অর্থনীতি অস্থির। চলমান চিত্র। ভাঙা-গড়া, ওঠা-পড়া, আরোহ অবরোহ। আবহমান কাল এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না। পিছলে নেমে এলে, ঠেলে তুলতে হয়। উঠলে আরও ওঠানোর তৎপরতা। বাংলাদেশের অর্থনীতি ঊর্ধ্বমুখী। বার্নার্ড শ’ বলতেন, নিজের ঢাক না পেটালে কে পেটাবে। তার দরকার নেই বাংলাদেশের। রাষ্ট্রপুঞ্জের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অব ট্রেড অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের রিপোর্টই তাদের সাফল্যের দলিল। উন্নতির কারণ বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি। পাঁচ বছর ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বিনিয়োগের হার। ২০১১তে ১১৯ কোটি ডলার, ২০১২তে ১৩০ কোটি, ২০১৩তে ১৬০ কোটি, ২০১৪তে ১৫৩ কোটি, ২০১৫তে হাই জাম্পে একেবারে ২২৩ কোটি ডলারে। বাংলাদেশি টাকায় ১৭ হাজার ৩৯৪ কোটি। বিদেশিরা নিশ্চয় টাকা জলে ফেলেননি। অনেক অঙ্ক কষে বিনিয়োগ। মুনাফার গ্যারান্টি পেয়েই বাংলাদেশে ঝোঁক। বিনিয়োগ বৃদ্ধি ৪৬ শতাংশ। কম কথা নয়। বিশ্ব বাজার খুব চাঙ্গা বলা যায় না। মন্দা কিছুটা কাটিয়ে উঠলেও, ধূসর ছায়া। কোনও সংস্থা এক পা এগোতে দশবার ভাবে। তা সত্ত্বেও বিনিয়োগ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ।
অন্য দেশ বাংলাদেশকে নিয়ে যতটা ভাবছে, ভারত ততটা নয়। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে তাদের বিনিয়োগ অনেক বেশি হওয়ার কথা ছিল। হয় নি। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের নিরিখে ভারতের স্থান সপ্তম। দূরের দেশ বিনিয়োগ করে যাবে, ভারত দেখবে, সেটা হয় কী করে! উদ্যোগে টান কেন। মুখে কথার ফুলঝুরি। কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা। আশাবাদী বাংলাদেশ। সেই আশার মেঘ যাতে ঠিকঠাক সঞ্চারিত হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে ভারতকে।
পাশে আছি, হাসিনাকে আশ্বাস মোদীর
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আমেরিকার, ৫৭ কোটি ডলার। ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে দ্বিতীয় স্থানে ব্রিটেন। সিঙ্গাপুর তৃতীয়, বিনিয়োগ ১০ কোটি ডলার। চতুর্থ দক্ষিণ কোরিয়ার অবদান ১৫ কোটি। পঞ্চম হংকং ১৪ কোটি। ষষ্ঠ মালয়শিয়া, ১১ কোটি। সপ্তম ভারত, বিনিয়োগ ১০ কোটি ডলার। বিদেশি সংস্থার বেশি ভরসা এখন বাংলাদেশ। পিছিয়ে পড়ছে পাকিস্তান। তাদের ওপরে এখন বাংলাদেশের স্থান। পাকিস্তানকে টপকে যাওয়ায় বিস্মিত বিশ্ব। পাকিস্তান অনেক পুরোন দেশ। ১৯৪৭এ জন্ম। তুলনায় বাংলাদেশ নবীন। আত্মপ্রকাশ ১৯৭১এ। তবুও বাংলাদেশের সঙ্গে পেরে উঠছে না পাকিস্তান।
বাংলাদেশে অতিরিক্ত বিনিয়োগ বিদ্যুৎ সার জ্বালানিতে, ৫৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। দ্বিতীয় বিনিয়োগ পোশাক বস্ত্র শিল্পে, ৪৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ ব্যাংকিংয়ে, ৩১ কোটি ডলার। বিনিয়োগ আরও বাড়বে। চুক্তি ৩১টি দেশের সঙ্গে। এক বছরের মধ্যে তার ফল পাওয়া যাবে।
উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বাড়েনি। এখনও বিনিয়োগ টানায় এগিয়ে আমেরিকা। দ্বিতীয় হংকং, তৃতীয় চীন। আগের বছর চীন ছিল এক নম্বরে। বিনিয়োগের আকর্ষণ তৈরি করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বাংলাদেশে সেটা আছে। শান্তির পরিবেশ উৎপাদনে বাধা নেই। বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। জ্বালানিও অঢেল। যোগাযোগ মসৃণ, প্রবল বেগে মাথা তুলেছে গণতন্ত্র। আর কী চাই। বিনিয়োগে পছন্দের দেশ, বাংলাদেশ। বিদেশী বিনিয়োগে উন্নয়নের রাস্তা ক্রমশ প্রশস্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy