সাঁড়াশি অভিযানে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী। ছবি সৌজন্য: বাংলা ট্রিবিউন।
একের পর এক গুপ্তহত্যায় বিব্রত বাংলাদেশের সরকার দুষ্কৃতী ও মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অভিযান শুরু করে দিল। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছে বাংলাদেশ জুড়ে। শুক্রবার দুপুরের মধ্যে আটকের সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বিরোধী দল বিএনপির অবশ্য অভিযোগ, বেছে বেছে তাদের দলের নেতা-কর্মীদেরই হেনস্থা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পুলিশের আইজি একেএম শহিদুল হকের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলি। সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ, ব্লগার খুন, অধ্যাপক-শিক্ষকদের হত্যা-সহ যে সব কট্টরবাদী কার্যকলাপ বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশে গত কয়েক মাস ধরে প্রবল ভাবে বেড়েছে, তা অবিলম্বে রোখার ব্যবস্থা করতে হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ‘সাঁড়াশি অভিযান’ শুরুর নির্দেশ দেন আইজি। সেই অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত থেকেই জেলায় জেলায় র্যাব, পুলিশ এবং আনসার বাহিনী যৌথ ভাবে অভিযানে নেমে পড়েছে। সাত দিন ধরে বাংলাদেশ জুড়ে এই অভিযান চলবে। কিন্তু ব্যাপক ধরপাকড়ে প্রথম দিনেই আটকের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে বাংলাদেশের পুলিশ সূত্রের খবর।
মুক্তমনা ব্লগারদের খুন ইদানীং বাংলাদেশে স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার জন্য বেশ কয়েকজন শিক্ষক এবং ছাত্রকেও খুন হতে হয়েছে। তার মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ। হিন্দু পুরোহিতদের খুন করা, হিন্দু আশ্রমের সেবককে খুন করা, খ্রিস্টান হওয়ার অপরাধে সাধারণ দোকানদারকে খুন করা— এমন নানা নারকীয় কার্যকলাপে মেতে উঠেছে কট্টর মৌলবাদীরা। তারা জামাতের লোকজন, নাকি কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি তাদের যোগসাজশ রয়েছে, তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু বিতর্ক যা নিয়েই থাক, এই গুপ্তহত্যা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার বলে বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় কিছু দিন আগেই। প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়তেই চট্টগ্রামে পুলিশ সুপারের স্ত্রীকে ছুরি মেরে ও গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। তার পরই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ঘোষিত ভাবে অভিযানে না নামলে যে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে, তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি প্রশাসনিক কর্তাদের।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশে এ বার কুপিয়ে খুন করা হল অনুকূল আশ্রমের সেবককে
চট্টগ্রাম, খুলনা, কিশোরগঞ্জ, মাগুরা, রাজশাহি, যশোহর, বাগেরহাট, গাইবান্ধা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, বরিশাল, দিনাজপুর এবং রংপুরে সবচেয়ে বেশি ধরপাকড় চালিয়েছে যৌথ বাহিনী। সাতক্ষীরা, নাটোর এবং ঝিনাইদহেও শুরু হয়েছে অভিযান। কট্টরবাদী সংগঠন জামাতে ইসলামির কর্মীদের বিভিন্ন এলাকায় গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। শাসক দল আওয়ামি লিগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি অবশ্য দাবি করছে, সাঁড়াশি অভিযানের নামে আসলে বিএনপি-কে আক্রমণ করা হচ্ছে। বেছে বেছে বিএনপি নেতা ও কর্মীদের বাড়িতে যৌথ বাহিনী হানা দিচ্ছে এবং তল্লাশি চালাচ্ছে বলে বেগম খালেদা জিয়ার দলের অভিযোগ। পুলিশের দাবি, অসামাজিক কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগ মিলেছে যাদের বিরুদ্ধে, তাদেরই ধরপাকড় করা হচ্ছে। কোনও দলের কর্মীদের বেছে বেছে হেনস্থা করার অভিযোগ সত্য নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy