মৈত্রী এক্সপ্রেস। ছবি: সংগৃহীত।
একশো কেজির জায়গায় একশো গ্রাম। খাই মেটে কী করে। চাই চাইটা থাকেই। যেতেই যে হবে ঢাকা থেকে কলকাতা। ঘুরে আবার ঢাকা ফেরা। মৈত্রী এক্সপ্রেসে সিট তো মাত্র ৪৪৯। আসন পেতে হলে এক মাস আগেই বুকিং। শবরীর প্রতীক্ষা। বাংলাদেশ-ভারত সরকারের তৎপরতায় কিছুটা সান্ত্বনা। বাড়ল ট্রেন। ১১ নভেম্বর থেকে যাতায়াত সপ্তাহে তিনের বদলে চার দিন। সোম, মঙ্গল, শুক্র, শনি কলকাতা স্টেশন ছাড়বে সকাল ৭টা ১০ মিনিট। এগারো ঘণ্টার সফর শেষে ঢাকা পৌঁছবে সন্ধে ৬টা ১০এ। ঢাকা-কলকাতা ট্রেন বুধ, শুক্র, শনি, রবি। যাত্রা শুরু ঢাকার সময় সকাল ৮টা ১০। কলকাতার সময় ৭টা ৪০। কলকাতার ঘড়ি আধ ঘণ্টা পিছিয়ে।
দিনের জার্নি। ঘুমনোর স্লিপার নেই। বসে বসে যাওয়া। অতিরিক্ত যাত্রী সঙ্কুলানের সুবিধে। যেখানে একজন ঘুমোতে পারে সেখানে তিনজনের বসার সুযোগ। ট্রেনে উঠেই ব্রেকফাস্ট। রুটি, মাখন, ওমলেট এবং চা অথবা কফি। লাঞ্চে মুরগি বা মাছ ভাত। সঙ্গে ডাল-সব্জি। বিকেলের টিফিনে স্ন্যাকস। চেয়ার কারের সামনে ফোল্ড করা খাবার রাখার জায়গা। টেনে নিলেই টেবিল। ট্রেনের সাধারণ শ্রেণিতে ভাড়া খুব কম। মাত্র ৪৫০ টাকা। চেয়ার কারে ৭৫০ টাকা। প্রথম শ্রেণীর এসি কেবিন ১২২৫ টাকা। যাতায়াতের খরচ দ্বিগুণ। যুক্ত হবে ৫০০ টাকার ট্রাভেল ট্যাক্স।
ট্রেন দু'টো স্টেশন ছাড়া কোথাও থামে না। ভারতের গেদে আর বাংলাদেশের দর্শনাতে দাঁড়ায়। দু'দেশের ইমিগ্রেশন, কাস্টমস চেকিং হয় সেখানে। তাতেই সময় যায় চার ঘন্টা। নইলে ঢাকা-কলকাতা যাত্রা শেষ হতে পারত সাত ঘন্টায়। ট্রেনের গতি ঘন্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার। আরও বেশি হলে সময় আরও কমত। রেল লাইনের সংস্কারের পরিকল্পনা আছে। গতি বাড়াতে যেটা জরুরি। রুট বদলও সম্ভব। পোড়াদহ জংশন থেকে এক দিকে ঢাকা, অন্য লাইনে শিলাইদহ। সে পথেই পড়বে লালন ফকিরের কুষ্টিয়া। রবিতীর্থ, লালনের বাসস্থান দেখার এমন সুযোগ এড়ানো যায় না। ট্রেনে কলকাতা থেকে শিলাইদহ চার ঘণ্টার বেশি লাগার কথা নয়। কলকাতার বাঙালি ছুটিতে ছোটে শান্তিনিকেতন। রবীন্দ্রনাথকে খোঁজে স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যতে। কলকাতা থেকে ট্রেনে চড়ে শিলাইদহ যেতে পারলে রবীন্দ্র অতীত স্পর্শের আরও একটি দরজা খুলত। এটা হতে পারত বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। এখন একটু এলোমেলো হয়ে আছে। সাজিয়ে গুছিয়ে নিলেই চলবে। শিলাইদহের অবহেলা সইতে না পেরে পদ্মা অনেকটা দূরে সরেছে। তাতে কী। শিলাইদহকে টেনে বাড়িয়ে পদ্মার কাছে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের অফুরন্ত লোক শিল্প আর হস্তশিল্প প্রদর্শনের এমন স্থান আর কোথায়। রবীন্দ্রনাথকে রুখতে চেয়েছিলেন পাকিস্তান শাসক ফিল্ড মার্শাল মহম্মদ আয়ুব খান। ১৯৫৮র অক্টোবরের অভ্যুত্থানে যুক্তরাষ্ট্রীয় সংসদীয় ব্যবস্থা ভেঙে ক্ষমতা দখল করেন তিনি। ১৯৬২'তে সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রপতি হয়ে সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী। বাংলাদেশ মানে তখন পূর্বপাকিস্তানের মায়ের ভাষা বাংলা কেড়ে উর্দু চাপানোর চেষ্টা। একই সঙ্গে রবীন্দ্রনাথকে নির্বাসনে পাঠানোর প্রয়াস। ঢাকা-কলকাতা যোগাযোগ জটিল। জনপ্রিয় দুটি ট্রেন ঢাকা মেল, বরিশাল এক্সপ্রেস বাতিল। একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তির পরেও কলকাতা-ঢাকা যোগাযোগ স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লেগেছে। ১৯৯৮'তে দুই শহরের মধ্যে সরাসরি বাস সার্ভিস চালু। মৈত্রীর প্রতীক হয়ে পথে নামে 'শ্যামলী' আর সোহার্দ্য বাস। ধীরে ধীরে নজর ট্রেনের দিকে। ২০০৮'এর ১৪ এপ্রিল, পহেলা বৈশাখ, থেকে ঢাকা-কলকাতা ছুঁতে থাকে মৈত্রী এক্সপ্রেস। দু'টো ট্রেনে শুরু। তখন যাত্রী কোথায়। সাহস করে যারা উঠেছেন তারাও ভয়ে কাঁপতেন। নাশকতার ভয়। এখন ভয় উড়িয়ে উল্লাস। সপ্তাহে চার দিন সার্ভিস চালু হওয়ার পরেও যাত্রীরা বলছেন, এতে হবে না, আরও চাই।
আরও খবর...
বাংলাদেশে উবের পরিষেবা অবৈধ বলে ঘোষণা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy