E-Paper

কুড়মি প্রসঙ্গে ‘নীরব’, সভায় আদিবাসী চর্চা

পুরুলিয়া আসন দখলে তবে কি কুড়মি-ভোটের বদলে আদিবাসী ও দলিত ভোটই লক্ষ্য শাসকদলের, সভা শেষে শুরু হয়েছে চর্চা।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৫৬
হুড়ার লধুড়কায় তৃণমূলের জনসভায় হাজির ছিল খুদেরাও। রবিবার।

হুড়ার লধুড়কায় তৃণমূলের জনসভায় হাজির ছিল খুদেরাও। রবিবার। নিজস্ব চিত্র ।

মাস খানেক আগে পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক সভা থেকে কুড়মি সম্প্রদায়ের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। রবিবার হুড়া থানার লধুড়কায় লোকসভা ভোটের প্রচারে এসে কুড়মি প্রসঙ্গে তবে কার্যত নীরবই রইলেন তিনি। এক বার শুধু ছুঁয়ে গেলেন কুড়মিদের জাতিসত্তার দাবির প্রেক্ষিতে ভৌগোলিক সমীক্ষার প্রসঙ্গ। বরং, তাঁর বক্তব্যের অনেকটা জুড়ে ছিল দলিত তথা বাউরি সম্প্রদায় ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের কথা। ভোট-বৈতরণী পেরোতে তবে কি কুড়মি সম্প্রদায়ের পরিবর্তে আদিবাসী ও দলিত ভোটকে ‘টার্গেট’ করছে তৃণমূল, শুরু হয়েছে চর্চা। তৃণমূল নেতৃত্বের তবে দাবি, দলের প্রার্থীই যখন কুড়মি সম্প্রদায়ের, এ সব চর্চা অর্থহীন।

পুরুলিয়া কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোর সমর্থনে এ দিন হুড়ার লধুড়কার শিবমন্দির মাঠে সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে নিজের বক্তব্যে তিনি ছুঁয়েছেন আদিবাসীদের উন্নয়নে রাজ্যের নানা ভূমিকার প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, “মণিপুর জ্বলছে। আদিবাসীদের উপরে কী অত্যাচার হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাতেও তাই হচ্ছে। দলিত ভাইবোনেরা একমাত্র সম্মান পান আমাদের বাংলায়।” এর সঙ্গে হস্টেলে থাকা আদিবাসী ছেলেমেয়েদের ভাতা বাড়ানো, আদিবাসী মানুষদের বনজমির পাট্টা দেওয়া, সাঁওতালি ও কুরুক ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছে তৃণমূল সরকারই, দাবি করেন তিনি। তাঁর কথায়, “দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য তফসিলি, আদিবাসীরা ১০ লক্ষ টাকা ও বিদেশে গেলে কুড়ি লক্ষ টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন। এটা আমাদের সরকার করেছে।” সভার শেষ দিকে আদিবাসী মহিলাদের একটি দলের সঙ্গে ধামসাও বাজান তিনি।

পুরুলিয়া আসন দখলে তবে কি কুড়মি-ভোটের বদলে আদিবাসী ও দলিত ভোটই লক্ষ্য শাসকদলের, সভা শেষে শুরু হয়েছে চর্চা। পুরুলিয়া কেন্দ্রে কম-বেশি এক তৃতীয়াংশ কুড়মি সম্প্রদায়ের ভোট। এর বাইরে বিশাল ভোট অন্য সম্প্রদায়েরও আছে। তৃণমূলেরই করা সমীক্ষা অনুযায়ী, ওই কেন্দ্রে আদিবাসী ভোট রয়েছে ১৮.৪ শতাংশ। তফসিলি জাতিভুক্ত ভোট ১৮.৫ শতাংশ এবং মাহাতো বাদে অন্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের ভোটার রয়েছেন ১৭.১৫ শতাংশ। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মত, শাসক ও বিরোধী দলগুলি কুড়মি সম্প্রদায়ের সমর্থন হাতছাড়া না করতেই মাহাতো সম্প্রদায় থেকে প্রার্থী করেছে। জাতিসত্তার দাবিতে আন্দোলন করা আদিবাসী কুড়মি সমাজ থেকে প্রার্থী হয়েছেন সমাজের মূল মানতা অজিত মাহাতোও। সব মিলিয়ে কুড়মি সম্প্রদায়ের ভোট ভাগাভাগি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এই পরিস্থিতিতে আদিবাসী ও তফসিলি জাতিভুক্ত প্রায় ৩৭ শতাংশ ভোট ঘরে তুলতে চাইছে শাসকদল। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, “আমার বাড়িতে যে মেয়েটা আমার সঙ্গে এক বিছানায় শোয়, এক সঙ্গে থাকে, সেই মেয়েটির পদবি হচ্ছে বাউরি।” পুরুলিয়া কেন্দ্রে বাউরি ভোটের সংখ্যা দু’লক্ষের বেশি। তাঁর কথা বাউরিদের আবেগকে ছুঁয়ে যেতেই, মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

বিজেপির রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “তৃণমূল যে কুড়মিদের সমর্থন চায় না, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই ওরা জাতপাতের রাজনীতি করছে। আমাদের স্লোগান পরিষ্কার—সবকা সাথ সবকা বিকাশ।” অজিত বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ওঁর মনের কথা ছিল না। এ দিনের সভার পরে তা স্পষ্ট হয়েছে। আমাদের মনে হচ্ছে, উনি (মুখ্যমন্ত্রী) একটি বিশেষ শ্রেণিকে নিয়েই চলতে চাইছেন।” পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার যদিও দাবি, “দলনেত্রী তো কুড়মি সমাজের প্রতিনিধিকেই প্রার্থী করেছেন। যাতে তিনি জয়ী হয়ে কুড়মিদের দাবি-সহ অন্য সকলের সমস্যার কথাও তুলে ধরতে পারেন। কুড়মিদের সমর্থনের দলের দরকার নেই, এ
কথার মানে হয় না।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Kurumi Community Mamata Banerjee

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy