Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
নিজের ক্ষমতাই যথেষ্ট, সওয়াল জেটলির

অনুৎপাদক সম্পদের ভার দ্রুত কমাতে আর্জি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে

জমে থাকা অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা ঝেড়ে ফেলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হিসাবের খাতা পরিচ্ছন্ন করতে বললেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

বৈঠকে জেটলির সঙ্গে অর্থ প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিন্‌হা ও আর্থিক পরিষেবা সংক্রান্ত সচিব অঞ্জলি দুগ্গল। সোমবার। ছবি: পিটিআই।

বৈঠকে জেটলির সঙ্গে অর্থ প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিন্‌হা ও আর্থিক পরিষেবা সংক্রান্ত সচিব অঞ্জলি দুগ্গল। সোমবার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৬
Share: Save:

জমে থাকা অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা ঝেড়ে ফেলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হিসাবের খাতা পরিচ্ছন্ন করতে বললেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ইচ্ছা করে ধার বাকি রাখে যে-সব সংস্থা, তিনি সোমবার তাদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এদের ‘জব্দ’ করার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা ও স্বাধীনতা ব্যাঙ্কগুলির হাতেই রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে ওঠা বকেয়া ঋণের বোঝা বা অনুৎপাদক সম্পদ (এনপিএ) এখন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির মাথাব্যথার অন্যতম কারণ। মার্চের শেষে যা ছিল ৫.২০ শতাংশ, জুনের শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.০৩ শতাংশে।

প্রসঙ্গত, বিভিন্ন ঋণ-খেলাপি সংস্থার সঙ্গে মোকাবিলার জন্য আরবিআই ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্কগুলিকে যথেষ্ট ক্ষমতা দিয়েছে। তা কাজে লাগানোর কথাই আজ এসবিআই চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্য-সহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে নতুন করে মনে করিয়েছেন জেটলি।

বিজয় মাল্য ও তার কিংফিশার এয়ারলাইন্সকে সম্প্রতি ইচ্ছাকৃত ভাবে ঋণ শোধ না-করা গ্রাহকের তকমা দিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। মাল্য কিংফিশারের জন্য এসবিআইয়ের নেতৃত্বাধীন ১৭টি ব্যাঙ্কের গোষ্ঠী থেকে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। শোধ হয়েছে মাত্র ১,১০০ কোটি। ইতিমধ্যেই এসবিআই মুম্বইয়ের ভিলে পার্লের কিংফিশার হাউসের দখল নিয়েছে। মাল্য, তাঁর কিংফিশার ও ইউবি হোল্ডিংস সংস্থাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ঋণ-খেলাপি তকমা দেওয়ার পরে এ বার ব্যাঙ্কগুলি কিংফিশারের যাবতীয় সম্পত্তি নিলামে তুলতে চাইছে। অন্যান্য সংস্থার অনুৎপাদক সম্পদের ক্ষেত্রে একই রকম কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছেন ব্যাঙ্ক প্রধানরা। এবং তারই পক্ষপাতী জেটলি। আরবিআইয়ের দেওয়া ক্ষমতা কাজে লাগিয়েই এসবিআই মাল্য ও তার সংস্থাকে ইচ্ছা করে ধার শোধ না-করা গ্রাহকের তকমা দিয়েছে। জেটলির যুক্তি, সংসদের আসন্ন অধিবেশনে দেউলিয়া আইন পাশ করানোর চেষ্টা হবে। সে ক্ষেত্রে ধারে নিমজ্জিত সংস্থাকে সহজেই দেউলিয়া ঘোষণাও করা যাবে।

জেটলি বলেন, ‘‘ইচ্ছা করে ঋণ শোধ না-করা একটা বড় সমস্যা। অর্থনীতির যে-সব ক্ষেত্রে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ খুব বেশি, সেগুলির পর্যালোচনা করে দেখলাম, অনেক ব্যাঙ্কের ধার শোধ না-করা গ্রাহকের তালিকায় একই নাম বারবার আসছে।’’ কিন্তু শুধু কড়া হাতে সম্পত্তি নিলাম করে ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করলেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পত্তির বোঝা কমবে, তা অর্থ মন্ত্রকও মনে করছে না। জেটলি বুঝতে পারছেন, এই ঋণের একটা বড় কারণ অর্থনীতির হাল না-ফেরা। বিদ্যুৎ, ইস্পাত, বস্ত্রের মতো ক্ষেত্রে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ সবথেকে বেশি। তবে বণ্টন সংস্থাগুলির সংস্কারের ফলে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের চাপ কমতে শুরু করবে বলে জেটলির দাবি। তিনি বলেন, এক দিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এনপিএ আদায়ের জন্য ব্যাঙ্ককে ক্ষমতা দিয়েছে। অন্য দিকে সরকার চাপের মধ্যে থাকা অর্থনীতির ক্ষেত্রগুলির সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে, যাতে তারা ঋণ শোধ শুরু করে।

ঋণ শোধ না-হওয়ার মতো নতুন ঋণ না-নেওয়াও চিন্তার কারণ। জেটলি বলেন, ‘‘বাজারে চাহিদা বাড়লে অবশ্যই ঋণ নেওয়া বাড়বে।’’ বৈঠকে তাই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, অপ্রচলিত বিদ্যুৎ, আবাসনের মতো ক্ষেত্রে ঋণ মঞ্জুরের দিকে নজর দিতে বলেছে অর্থ মন্ত্রক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE