উত্তরবঙ্গের বন্ধ চা বাগানগুলি কবে খুলবে জানা নেই। তারই মধ্যে আরও এক প্রস্ত অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে সেগুলির সব শ্রমিকরা সরকারি ভাতা পাবেন কি না তা নিয়ে।
গত বছর জুনে রাজ্য সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। জানায়, ভাতা পাওয়ার জন্য বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের বয়সসীমা ৫৮ থেকে দু’বছর বাড়িয়ে ৬০ হচ্ছে। যদিও অন্য শিল্পে বন্ধ কল-কারখানার শ্রমিকদের বয়সসীমা ৫৮-ই রাখা হয়।
তবে শুধু চা বাগানের শ্রমিকদের কেন বয়সে ছাড় দেওয়া হচ্ছে সে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্যের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ জানিয়েছিল কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত সেপ্টেম্বরে হাইকোর্ট রাজ্যের বিজ্ঞপ্তি খারিজ করে। আদালতের বক্তব্য, রাজ্যের সিদ্ধান্ত সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা ভেঙেছে। গত সপ্তাহে এই রায়ের প্রতিলিপি রাজ্যের শ্রম দফতরে পৌঁছয়। যার জেরে মার্চ থেকে ওই সমস্ত বন্ধ চা বাগানের প্রবীণ শ্রমিকদের ভাতা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এর জন্য শ্রমিক সংগঠনগুলি অবশ্য সরকারকেই দুষেছে। তাদের অভিযোগ, আইনগত প্রক্রিয়া না সেরেই রাজ্য হঠকারি সিদ্ধান্ত নেওয়ায়, মাসুল গুনতে হবে বন্ধ বাগানের প্রবীণ শ্রমিকদের।
শ্রম দফতরের তরফে এক আধিকারিকের অবশ্য দাবি, ‘‘বন্ধ চা বাগানকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েই এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। হাইকোর্টের নির্দেশ নিয়ে আলোচনা চলছে। দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ করা হবে।’’
দফতর সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গের বন্ধ বাগানগুলির প্রায় ৩,০০০ শ্রমিক মাসে ১,৫০০ টাকা করে ভাতা পান। যাঁদের মধ্যে হাজার খানেকের বয়স ৫৮ পেরিয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশের ফলে আগামী মাস থেকে তাঁরা ভাতা পাবেন কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যার জেরে চা বাগানে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা শ্রমিক নেতাদেরও। শ্রম দফতরের উত্তরবঙ্গের যুগ্ম কমিশনার সমীর বসু অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ তথা সিটু নেতা সমন পাঠকের অভিযোগ, তাঁদের আন্দোলনেই রাজ্য সরকার বাধ্য হয়েছিল ৬০ বছর পর্যন্ত চা শ্রমিকদের ভাতা দিতে। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে আইনগত প্রক্রিয়াগুলি পালন করা উচিত ছিল সরকারের। তাঁর দাবি, এ বার রাজ্য সরকারকেই এর দায় নিয়ে পদক্ষেপ করতে হবে।
কংগ্রেস প্রভাবিত চা শ্রমিক সংগঠন এনইউপিডব্লুর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মণি কুমার ডার্নাল পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘‘বন্ধ বাগান শ্রমিকদের বিষয়ে যে কোনও সিদ্ধান্ত স্পর্শকাতর ভাবে নেওয়া উচিত ছিল। তবে হঠাৎ করে যদি কোনও শ্রমিক ভাতা থেকে বাদ যান, তবে আমরা আন্দোলনে নামব।’’ তৃণমূলের চা শ্রমিক সংগঠনের নেতা অলোক চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘আইনের ঊর্দ্ধে কেউ নন। তবে চা শ্রমিকদের স্বার্থেই রাজ্য পদক্ষেপ করেছিল। নিশ্চই সরকারের তরফে ফের বিষয়টি বিবেচনার জন্য আবেদন করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy