Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
যথেষ্ট নয় সুদ কমানো

অর্থনীতির চাকা দ্রুত ঘোরাতে দাওয়াই সংস্কারই, সওয়াল শিল্পের

একমাত্র সংস্কারের পালে ভর করেই এগিয়ে যেতে পারে ভারতীয় অর্থনীতি। আগামী কাল জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের আর্থিক বৃদ্ধির খতিয়ান ঘোষণার আগের দিন সেই মনোভাবই জানিয়েছে দেশের শিল্প ও বাণিজ্য মহল। দেশের কর্পোরেট ও ব্যাঙ্কিং মহল সাফ জানিয়ে দিয়েছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে সুদ কমানোর ব্যবস্থা করা জরুরি ঠিকই। তবে শুধু তাতে কাজের কাজ কিছুই হবে না।

অর্থনীতির দুই কাণ্ডারি। রঘুরাম রাজন ও অরুণ জেটলি।—ফাইল চিত্র।

অর্থনীতির দুই কাণ্ডারি। রঘুরাম রাজন ও অরুণ জেটলি।—ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি ও মুম্বই শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০২:২৪
Share: Save:

একমাত্র সংস্কারের পালে ভর করেই এগিয়ে যেতে পারে ভারতীয় অর্থনীতি। আগামী কাল জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের আর্থিক বৃদ্ধির খতিয়ান ঘোষণার আগের দিন সেই মনোভাবই জানিয়েছে দেশের শিল্প ও বাণিজ্য মহল। দেশের কর্পোরেট ও ব্যাঙ্কিং মহল সাফ জানিয়ে দিয়েছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে সুদ কমানোর ব্যবস্থা করা জরুরি ঠিকই। তবে শুধু তাতে কাজের কাজ কিছুই হবে না। অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরানোর সোনার কাঠি আসলে নরেন্দ্র মোদীর হাতেই। আর, তা হল সরকারি নীতি আমূল বদলে ফেলে আর্থিক সংস্কার।

বৃদ্ধির হার প্রত্যাশা মাফিক না-হলেই অর্থ মন্ত্রক রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে সুদ কমানোর পক্ষে জোরালো সওয়াল করবে, সেই ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই পেয়েছেন কর্পোরেট-কর্তারা। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সম্ভবত সোমবার ১ ডিসেম্বরই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনের সঙ্গে দেখা করে তাঁর কাছে সুদ কমানোর আর্জি জানাবেন। পরের দিনই ঋণনীতি ফিরে দেখবে শীর্ষ ব্যাঙ্ক।

এই তিন মাসে বৃদ্ধির হার কিছুটা কমতে পারে বলে রয়টার্সের সমীক্ষাতেও ইঙ্গিত মিলেছে। সমীক্ষা অনুযায়ী আর্থিক বৃদ্ধি জুলাই-সেপ্টেম্বরে কমে হতে পারে ৫.১%, যেখানে এপ্রিল থেকে জুনে তা ছুঁয়েছিল ৫.৭%। সেটা অবশ্য সম্ভব হয়েছিল সে সময়ে সদ্য মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের উপর আস্থায় ভর করেই।

এককথায় দেশে যাতে আরও সহজে ব্যবসা করা যায় এবং প্রয়োজনে তা গুটিয়েও নেওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা সরকার করে দিক, এটাই আর্জি শিল্পমহলের। সংস্কারের পক্ষে তাদের সওয়ালও একই লক্ষ্যে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ ব্যাপারে তাঁর কথা রেখে জেটগতিতে সংস্কারের পথে পা ফেলবেন বলেই আশা শিল্প ও ব্যাঙ্কিং মহলের। কারণ, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন আগামী ২ ডিসেম্বরের আসন্ন ঋণনীতিতে সুদ কমানোর পথে হাঁটলেও তা রাতারাতি বৃদ্ধির হারকে টেনে তুলবে না। কর্পোরেট কর্তাদের মতে, কম সুদের জমানা ফিরলেই লগ্নির জনা শিল্পে ব্যাঙ্কঋণের চাহিদা বাড়বে না। বাড়তি লগ্নির জন্য চাই বাণিজ্য-পরিবেশের উন্নতি এবং সার্বিক ভাবে সরকারের উপর আস্থা বাড়া। সেটা নির্ভর করবে, নরেন্দ্র মোদী তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মেনে আর্থিক সংস্কারের ক্ষেত্রে কতটা সাহসী হতে পারেন। ভারতীয় শিল্প যে-সব ক্ষেত্রের সংস্কারের দিকে তাকিয়ে আছে, সেই তালিকায় রয়েছে:

• শিল্পর জন্য জমি অধিগ্রহণ

• শ্রম আইন

• কয়লা ও বিদ্যুৎ শিল্প

• বিমায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি

• পরিবহণ পরিকাঠামো

এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংস্থা ল্যাংকো-র সিইও কে রাজাগোপাল মান্ধাতার আমলের কয়লা সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতি কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেছেন, “বিদ্যুৎ উৎপাদনে সবচেয়ে বড় সমস্যা কয়লার জোগানে ঘাটতি।” এর জন্য মূলত তিনি দায়ী করেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত কোল ইন্ডিয়ার একচেটিয়া আধিপত্যকে। জিভিকে পাওয়ার অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচারের চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার আইজাক জর্জ বলেন, “লাল ফিতের ফাঁস এখনও তেমন আল্গা হয়নি। আরও সরল করতে হবে বিভিন্ন ছাড়পত্র পাওয়ার পদ্ধতি। জমি অধিগ্রহণ এখনও শিল্প গড়ার পথে বড় বাধা।”

এই পরিপ্রেক্ষিতেই ঢালাও আর্থিক সংস্কারের সুপারিশ করেছে শিল্পমহল। তাদের মতে, সংস্কারে পিছিয়ে পড়াই গত দু’বছরে অর্থনীতির রক্তাল্পতার জন্য দায়ী। যার জেরে নতুন লগ্নি তলানিতে এসে ঠেকে। এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার নেমে যায় ৫ শতাংশের নীচে। আশির দশকের পরে এই সময়েই সবচেয়ে ঢিমেতালে এগিয়েছে ভারতের অর্থনীতি। বিশেষজ্ঞদের মতে আবার ৮ শতাংশ বৃদ্ধির পথে ফেরার মূল দাওয়াই ভারতের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া। এর জন্য উৎপাদন ও নির্মাণ শিল্পকে চিহ্নিত করেছেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, ২০০৮-এর বিশ্ব-মন্দার কবল থেকেও ভারত বেরিয়ে আসতে পেরেছিল এই দুই শিল্পের হাত ধরে। তবে এই মুহূর্তে বাড়তি যন্ত্রপাতি কেনা বা নতুন কারখানা গড়ার উপর খুব বেশি জোর না-দিলেও চলবে। কারণ, এপ্রিল থেকে জুনে শিল্পে উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ৭০% কাজে লাগানো গিয়েছে। তিন বছর আগে তা ছিল ৮৫%। তবে শিল্পের হাল ফিরিয়ে অর্থনীতিকে বৃদ্ধির সড়কে ফেরাতে সংস্কারের প্রতি মোদী সরকারের দায়বদ্ধতাই এই মুহূর্তে শিল্পের ভরসা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

reforms raghuram rajan arun jaitley
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE