Advertisement
০৪ মে ২০২৪

গণহত্যার স্বীকৃতি চায় বাংলাদেশ

একাত্তরের ২৫ মার্চ সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যার সেই কালো রাতের পর বেজিং যাওয়ার কথা ছিল পাকিস্তানের বিদেশসচিব সুলতান মহম্মদ খানের। তিনি সেনাপ্রধানের কাছে জানতে চান, কত জন বাঙালি মারা গিয়েছে?

শ্রদ্ধায়: গণহত্যা দিবসে শহিদদের স্মরণে আগরতলার একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আসা শিল্পীরা। শনিবার। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী

শ্রদ্ধায়: গণহত্যা দিবসে শহিদদের স্মরণে আগরতলার একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আসা শিল্পীরা। শনিবার। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৭ ০২:৪৯
Share: Save:

একাত্তরের ২৫ মার্চ সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যার সেই কালো রাতের পর বেজিং যাওয়ার কথা ছিল পাকিস্তানের বিদেশসচিব সুলতান মহম্মদ খানের। তিনি সেনাপ্রধানের কাছে জানতে চান, কত জন বাঙালি মারা গিয়েছে? জবাব আসে ৪০ জন। মন্ত্রী ধমক দিয়ে বলেন, ঢাকায় চিনের দূতাবাস রয়েছে। তারা নিজের চোখে সব দেখছে। এই সংখ্যা তারা বিশ্বাস করবে ভেবেছো? তখন ইতস্তত করে সামরিক কর্তা জবাব দেন— তা হলে ২৫ হাজার!

আজ নয়াদিল্লির বাংলাদেশ হাই কমিশন দফতরে ‘গণহত্যা দিবস’ স্মরণ অনুষ্ঠানে উঠে এল এমন অনেক প্রসঙ্গ। ওই লজ্জার ইতিহাসকে মনে করিয়ে দিয়ে হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি দাবি তুললেন, ‘‘রাষ্ট্রপুঞ্জ ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দিক।’’ সে রাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নাম দিয়ে চালানো হয়েছিল নির্বিচার হত্যালীলা। ঢাকার সরকারি হিসাব বলছে, পর পর তিনদিনে অন্তত ৫০ হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। অবাধে চলে লুঠপাট এবং ধর্ষণ। এক কোটি মানুষ পালিয়ে চলে এসেছিলেন ভারতে।

মোয়াজ্জেম আলির কথায়, ‘‘এই রক্তাক্ত ইতিহাসকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। অন্য সব কিছুর মতোই যুদ্ধেরও আইনকানুন রয়েছে। নিরাপরাধদের হত্যা করা যুদ্ধের নীতিবিরুদ্ধ। লড়াই হয় দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান যা করেছে, তা যুদ্ধাপরাধের সেরা উদাহরণ।’’

সেই হত্যাকাণ্ডের দুর্লভ সব ছবি এ দিন প্রদর্শন হয় কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনের দফতরে। আলোচনা সভায় ডেপুটি হাই কমিশনার জকি আহাদ বলেন, ‘‘এক দিনে এত মানুষ আর কোনও দিনে গণহত্যার শিকার হয়নি। এই দিনটির আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি তাই প্রাপ্য।’’ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সে সময়ের সাড়া জাগানো সব গানে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

সেই গণহত্যার পরে সব চেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গে। আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী মিশনে গাছ পুঁতে গণহত্যা দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হয়। রবীন্দ্র শতবার্ষিকী হলের সামনে মোমবাতি জ্বেলে সে দিনের শহিদদের স্মরণ করেন বাংলাদেশ থেকে আসা শিল্পী ও বিশিষ্ট জনেরা। এই প্রথম বিদেশের সব কূটনৈতিক ভবনে গণহত্যা দিবস পালন করে বাংলাদেশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh Mass Killing Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE