টেস্টের পর এ বার লক্ষ বিপিএল।
কোনও পর্যায়ের টুয়েন্টি-২০ ক্রিকেট খেলা হয়নি তার। গতবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ( বিপিএল) যখন চলেছে, তখন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্পে থাকায় প্লেয়ার্স ড্রাফটে উঠতে পারেননি মেহেদি হাসান মিরাজ। অথচ বিপিএল টি-২০-র চতুর্থ আসরেই স্পটলাইটে তিনি। আইকন সাব্বির রহমান স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে রাজশাহী কিঙ্গসের সবচেয়ে বড় তারকা। দলটিতে আছে শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান উপুল থারাঙ্গা, পাকিস্তানের উমর আকমল, ইংল্যান্ডের সমিত পটেল। দলটির অধিনায়ক ডারেন স্যামি দু’বার টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়ক। অথচ, প্লেয়ার্স ড্রাফটে ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি হওয়া মেহেদি হাসান মিরাজের উপরই পড়েছে সব আলো। কম টাকায় কেনা মিরাজই এখন রাজশাহী কিঙ্গসের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড। শুক্রবার দুপুরে বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে রাজশাহী মুখোমুখি হচ্ছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিরুদ্ধে। দলে মিরাজকে পেয়ে অধিনায়ক ডারেন স্যামি ভীষণ খুশি। টেস্ট থেকে টি-২০, সম্পূর্ন ভিন্ন ফর্ম্যাটের খেলা। তবে টেস্টে যে ছেলেটি ২ ম্যাচে ১৯ উইকেট নিয়ে সারা বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে, সেই ছেলেটির কাছে বিপিএলে অনেক আশা ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন অধিনায়কের। বৃহস্পতিবার শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে দলটির সঙ্গে অনুশীলন করতে এসে স্যামি বলেন, “দলে মিরাজের মতো ক্রিকেটারকে পেয়ে আমি অবশ্যই রোমাঞ্চিত। অনুশীলনে টিম আসার সময় বাসে মিরাজের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওকে বলেছি, তোমার কাছ থেকে আমি অনেক বেশি কিছু চাই। তরুণ হয়েও এখনই ও যে ভাবে দায়িত্ব নিতে শিখেছে, টেস্টে যে ভাবে বোলিং করেছে, তা ভেবে আমি দারুণ রোমাঞ্চিত। আমার বিশ্বাস, আমাদের দলটির জন্যও খুব ভাল কিছু করবে।”
প্রতিপক্ষ রাজশাহী কিঙ্গসের অধিনায়ক মাশরাফি মিরাজকে দেখেই অভিনন্দন জানাতে এগিয়ে এলেন। তাঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, জানিয়েছেন শুভকামনা। মাশরাফির মতে, “মিরাজ খুব পরিশ্রমী ক্রিকেটার। অনূর্ধ্ব ১৯ দলে ওর খেলা দেখছি। এক সঙ্গে একই মাঠে অনুশীলন করেছি। খুব পরিশ্রমী ক্রিকেটার। আমার বিশ্বাস টি-২০তেও ও ভাল করবে।”
তবে টেস্ট অভিষেক সিরিজে অবিশ্বাস্য পারফর্ম করায় এই অফ স্পিনারকে নিয়ে প্রতিপক্ষ দলগুলো গবেষণা করবেই। ফলে সামনের দিনগুলোতে মিরাজের কাজ আরও কঠিন হয়ে যাবে। মিরাজকে তাই বোলিংয়ে আরও বেশি মনোযোগী এবং কৌশলী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মাশরাফি। মাশরাফির বিশ্বাস, মিরাজে বদলে যাবে বাংলাদেশ দল। তাঁর মতে, “মিরাজ যদি ১০ বছর বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সার্ভিস দিতে পারে, তা হলে বাংলাদেশের ক্রিকেট আরও বদলে যাবে।”
এক সময়ে বাংলাদেশের হেড কোচ ছিলেন স্টুয়ার্ট ল। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে ভারত, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ার মেগা আসরে বাংলাদেশকে ফাইনালে তোলার কারিগর এই অজি ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যুব দলের উপদেষ্টা কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। মিরাজকে কাছ থেকে দেখেছেন, আক্রমণাত্মক ক্রিকেট তত্ত্বটা মিরাজ শিখেছে স্টুয়ার্ট ল’র কাছ থেকেই। তার এই দর্শনে মিরাজ জিতে নিয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে মোস্ট ভেল্যুয়েবল ক্রিকেটারের পুরস্কার। ৯ মাস পর তার হাতেই উঠল টেস্ট অভিষেক সিরিজে সিরিজ সেরার পুরস্কার। মাত্র ৯ মাস আগে রেখে এসেছিলেন যে ছেলেটিকে, তার অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে ঢাকা টেস্টে ইংল্যান্ডকে তিন দিনে হারিয়েছে বাংলাদেশ। নিজেকে একটু বেশি গর্বিতই মনে হচ্ছে তাই স্টুয়ার্টের। খুলনা কিংসের হেড কোচের দায়িত্ব নিতে আসা স্টুয়ার্ট ল’কে অ্যাকাডেমী মাঠে দেখেই তাঁর কাছে যান মিরাজ। প্রিয় শিষ্যকে দেখে পরম স্নেহে জড়িয়ে ধরেছেন ল। মিরাজের উদ্দেশ্যে ল বলেছেন “ওঁকে নিয়ে খুব গর্ব হচ্ছে। বাংলাদেশকে আরও অনেক কিছু দিতে হবে ওকে। আমি বিশ্বাস করি, মিরাজ তা পারবে।”
আরও পড়ুন:
মিরাজের পরিবারের জন্য বাড়ি তৈরির নির্দেশ দিলেন হাসিনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy