৩০ এপ্রিল ২০২৪
Alolika Mitra

বাংলার তাঁতশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগে মায়ের সঙ্গে যুদ্ধে সামিল আলোলিকাও

আলোলিকার সংস্থার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে একটি মহিলা দল যুক্ত রয়েছে। যাঁরা নিজেদের দক্ষতায় পোশাকে বিভিন্ন কারুকাজ ফুটিয়ে তোলেন।

Alolika Mitra

আলোলিকা মিত্র

এবিপি ডিজিটাল ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো
শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৩ ২১:১৮
Share: Save:

গত কয়েক বছরে গোটা ভারত জুড়ে বিভিন্ন কুটির শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে লড়াই চালাচ্ছেন বহু মানুষ। সহযোগিতা মিলেছে বিদেশ থেকেও। এই তালিকায় বেশ উপরের দিকেই রয়েছে বাংলার তাঁত শিল্প। যাঁদের হাত ধরে বাংলার এই তাঁত শিল্প বিশ্ব মানচিত্রে ছড়িয়ে গিয়েছে, আলোলিকা মিত্র তাঁদের অন্যতম।

আলোলিকার ছোটবেলা কেটেছে শহর কলকাতাতেই। স্কুল ও কলেজ শেষ করে বর্তমানে তিনি একটি সংস্থায় প্রোজেক্ট ম্যানেজার হিসাবে কাজ করছেন। কলেজে পড়ার সময় থেকেই হাতে বোনা পোশাক ভীষণ প্রিয় ছিল আলোলিকার। যে সময় থেকে পারিপার্শ্বিক জ্ঞান হয়েছে, তখন থেকেই আলোলিকা নিয়ম করে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক ভাবে কিংবা হাতে তৈরি দ্রব্য ব্যবহারের চেষ্টা করে চলেছেন। উদ্দেশ্য একটাই — পরিবেশ সচেতনতা এবং স্থানীয় শিল্পকে মান্যতা দেওয়া। পোশাকও সেই তালিকা থেকে বাদ যায়নি।

ফটোগ্রাফি সৌজন্য: চারকোল মার্কস, রাজীব চক্রবর্তী

ফটোগ্রাফি সৌজন্য: চারকোল মার্কস, রাজীব চক্রবর্তী

বাংলার এই বুনন শিল্পকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আলোলিকা চাকরির পাশাপাশি নতুন কিছু করার কথা ভাবেন। তাঁর এই ভাবনাকে সমর্থন করে এগিয়ে আসেন তাঁর মা। বছর পাঁচেক আগে তিনি একটি বুটিক তৈরি করেছেন - ‘স্বহা বাই আলো’। হাতে তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহারের দিকে মেয়ের ঝোঁক দেখে তাঁর মা বুঝতে পেরেছিলেন যে আলোলিকা সেই পথে হাঁটতে চলেছেন। শুরু হয় জীবনে নতুন কিছু করার প্রয়াস। ক্রমে আলোলিকা এই ব্যবসার হাল ধরেন।

ফটোগ্রাফি সৌজন্য: চারকোল মার্কস, রাজীব চক্রবর্তী

ফটোগ্রাফি সৌজন্য: চারকোল মার্কস, রাজীব চক্রবর্তী

হাতে বোনা ফ্যাব্রিক — যেমন সুতি, তসরের শাড়ি, তাঁত ইত্যাদি পরতে ভালবাসেন আলোলিকা। ব্যবসাতেও সেই চিত্র স্পষ্ট। বিভিন্ন স্থানীয় কারিগর এবং তাঁতিদের তিনি নিজের সংস্থার সঙ্গে যুক্ত করেছেন। বাংলার শিকড়ের সঙ্গে জুড়ে থাকা সেই শিল্পকেই যেন আরও এক বার তুলে ধরার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আশপাশের কয়েক হাজার ব্র্যান্ডের ভিড়ে বাংলার এই শিল্প কী ভাবে স্বমহিমায় নিজের জায়গা ধরে রাখতে পারে, সেই ভাবনাই প্রাথমিক ভাবে ঘোরাফেরা করছিল আলোলিকার মাথায়। উদ্দেশ্য একটাই — বাংলার এই শিল্প যেন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও চাকরির শুরুর দিকে তাঁর এই বুটিক খোলার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। পরবর্তীকালে কারিগরদের হাতের কাজের মধ্যে ডুবে থাকা তাঁর জীবনেও পরিবর্তনের ছোঁয়া নিয়ে আসে। সেই শিল্পকেই এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছনোর লক্ষ্যে যাত্রা শুরু হয় আলোলিকার। বাংলার তাঁত শিল্পকে অন্য ধারায় পৌঁছে দিতে তৎপর তিনি।

ফটোগ্রাফি সৌজন্য: চারকোল মার্কস, রাজীব চক্রবর্তী

ফটোগ্রাফি সৌজন্য: চারকোল মার্কস, রাজীব চক্রবর্তী

স্বহা –তে

রয়েছে বিভিন্ন নকশার পোশাক। শাড়ি, ঘেরওয়ালা কুর্তির পাশাপাশি টপ, স্কার্ট-সহ আরও অনেক কিছু। তবে সব থেকে আকর্ষণীয় হল এখানকার ফিউশন পোশাক। ধোতি প্যান্ট ও শর্ট শার্টের এই পোশাকের সেট যে কোনও ব্যক্তির লুক বদলে দেয়। বোহো ফ্যাশনের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন ধরনের ধোতি প্যান্ট বানিয়েছেন আলোলিকা। সঙ্গে রয়েছে বেগমপুরি শাড়ি থেকে তৈরি হুডি দেওয়া জামা। সব মিলিয়েই এই বুটিকের সংগ্রহ কিন্তু বেশ নজরকাড়া। খুব কম সময়েই ঠাকুরপুকুরে এই বুটিক নতুন প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

কলকাতা, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ-সহ অন্যান্য জায়গায় বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে এই সংস্থা। সম্প্রতি মুম্বইতে আরও একটি প্রদর্শনী আয়োজিত হতে চলেছে তাদের। ব্যবসাও চলছে রমরমিয়ে। এই প্রসঙ্গে আলোলিকার কী মত? তাঁর কথায়, “এই সাফল্য আমার একার নয়। বিভিন্ন কারিগর ও তাঁতিদের সঙ্গে কাজ করছি আমি। তাঁদের ক্ষমতায়নের জন্য চেষ্টা করছি। আমার এই সাফল্যের পিছনে তাঁদের ভূমিকা অনেকখানি।”

বলা হয়, পোশাক ব্যক্তিত্বকে আরও ভাল ভাবে ফুটিয়ে তোলে। বর্তমান প্রজন্ম তাঁদের পোশাকের ধরন নিয়ে খুবই সচেতন। সেই কারণেই সাজ নিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন এক্সপেরিমেন্ট চলতেই থাকে। স্বহা যেন তাঁদের কাছে রীতিমতো ডিজাইনার পোশাকের হাব। এই বুটিকের জামাকাপড়ে যে রং ব্যবহার করা হয়, তাতে কোনও রকম রাসায়নিক থাকে না। তাই ত্বকের ক্ষতির আশঙ্কাও থাকে না বলে দাবি সংস্থার। এ ছাড়াও জামাকাপড় থেকে রং ওঠার সম্ভাবনা নেই। মূলত বেগমপুরি শাড়ি পুনর্ব্যবহার করে পোশাক তৈরি হয়। আলোলিকা বলেন, “বাংলার তাঁত শিল্পে বেগমপুরি শাড়ির মতো ভাল মানের সুতো ও রং অন্য কোনও কাপড়ে ব্যবহার করা হয় না। পরিবেশবান্ধব অ্যাজো ফ্রি ডাই ব্যবহার করা হয়। খুব কম হ্যান্ডলুমে এত ভাল সুতো তৈরি হয়।”

আলোলিকার সংস্থার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে একটি মহিলা দল যুক্ত। যাঁরা নিজেদের দক্ষতায় পোশাকে বিভিন্ন কারুকাজ ফুটিয়ে তোলেন। আলোলিকা মনে করেন, তাঁর দলের মহিলাদের উন্নতিসাধন এখন তাঁর দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এই পোশাকগুলি এমন ভাবে তৈরি হয়, যাতে তা পুনর্ব্যবহার করা যায়। এই বিষয়ে তিনি বলেন, “স্বহা বাই আলো একটি মিনিম্যালিস্ট ব্র্যান্ড যা একাধারে টেকসই এবং নানা ডিজাইনে ভরপুর। আমরা ভারতীয় তাঁত সংস্কৃতিকে আধুনিক উপায়ে পুনরুদ্ধার করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আর আমাদের বুটিকের সব পোশাকই শুধুমাত্র হাতে বোনা কাপড় দিয়ে তৈরি।” আলোলিকার এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। তাই তিনি হয়ে উঠেছেন ‘সর্বজয়া’।

এই প্রতিবেদনটি 'উই মেক আস' -এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Share this article

CLOSE