবহার করেন। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে তিনি গাড়ি দু’টি কিছুটা ব্যবহার করেছেন।

সভাধিপতির দেওয়া হিসেব অনুযায়ী ২০২৩ সালের অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে মিলিয়ে তিন মাসে প্রায় ২৫ হাজার ৪৩৭ কিলোমিটার পথে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে গাড়িটি ব্যবহার করেছেন। যাতে ওই তিন মাসে অতিরিক্ত ডিজেল লেগেছে ৩ হাজার ১৭৮ লিটার। সেই বাবদ ২ লক্ষ ৯৮ হাজার ৬৫ টাকা তিনি ফেরত দিতে চান। সেই মতো টাকা ফেরত দিয়েছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Berhampore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy