Advertisement
১১ মে ২০২৪

রাজ্যকে বাঁচিয়ে রোয়ানু আছড়ে পড়ল চট্টগ্রামে, মৃত বেড়ে ১৯, জখম শতাধিক

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলে আছড়ে পড়ল ঘূর্নিঝড় রোয়ানু। স্থলভাগে ঢোকার আগেই অবশ্য শক্তি হারিয়ে অনেকটা দুর্বল হয়ে গিয়েছিল এই সাইক্লোন। ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে ভারতীয় সময় দুপুর ১টা নাগাদ বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়েছে রোয়ানু। শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়ায় প্রবল বর্ষণ এবং ঝোড়ো হাওয়ায় গাছ পড়ে, ঘরবাড়ি ভেঙে বাংলাদেশের উপকূল এলাকায় এ পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। পশ্চিমবঙ্গে এখনও বড় ক্ষয়ক্ষতির কোনও খবর নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ১৮:৩৪
Share: Save:

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলে আছড়ে পড়ল ঘূর্নিঝড় রোয়ানু। স্থলভাগে ঢোকার আগেই অবশ্য শক্তি হারিয়ে অনেকটা দুর্বল হয়ে গিয়েছিল এই সাইক্লোন। ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে ভারতীয় সময় দুপুর ১টা নাগাদ বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়েছে রোয়ানু। শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়ায় প্রবল বর্ষণ এবং ঝোড়ো হাওয়ায় গাছ পড়ে, ঘরবাড়ি ভেঙে বাংলাদেশের উপকূল এলাকায় এ পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। পশ্চিমবঙ্গে এখনও বড় ক্ষয়ক্ষতির কোনও খবর নেই।

বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রম উপকূলের সন্দ্বীপ, হাতিয়া, কুতুবদিয়া, সীতাকুণ্ড ও ফেনি উপকূল দিয়ে স্থলভাগে ঢুকেছে। চট্টগ্রাম, ফেনি, ভোলা-সহ বিভিন্ন জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে যে নিচু এলাকা রয়েছে, প্রবল জলোচ্ছ্বাসে সে সব এলাকা এখন জলমগ্ন। প্রবল বৃষ্টির জেরে দুর্গত হয়ে পড়েছে আরও অনেক এলাকা। উপকূল অঞ্চল পেরনোর সময় ভারী বর্ষণের জেরে সাইক্লোন রোয়ানুর শক্তি আরও কমছে বলে বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

তবে চট্টগ্রাম উপকূলের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় এখন যথেষ্টই দুর্বল হয়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু। তা স্থলভাগে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, রোয়ানু শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে চট্টগ্রামের কাছ দিয়ে উপকূল ছেড়ে ভারতের ত্রিপুরা-মিজোরামের দিকে চলে গেছে। ফলে চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং কক্সবাজারে ‘সতর্ক সংকেত’ না দিয়ে ‘তিন নম্বর সতর্ক সংকেত’ দেখাতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ শেষ পর্যন্ত শক্তি হারালেও, সেটি উপকূলের দিকে এগনোর সময় থেকেই বাংলাদেশের ভোলা, পটুয়াখালি, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারে প্রবল ঝোড়ো হাওয়া চলছিল। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া সেই ঝড়ে অনেক ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে, উপড়ে গিয়েছে বড় বড় গাছ। দুর্যোগে ইতিমধ্যেই ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোয়ানুর প্রভাবে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার পরও মনে হয়েছিল খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে না বাংলাদেশে। দুপুরের মধ্যেই ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর এলেও, ক্ষয়ক্ষতি খুব বাড়বে বলে আশঙ্কা ছিল না। কিন্তু বিকেলের দিকেই খবর আসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯-এ পৌঁছেছে। সন্ধ্যা পৌনে সাতটা পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, সাইক্লোনের তাণ্ডবে বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা ১৯-এ পৌঁছে গিয়েছে। এঁদের মধ্যে কারও মৃত্যু হয়েছে গাছ চাপা পড়ে, কারও মৃত্যু হয়েছে ঘরবাড়ি ধসে, কেউ আবার জোয়ারের জলে ভেসে গিয়েছেন। উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে শতাধিক মানুষ জখম হয়েছেন।

পরে মেঘনা মোহনা, নোয়াখালি, কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, সীতাকুণ্ড উপকূল হয়ে রোয়ানু উত্তর দিকে চলে যায়। তবে রোয়ানুর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চল সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় আগামী কাল, রবিবার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

শনিবার পটুয়াখালির খেপুপাড়ায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। পরিমাণ ছিল ২৫২ মিলিমিটার। এ ছাড়া পটুয়াখালিতে ১৯৬, বরিশালে ২৩০, ভোলায় ২০৯, মংলায় ১২৫, নোয়াখালির মাইজী কোর্ট এলাকায় ১৮১, ফেনিতে ১৪৬, মাদারিপুরে ১২৬, ও ঢাকায় ৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, রোয়ানু শনিবার সকাল ন’টা নাগাদ ছিল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। একই সময়ে সেটি মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে আর পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে। কক্সবাজার থেকে সেটি ছিল ১৩৫ কিলোমিটার পশ্চিমে। এর পর এটি বরিশাল, বরগুনা উপকূল হয়ে চট্টগ্রামের দিকে চলে যায়।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালি, লক্ষ্মীপুর, ফেনি, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালি, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা আর তার প্রায় লাগোয়া দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার-পাঁচ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় শনিবার সকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বিকেলের দিকে সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস থাকায় মৎস্যজীবীদের সমু্দ্রে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল আগেই। ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। তৈরি রাখা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দলও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE