Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

ধানের খেত কেড়ে তৈরি হয়েছে ভেড়ি, জমি থেকেও ওঁরা জমিহারা

ভোট নয়, দেগঙ্গার চাষিদের চিন্তা ভূমি নিয়ে। যা চলে গিয়েছে দুর্বৃত্তদের গ্রাসে। ফেরত কি পাবেন তাঁরা?

দেগঙ্গা অঞ্চলে এই ভেড়ির নীচেই এক সময়ে ছিল ধানজমি।

দেগঙ্গা অঞ্চলে এই ভেড়ির নীচেই এক সময়ে ছিল ধানজমি। —নিজস্ব চিত্র।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৪ ০৫:০৩
Share: Save:

শিল্প না হলেও সিঙ্গুরে চাষের জমি ফিরে পেয়েছেন চাষিরা। কিন্তু তৃণমূলের আমলেই চাষের জমি দখল করে ভেড়ি বানিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে দেগঙ্গায়। ক্ষুব্ধ চাষিদের অভিযোগ, জমির মালিক হয়েও আজ তাঁরা জমিহারা। তাঁদের দাবি, গত কয়েক বছরে ২০০ থেকে ২৫০ বিঘে ধান চাষের জমির মাটি কেটে সেগুলি জোর করে ভেড়িতে পরিণত করেছেন প্রভাবশালীরা। ডাক (পড়ুন নিলাম) না হওয়ায় অনেক বছর ধরে টাকাও পান না তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসন, সব স্তরে অভিযোগপত্র জমা দিয়েও পরিস্থিতি বদলায়নি। চরম অবহেলার শিকার হয়ে হারানো জমি ফেরতের ব্যবস্থা করার আর্জি জানিয়ে লোকসভা ভোটের আগে আবারও উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক থেকে শুরু করে জেলার ভূমি রাজস্ব বিভাগের কাছে গণস্বাক্ষর করে চিঠি দিয়েছেন চাষিদের কয়েক জন।

বারাসত ও বসিরহাট— এই দুই লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে দেগঙ্গা অঞ্চলে রয়েছে কালিয়ানি বিল। বাম আমলে সেখানে অনেকগুলি জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল শিল্পের জন্য। নন্দীগ্রামের ঘটনার কাছাকাছি সময়ে বাম সরকারের সেই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেগঙ্গায় গিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল তৃণমূল। গ্রামের মানুষের বক্তব্য, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের কায়দায় তৃণমূল নেতৃত্বের আন্দোলনের জেরেই সেই সময়ে দেগঙ্গায় চাষের জমি রক্ষা পায়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে প্রায় ২৫০ বিঘে চাষের জমি ভেড়িতে পরিণত করে জমি-মাফিয়ারা দখল করে নিয়েছে সেই দেগঙ্গাতেই।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

চাষিদের অভিযোগ, ২০১৫ সাল থেকেই ধীরে ধীরে তাঁদের জমির মাটি কেটে সেগুলি ভেড়ি বানিয়ে ফেলা হয়েছে। মিসকিল আলি নামে এক চাষি জানালেন, তাঁর প্রায় সাত বিঘে জমি পড়ে রয়েছে নোনা জলের তলায়। তাঁর কথায়, ‘‘প্রশাসনের কাছে দরবার করা হয়েছে। ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও জমি দখলমুক্ত করা যায়নি। জনপ্রতিনিধিরা সবই জানেন। পুলিশও সব জানে। পাঁচ-ছ’বছর আগে এক বার ভেড়িতে ডাক হয়েছিল। সেই সময়ে কিছু টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এখন টাকা চাইতে গেলে হুমকির মুখে পড়তে হয়।’’

ক্ষুব্ধ ও হতাশ চাষিরা জানালেন, ওই সমস্ত জমিতে আমন এবং বোরো ধানের চাষ হত। অভিযোগ, তৃণমূলের নেতাদের একাংশই বেশি লাভের টোপ দিয়ে নিচু জমিতে ধান চাষের বদলে ভেড়ি তৈরি করে মাছ চাষের প্রস্তাব দেন। এক চাষির কথায়, ‘‘সেই সময়ে লাভের আশায় চাষিরা জমি দিয়েছিলেন। সেই সমস্ত জমিই আজ দখল করে নিয়েছেন প্রভাবশালীরা। যাঁরা জমি দিতে চাননি, তাঁদের জমির আশপাশে এমন ভাবে খাল কেটে নোনা জল ঢোকানো হয়েছে যে, সেই জমি ধান চাষের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে। গভীর ভাবে খাল কেটে দেওয়ায় নিজেদের জমিতে যেতেই পারতেন না চাষিরা। এ ভাবেই বিঘের পর বিঘে জমি দখল করা হয়েছে।’’

বারাসত থেকে টাকি রোড ধরে দেগঙ্গায় পৌঁছে দেখা গেল, সেই কালিয়ানি বিল এলাকা, দোগাছিয়া, কালিয়ানি, একরুল্লা, বিশ্বনাথপুরের মতো বিভিন্ন মৌজায় ধানজমি কেটে ভেড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এমনই অভিযোগ চাষিদের। জমির মালিক হয়েও এখন তাঁরা জমিহারা। ওই সব মৌজা বিশ্বনাথপুর ও বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। যদিও বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ তথা ওই কেন্দ্রের প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদারের পাল্টা দাবি, চাষের জমিতে কেউ ভেড়ি তৈরি করেননি। বরং চাষিরাই নিজেদের জমি বেসরকারি সংস্থার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। কাকলির দাবি, ‘‘চাষের জমিতে কেউই ভেড়ি তৈরি করেননি। চাষিরা কেউ কেউ নিজেদের জমি বেসরকারি সংস্থাকে বিক্রি করে দিয়েছেন। সেখানে তারা দেওয়াল তুলে দেওয়ায় মাছ চাষের মতো সমস্যা হচ্ছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথাবার্তা বলছি। সমস্যার সমাধানে সময় লাগবে।’’

তবে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ পদপ্রার্থী তথা হাড়োয়ার তৃণমূল বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলাম স্বীকার করেছেন যে, জমি নিয়ে ওই এলাকায় সমস্যা আছে। তবে হাজি বলছেন, ‘‘ওই এলাকার চাষিরা আমাকে সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। আমি ওঁদের বলেছিলাম, পুলিশের সঙ্গে দু’পক্ষকে বসিয়ে সমস্যার সমাধান করে দেব। কিন্তু চাষিরাই আসেননি। তা-ও আমি বলছি, লোকসভা ভোট মিটে যাওয়ার পরে চাষিরা যদি চান, সমস্যার সমাধানে চেষ্টা করা হবে।’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE