ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যে চিঠি লিখেছেন, সেটাকে পত্র না বলে মানপত্র বলা ভাল। লাইনে লাইনে হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হাসিনার অভিজ্ঞতা টেরেসার থেকে ঢের বেশি। তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। টেরেসার প্রধানমন্ত্রী হওয়া মাত্র আট মাস আগে, ২০১৬-র ১৩ জুলাই। তার আগে ছিলেন কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান এবং দেশের স্বরাষ্ট্র সচিব। বরাবরই তিনি আধুনিকতার পক্ষে। পুরোন ধ্যান ধারণা যুক্তি দিয়ে বিচার না করে মানতে চান না। দায়িত্বের প্রশ্নে পুলিশের সঙ্গেই তিনি বিরোধে জড়িয়েছেন। তাদের সেকেলে কর্মপদ্ধতির আমূল সংশোধনে, একালের করতে চেয়েছেন। ভুল পথে চললেই দলকে সতর্ক করেছেন। ২০০২-এ নেতাদের বলেছিলেন, দলটাকে লোকে 'ন্যাস্টি পার্টি' মনে করে। দলের সংস্কার করুন নয়ত মরুন। তাঁর কথা না শুনে দল ডুবেছে।
আরও পড়ুন: ক্ষয়িষ্ণু রাখাইনদের বর্ষবরণ উৎসবে মাতল ঢাকা
তাঁর আগের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ছিলেন ধনীর দুলাল। তিনি তা নন। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাননি। দীর্ঘ অধ্যবসয়ে ভবিষ্যতের রাস্তা খুঁজেছেন। এখানেই হাসিনার সঙ্গে তাঁর মিল। দু'জনেই সাধারণ ঘরের মেয়ে বলে সব সময় সাবধানী। মাটিতে পা রেখে চলাটাই তাঁদের অভ্যাস। খ্যাতির বিড়ম্বনায় বেহাল হন না। সংকটেও নেতৃত্বের হাল শক্ত হাতে ধরে রাখেন।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অভিভূত টেরেসা। কৃতিত্বটা পুরোপুরি তিনি হাসিনাকেই দিয়েছেন। অর্থনৈতিক বিকাশে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে হাসিনার ভূমিকাকে খুব বড় করে দেখেছেন টেরেসা। তিনি জানেন, যে কোনও দেশের উন্নতির বড় মাপকাঠি সে দেশের মেয়েদের অগ্রগতি। মেয়েরা উপরে না উঠলে দেশ নীচেই পড়ে থাকবে। টেরেসা হাসিনার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ চান। সন্ত্রাস নির্মূল করতে তিনি হাসিনার পাশে। যে কোনও প্রকল্পে সাহায্যের লম্বা হাত বাড়াবেন। বাঙালি-ইংরেজ সাংস্কৃতিক সাযুজ্যের বন্ধন কম দিনের হল না। শেক্সপিয়রকে বাঙালি অন্তর দিয়ে চিনেছে। বিশ্বে অচেনা রবীন্দ্রনাথকে সবার আগে চিনেছে ইংরেজরা। আন্তর্জাতিক শীর্ষে বরণ করতে দ্বিধা করেনি। টেরেসা সাহিত্য রসিক। রবীন্দ্রনাথের 'সং অফারিংস' বা গীতাঞ্জলি পড়ে এখনও প্রেরণা পান।
বাংলাদেশ-ব্রিটেনের যোগাযোগ যতটা মনে মনে, সশরীরে ততটা নয়। ভিসার সমস্যা। বাংলাদেশের ইলিশ পৌঁছচ্ছে লন্ডনে। পাবদা, পঙ্গাস, চিতল যাচ্ছে। সিলেটি হাতে 'ফিস কারি' খেয়ে ধন্য ধন্য করছে লন্ডনবাসী। মৎস গেলেও মনুষ্য প্রবেশ শিথিল। টেরেসা কথা দিয়েছেন, ভিসা পাওয়া সহজ হবে। বাঙালির ব্রিটেন যাতায়াতে কোনও অসুবিধে থাকবে না। দু'দেশের পণ্য পরিষেবাতেও সমস্যা হচ্ছে। ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমান বন্দর থেকে লন্ডনে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট বন্ধ। ব্রিটেনে বাংলাদেশের সব্জি যাচ্ছে ঘুরপথে। পথে দেরি হওয়ায় নষ্ট হওয়ার শঙ্কা। পরিবহণ ব্যয়ও বাড়ছে। দ্রুত সমস্যার সমাধানে আগ্রহী টেরেসা। ঢাকা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে ঢাকা-লন্ডনের যৌথ উদ্যোগ। নিরাপত্তায় যেন কোনও ফাঁক না থাকে। আকাশ পথে সহজ পথে পণ্য যাতে যেতে পারে নির্বিঘ্নে। হাসিনা-টেরেসার মনের মিল কাজে পরিণত হতে সময় লাগবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy