Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Md Salim

বঙ্গ সিপিএমের ইতিহাসে দ্বিতীয় নাম সেলিম, রাজ্য সম্পাদক পদে থেকে আর একজনই লড়েছেন ভোটে

সিপিআই থেকে সিপিএম তৈরির পর ৬০ বছরে সেলিমকে নিয়ে সাত জন রাজ্য সম্পাদক হয়েছেন। কিন্তু এক জনই কেবল রাজ্য সম্পাদক থাকাকালীন ভোটে লড়েছিলেন।

MD Salim is contesting Election as second CPM\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s state secretary

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

শোভন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৪ ২১:১২
Share: Save:

১৯৬৪ সালে সিপিএম তৈরির পর নজিরবিহীন ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। সে বার সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের চেয়ারে থেকেও বিধানসভা ভোটে নারায়ণগড় থেকে লড়াই করেছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি তখন ছিলেন বিরোধী দলনেতাও। তার পর সিপিএমের দ্বিতীয় রাজ্য সম্পাদক হিসেবে ভোটে লড়তে নামছেন মহম্মদ সেলিম। শনিবার মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের জন্য সিপিএম প্রার্থী হিসেবে সেলিমের নাম ঘোষণা করলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।

সিপিআই ভেঙে সিপিএম তৈরির পর দলের প্রথম রাজ্য সম্পাদক হন প্রমোদ দাশগুপ্ত। ১৯৬৪ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছিলেন তিনি। কিন্তু কখনও সংসদীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। ১৯৮২ সালে প্রমোদের মৃত্যুর পর সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সরোজ মুখোপাধ্যায়। টানা ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সেই পদে ছিলেন সরোজ। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত তদানীন্তন কাটোয়া লোকসভার সাংসদ ছিলেন তিনি। কিন্তু রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পর কখনও ভোটে দাঁড়াননি।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

সরোজের মৃত্যুর পর সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন শৈলেন দাশগুপ্ত। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত আমৃত্যু শৈলেন ছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক। কিন্তু রাজ্য সম্পাদক থাকাকালীন শৈলেনও কখনও ভোটে দাঁড়াননি। তার প্রয়াণের পর সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব গিয়েছিল অনিল বিশ্বাসের হাতে। ২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে অনিল আকস্মিক ভাবে প্রয়াত হয়েছিলেন। আমৃত্যু তিনিও ছিলেন রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্বে। অনিলও কখনও ভোটে দাঁড়াননি। অনেকে বলেন, অনিলের মৃত্যুর পরেই সিপিএমের সংগঠন ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে। তাঁর সাংগঠনিক প্রতিভা নিয়ে তারিফ করেন বিরোধী শিবিরের নেতারাও।

অনিলের মৃত্যুর পর সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব গিয়েছিল তাঁর অভিন্নহৃদয় বন্ধু বিমান বসুর কাঁধে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিমানই ছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক। বিমানও কখনও ভোটে দাঁড়াননি। ঘরোয়া আলোচনায় শ্লাঘার সঙ্গেই সে কথা জানান বিমান। তাঁকে আটের দশকের গোড়ায় লোকসভা ভোটে পশ্চিমাঞ্চল থেকে প্রার্থী হতে বলেছিলেন তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক প্রমোদ। কিন্তু সে প্রস্তাব ফিরিয়ে বিমান জানিয়েছিলেন, তিনি সংগঠনেই থাকতে চান। তা-ই রয়ে গিয়েছেন তিনি।

২০১৫ সালে বিমান অব্যাহতি নেওয়ার পর রাজ্য সম্পাদকের ভার যায় সূর্যকান্তের কাঁধে। ২০১১ সালে বাম সরকার পতনের পর বিরোধী দলনেতা হয়েছিলেন সূর্য। একসঙ্গে দু’টি দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে ২০১৫ সালে সিপিএমে বিস্তর আলোচনা হয়েছিল। দলের একটি অংশ প্রবল ভাবে চেয়েছিল গৌতম দেবকে রাজ্য সম্পাদক করতে। কিন্তু যে হেতু তার আগেই সূর্যকান্ত দলের পলিটব্যুরোর সদস্য হয়েছিলেন, তাই তাঁকেই রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সূর্যকান্ত রাজ্য সম্পাদক হওয়ার এক বছরের মধ্যে বিধানসভা ভোট এসে পড়ে। তাঁর লড়া, না-লড়া নিয়ে চুলচেরা আলোচনা করেছিল সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী। কিন্তু শেষমেশ সিদ্ধান্ত হয়, বিদায়ী বিরোধী দলনেতা ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে ভুল বার্তা যাবে।

২০২২ সালের মার্চে সূর্যকান্তের হাত থেকে রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পান সেলিম। এ বার তিনিও ভোটে লড়ছেন। সেলিম আগে রাজ্যসভা ও লোকসভার সাংসদ ছিলেন। রাজ্যের মন্ত্রীও ছিলেন কয়েক বছর। ফের ভোটের ময়দানে তিনি। নাম ঘোষণার পর শনিবারই শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে মুর্শিদাবাদের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন তিনি।

২০১৬ সালে সূর্যকান্ত নারায়ণগড়ে পরাস্ত হয়েছিলেন তৃণমূলের সূর্য অট্টের কাছে। সেলিম কি সেই ‘রেকর্ড’ ভেঙে সংসদীয় নির্বাচনে জয়ী প্রথম রাজ্য সম্পাদক হতে পারবেন? উত্তর মিলবে আগামী ৪ জুন।

কিন্তু ক্ষমতা হারানো বঙ্গ সিপিএমের এই রীতিবদলের মধ্যে অনেকে সাংগঠনিক দুর্বলতাই খুঁজে পাচ্ছেন। রাজ্য সম্পাদক ভোটে লড়বেন না, এই রীতি ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই সিপিএমে ছিল। সাংগঠনের শীর্ষ দায়িত্বে থাকা রাজ্যনেতাকে সংসদীয় রাজনীতির চাপ থেকে মুক্ত রাখা এক দিকে যেমন ছিল উদ্দেশ্য, তেমনই দলের মধ্যেকার সংসদীয় এবং রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কাজের জন্য দুই আলাদা কাঠামোকে রেখে দেওয়া হত। কিন্তু ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরেই দেখা গেল, পর পর দু’জন রাজ্য সম্পাদককে ভোটের ময়দানে নামতে হচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, যা কিছুটা সিপিএমের সাংগঠনিক অপারগতা এবং দৈন্যেরই পরিচয়। না হলে এমনটা হবে কেন?

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE