বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের দণ্ডদান নিয়ে এ বারও অসন্তোষ প্রকাশ করল পাকিস্তান। শনিবার রাতে চট্টগ্রামের আল-বদর কমান্ডারের ফাঁসি কার্যকর হয়। এর পরই পাকিস্তান বিদেশ মন্ত্রক রীতিমতো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। ‘ত্রুটিপূর্ণ বিচারে’ ‘প্রখ্যাত’ নেতা মির কাসেম আলির মৃত্যুদণ্ডে গভীরভাবে শোকপ্রকাশও করেছে ইসলামাবাদ। পর দিনই এই বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। নিজেদের এক্তিয়ারের বাইরে বেরিয়ে পাকিস্তান যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে, সেটাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ বিদেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে।
৩ সেপ্টেম্বর ফাঁসির পরপরই প্রকাশ করা পাক বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের প্রখ্যাত জামাতে ইসলামি নেতা মির কাসেম আলিকে, ডিসেম্বর ১৯৭১-এর আগের অপরাধের অভিযোগে, ত্রুটিপূর্ণ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে ভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল পাকিস্তান তাতে গভীরভাবে মর্মাহত।
“ত্রুটিপূর্ণ বিচারের মাধ্যমে যে ভাবে বিরোধীদের দমন করা হচ্ছে তা গণতান্ত্রিক চেতনার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে। এই বিচার প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই বহু আন্তর্জাতিক সংগঠন, মানবাধিকার রক্ষা গোষ্ঠী, আন্তর্জাতিক স্তরের আইন বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। আপত্তি জানিয়েছে বিশেষত স্বচ্ছতার প্রশ্নে এবং মামলার আইনজীবী, সাক্ষীদের হেনস্থা নিয়ে।
“বাংলাদেশ সরকারের উচিত ১৯৭৪-এর ত্রিপাক্ষিক চুক্তিকে মর্যাদা দেওয়া যেখানে ‘সিদ্ধান্ত হল ক্ষমাশীলতার উপর দাঁড়িয়ে আর কোনও বিচার প্রক্রিয়া চালানো হবে না’
“রাজনৈতিক ফায়দার জন্য পাল্টা অভিযোগ তোলার ফল সবসময় উল্টো হয়।
“পাকিস্তান বিশ্বাস করে সুসম্পর্কের মহত্ আদর্শের উপর দাঁড়িয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার নীতিতেই কোনও বিষয়কে দেখা উচিত।
“মির কাসেম আলির শোকসন্তপ্ত পরিবারকে গভীরতম শোক জ্ঞাপন করছে পাকিস্তান”
এই সেই বিবৃতি। সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন।
ইসলামাবাদের এই বিবৃতিকে অযাচিতভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলেই দেখছে ঢাকা। পাক বিবৃতি দেখার পরই রবিবার ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত সামিনা মেহতাবকে তলব বাংলাদেশ সরকার। সামিনা মেহতাব বাংলাদেশ বিদেশ মন্ত্রকের অফিসে যান। তাঁর সঙ্গে মিনিট কুড়ি কথা বলেন বিদেশ মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব কামরুল হাসান। স্পষ্ট ভাবেই জানিয়ে দেওয়া হয়, সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচার হয়েছে। এতে নাক গলানোর অধিকার পাকিস্তানের নেই। পাক বিবৃতির বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ পত্রও সামিনা মেহতাবের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি দখলদারদের পক্ষ নিয়েছিল জামাতে ইসলামি। অংশ নেয় হত্যা, ধর্ষণ-সহ নানান মানবতা বিরোধী অপরাধে। সেই অপরাধের বিচার শুরুর পর থেকেই পাকিস্তান বারবার এর বিরুদ্ধে গলা চড়িয়ে গেছে। এর আগে মতিউর রহমান নিজামি এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডের পরও পাকিস্তান একই রকম বিবৃতি দিয়েছিল।
আরও পড়ুন
‘চট্টগ্রামের জল্লাদ’-এর অপরাধের খতিয়ান শুনলে হাড় হিম হয়ে যাবে!
আরও পড়ুন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy