Advertisement
E-Paper

ভিসা দিতে অকারণে বেশি কড়াকড়ি করছে ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস

ঢাকার গুলশন থেকে যিনি ফোন করেছিলেন তিনি মাতৃসমা । বছরের বেশির ভাগ সময়টা থাকেন আমেরিকায় মেয়ের কাছে। ঢাকায় এলে কলকাতা দেখতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। ঢাকা থেকে আনেন ইলিশ, পোড়াবাড়ির চমচম, চমৎকার শার্টস।

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১২:০৫
ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

ঢাকার গুলশন থেকে যিনি ফোন করেছিলেন তিনি মাতৃসমা । বছরের বেশির ভাগ সময়টা থাকেন আমেরিকায় মেয়ের কাছে। ঢাকায় এলে কলকাতা দেখতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। ঢাকা থেকে আনেন ইলিশ, পোড়াবাড়ির চমচম, চমৎকার শার্টস। পুত্র স্নেহের প্রত্যক্ষ নিদর্শন। তাঁর স্বামী ছিলেন বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিব। এ বছর সেরা রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদকে ভূষিত। বর্তমানে প্রথম সারির দৈনিকে উপদেষ্টা সম্পাদক। সেই স্নেহশীলা জননী বিষণ্ণ গলায় জানালেন, না, এ বার কলকাতায় যাওয়া হল না। ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস ভিসা নামঞ্জুর করেছে। পুরোন পাসপোর্টটা দেখাতে পারিনি তাই। নতুন পাসপোর্টে আমেরিকা ভিসা দিল, ভারত না করল। তদ্বিরের সময় নেই। আমেরিকা যাচ্ছি। ফিরে আবার চেষ্টা করব। বললাম, দুর্ভাগ্য, মাতৃদর্শনে বঞ্চিত হলাম।

এ যে কত বড় লজ্জা, ভারতীয় দূতাবাসের ভিসা অফিসার কী বুঝবেন! দূতাবাসের প্রধান কাজ ভিসা দেওয়া। দিনে তিন হাজার ভিসা ইস্যু হয়। যাঁরা পান তাঁদের ভোগান্তির শেষ নেই। ছ’মাস আগে অন লাইনে আবেদন। কবে ডাক পাবে অজানা। ডাক পেয়েও প্রশ্নবাণে জর্জরিত। চিকিৎসার জন্য যাঁদের যাওয়ার তাড়া, তাঁরাও অসহায়। অসীম ধৈর্যের পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরাও বিপাকে পড়েন। সেশন তাঁদের জন্য থেমে থাকে না। প্রতীক্ষায় আগ্রহ হারান পর্যটকরা।

আরও খবর- মির কাসেমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা নিয়ে মুখ খুলল তুরস্ক

১ জুলাই গুলশনে নাশকতার পর দূতাবাস সতর্ক। মিহি জালে সন্ত্রাসী ধরার প্রয়াস। তারা বোঝে না, সন্ত্রাসীরা পাসপোর্ট ভিসার পরোয়া করে না। গুলশন হামলার নেপথ্য নায়ক তামিম আহমেদ চৌধুরী নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়ার আগে নির্বিঘ্নে মুর্শিদাবাদ যাতায়াত করেছে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই। বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্টে তিন হাজার টাকা খরচ করলেই এপার ওপার করার চোরা ব্যবস্থা। চার হাজার কিলোমিটার সীমান্তের অনেকটাই অরক্ষিত। কাঁটাতারের বেড়া নেই। দুর্গম সীমান্তেও যাতায়াতের অসুবিধে জঙ্গিদের নেই। তারা বর্ডার ডিঙোয় বহাল তবিয়তে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে যাঁরা ভিসার আবেদন করেন, তাঁরা সাধারণত শান্তিপ্রিয়, সাধারণ নাগরিক। পুলিশি তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখে পাসপোর্ট দেওয়া হয়। তা ছাড়াও সন্ত্রাসীদের তালিকা বাংলাদেশ ইনটেলিজেন্স ভারতীয় দূতাবাসে পাঠিয়ে দেয়। তার পরেও ভিসা দেওয়ার ঝঞ্ঝাট কোথায়!

ভিসার ঝামেলায় জড়ানো মানুষের নালিশ বাড়ে। তিক্ত অভিজ্ঞতা জানিয়ে ঢাকা থেকে ভূরিভূরি ফোন আসে। দূতাবাসকে জানালেও তারা নির্বিকার। আট বছর আগে বাংলাদেশের বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কলিম শরাফিকে কলকাতার টিভি চ্যানেলে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে তিনি জানালেন, ভিসা পাইনি। তাই যেতে পারছি না। ভারতীয় হাইকমিশনারকে জানাতেই তিনি বললেন, কী করব, ওনাকে চিনতাম না। তিনি ছিলেন পাঞ্জাবি। বাংলাদেশের সংস্কৃতির প্রাণপুরুষদের কাউকেই চিনতেন না। বছরের পর বছর ঢাকায় থেকেও রবীন্দ্রভূমি শিলাইদহ সফরের আগ্রহ দেখাননি। এখনও ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসের সেটাই সমস্যা। বাঙালির আবেগ, ভালবাসা, সংস্কৃতি সম্পর্কে অপরিচিত। শুধু পাসপোর্টে মানুষ চেনা যায় না। চিনতে হয় হৃদয় দিয়ে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে কূটনৈতিক নয়, হার্দিক। এটা ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস কবে বুঝবে।

আরও খবর- জামাতে ইসলামির ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ করছে বাংলাদেশ

Indian Embassy VISA Bangladesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy