Advertisement
১১ মে ২০২৪

নিয়মের অজুহাতে চড়া দাম হাঁকছে সিন্ডিকেট

সঠিক নিয়মের বেঠিক ফায়দা। নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি মাল লরিতে তোলা (ওভারলোডিং) রুখতে কড়াকড়ি বাড়িয়েছে রাজ্য। কিন্তু প্রশাসনের সেই সঠিক পদক্ষেপেরও বেঠিক ফায়দা তুলছে সিন্ডিকেটগুলি।

গার্গী গুহঠাকুরতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৫ ০২:২১
Share: Save:

সঠিক নিয়মের বেঠিক ফায়দা।

নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি মাল লরিতে তোলা (ওভারলোডিং) রুখতে কড়াকড়ি বাড়িয়েছে রাজ্য। কিন্তু প্রশাসনের সেই সঠিক পদক্ষেপেরও বেঠিক ফায়দা তুলছে সিন্ডিকেটগুলি। ওই কড়াকড়ির জেরে পরিবহণ খরচ বাড়ার অজুহাতে বালি, পাথরকুচির মতো কাঁচা মালে প্রায় দ্বিগুণ দর হাঁকছে তারা। একে ফ্ল্যাটের বিক্রিতে মন্দা। তার উপর এ ভাবে লাফিয়ে খরচ বাড়ার অত্যাচারে নাভিশ্বাস উঠছে অধিকাংশ নির্মাণ সংস্থার। ফলে হয় প্রকল্প ঢিমে তালে চলছে, নইলে তা বন্ধই করে দিতে বাধ্য হচ্ছে তারা।

সংশ্লিষ্ট মহল সূত্রে খবর, লরিতে ওভারলোডিং না-করার নিয়ম আগেও ছিল। কিন্তু তখন তার তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত মাল বইত লরি। স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনকে তুষ্ট করে সেই কাজ অবাধেই চলছিল। কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্রের নির্দেশে বেহাল রাস্তার হাল আরও বেহাল হওয়া রুখতে নড়ে বসেছে রাজ্য। কড়া হাতে ওভারলোডিং আটকাতে মাঠে নেমেছে প্রশাসন।

ফলে স্বাভাবিক ভাবেই কমেছে লরি পিছু বালি বা পাথরকুচির পরিমাণ। আগে লরিতে ৭৫০ থেকে ৮০০ ঘন ফুট ওই সব কাঁচামাল আনা যেত। সেই পরিমাণ এক ঝটকায় কমে গিয়েছে অনেকখানি। আর এই অবস্থারই সুযোগ নিচ্ছে সিন্ডিকেটগুলি। তাদের যুক্তি, এর ফলে মাল আনার খরচ বেড়েছে। ফলে দাম চড়াতে বাধ্য হচ্ছে তারা!

নির্মাণ সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, কিছুদিন আগেও বালির দাম ছিল প্রতি ঘন ফুটে ৩২ থেকে ৩৪ টাকা। তা পৌঁছেছে ৭০ টাকায়। ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে পাথরকুচির দরও। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, সমস্যা মেটাতে সারা রাজ্যেই সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে বেসরকারি ভাবে দফায় দফায় আলোচনা করেছে নির্মাণ সংস্থাগুলি। কিন্তু ফল হয়নি।

নির্মাণ সংস্থাগুলির আক্ষেপ, একেই সিন্ডিকেট এড়িয়ে সরাসরি খাদান বা পাইকারি বিক্রেতার কাছ থেকে পাথর, বালি কেনার জো নেই। তা হলে প্রকল্পের কাজ এক চুলও এগোনো যাবে না। তার উপর এখন এই বাড়তি দাম গুনতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে তাদের।

কাঁচামাল সরবরাহকারী সিন্ডিকেট -গুলির দাবি, প্রবল বর্ষায় রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ব্যাঘাত ঘটেছে বালি তোলায়। তার উপর যতটুকু তোলা গিয়েছে, তা নিয়ম মেনে লরিতে বোঝাই করতে গিয়ে খরচ বেড়েছে অনেকখানি। তাই দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে তারা।

কিন্তু এই যুক্তি উড়িয়ে নির্মাণ সংস্থাগুলির অভিযোগ, ওভারলোডিং আটকানোর নিয়ম মানতে গিয়ে কাঁচামালের দর কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু এক লাফে তা দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে তোলাবাজির কারণেই। তা ছাড়া, রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতিও এখন আর নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও বালির দাম কমাতে নারাজ সিন্ডিকেট। একবার বেড়ে যাওয়ার পরে হয়তো তা চড়া থাকবে ভবিষ্যতেও।

কলকাতা-সহ ৮টি শহরে ৭ লক্ষ ফ্ল্যাট খালি পড়ে। সমীক্ষা অনুযায়ী, শহরে বছরের প্রথম ছ’মাসে ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে গত বছরের তুলনায় ৩০% কম। এই অবস্থায় দাম কমার কথা। কিন্তু বাদ সাধছে সিন্ডিকেটের দাবি-দাওয়া। নির্মাণ শিল্পের দাবি, তোলাবাজির দাম চোকাতে হয় মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ক্রেতাকেও। শুধু ওই কারণে প্রতি বর্গ ফুটে অন্তত ১০০ টাকা বেশি গুনতে হয় তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE