চিংড়ির মালাইকারি রান্নায় কলকাতার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের একদা বিশেষ খ্যাতি ছিল। এই রান্নার জন্য আপনাকে তেল আর ঘি মিশিয়ে কড়াইয়ে দিতে হবে। তার মধ্যে গরম মশলা, নুন আর আদাবাটা দিয়ে কষিয়ে হলুদ আর লঙ্কাগুঁড়ো জলে গুলে ঢেলে দিয়ে তার মধ্যে চিংড়িমাছগুলি ফেলতে হবে। আগে থেকে চিংড়িতে নুন হলুদ মাখিয়ে রাখবেন। এর মধ্যে কাজুবাদাম বাটা, চিনি আর নারকেলের দুধ দিয়ে দশ মিনিট ভাপালেই মুখরোচক এই রান্না পরিবেশনের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠবে।
শোভাবাজার রাজবাড়ির আলুরদম
শোভাবাজার রাজবাড়িতে লুচির সঙ্গ দিত এক বিশেষ আলুর দম। এই আলুর দমের রন্ধন-রহস্য নাকি বংশ পরম্পরায় চলে আসছে। শোনা যায়, বাড়ির গিন্নিরা এই আলুর দমে দিতেন বিশেষ এক ধরনের মশলা। যার মধ্যে থাকত শুকনো লঙ্কা, সাদা জিরে গোটা, গোটা ধনে, গরম মশলা, দারচিনি, লবঙ্গ, ছোট এলাচ। এগুলো আগে শুকনো খোলায় ভেজে গুঁড়িয়ে নিতে হয়। এই মশলা আলুর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার পর ছড়িয়ে দিতে হবে আমচুর। তা হলে হয়তো এই আলুর দমই ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে রাজা স্যর রাধাকান্ত দেবের আমলে।
ঠাকুরবাড়ির দই পোয়া আর পোস্ত মাংস
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির প্রায় প্রত্যেকেই ছিলেন ভোজনবিলাসী। শোনা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর হাতের মানকচুর জিলিপি, দইয়ের মালপো, পাকা আমের মিঠাই কিংবা চিঁড়ের পুলির ভক্ত ছিলেন সবাই। ঠাকুরবাড়ি-স্পেশাল তিন ইঞ্চি ব্যাসের লুচিরও আদতে উৎপত্তি নাকি তাঁরই হেঁশেল থেকে। ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীও বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছিলেন মুখরোচক কিছু রন্ধন প্রণালী, যা পরে ঠাকুর পরিবারের রান্নার মধ্যে ঢুকে পড়ে। এরই মধ্যে একটি হল দই পোয়া। ময়দায় তেল দিয়ে ময়ান তৈরি করে দই ভাল করে ফেটিয়ে তাতে ধীরে ধীরে ময়দা মেশাতে হবে এই রান্নার জন্য। এবং ১ কাপ চিনিতে আধ কাপ জল দিয়ে ঘন সিরা তৈরি করতে হবে। এবারে কড়াইতে ঘি ও তেল গরম হওয়ার পর মালপোয়ার মতো ভেজে তুলে নিতে হবে। এ বারে চিনির রসে এলাচগুঁড়ো মিশিয়ে ভেজে রাখা পোয়ার ওপর ঢেলে পরিবেশন করলেই কেল্লা ফতে।
পোস্ত দিয়ে মাংসও কিন্তু ঠাকুর পরিবারের বিশেষ প্রিয় একটি পদ। খাসির মাংসে পেঁয়াজ, রসুন ও আদা বাটা মাখিয়ে নিয়ে কড়াইয়ে তেল দিয়ে তাতে গোটা গরম মশলা, জিরে বাটা ও পোস্ত বাটা দিন। মশলা একটু কষা হলে মাংস দিন। অল্প জল দিয়ে সেদ্ধ করুন। মাখো মাখো হলে নামিয়ে নিন। সুগন্ধি চালের ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন এই পদ।