বিশ্ব অর্থনীতির ভবিতব্য বদলানোর সংকল্প করল উন্নত ও উন্নয়ন-শীল রাষ্ট্রগুলির জোট জি-২০।
বিশ্ব জুড়ে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আর্থিক স্থিতি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও ২০১৮-এর মধ্যে বিশ্বের এই ২০টি প্রধান অর্থনীতির জাতীয় আয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানোর লক্ষ্যের সঙ্গে আপসে নারাজ তারা। শনিবার জি-২০ গোষ্ঠীর সদস্যদের অর্থমন্ত্রী ও শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্তাদের বৈঠকের প্রথম দিনে জানানো হয়েছে, “খরচ কমাতে গিয়ে আর্থিক বৃদ্ধির সঙ্গে রফার প্রশ্নই নেই। আর্থিক সংস্কারের হাত ধরে এগিয়ে চলাই এখন মূলমন্ত্র।” তবে সে পথে হাঁটার উপযুক্ত সময় এখনও আসেনি বলে মনে করছে জার্মানির মতো কিছু রাষ্ট্র।
জি-২০ গোষ্ঠীর নেতারা গত ফেব্রুয়ারিতে সিডনির বৈঠকেই এই সমস্ত দেশের জাতীয় আয় ২০০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর অঙ্গীকার করেন। গোষ্ঠীর নেতৃত্ব এ বছরে যে-দেশটির হাতে রয়েছে, সেই অস্ট্রেলিয়ার অর্থমন্ত্রী জো হকি-ই সে বার এই লক্ষ্যমাত্রার কথা ঘোষণা করেন। এ দিনও নতুন করে সেই লক্ষ্যে অটল থাকার অঙ্গীকার করেছেন হকি। সাধারণ ভাবে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারপার্সন জ্যানেট ইয়েলেন সমেত বিভিন্ন রাষ্ট্রই আগামী নভেম্বরে ব্রিসবেনে জি-২০ শীর্ষ বৈঠকে এই লক্ষ্যপূরণে অনেকটা এগোনোর কথা জানাতে পারবেন বলে আশাবাদী। আর্থিক সংস্কারের যে-পথ ধরে এগিয়ে জি-২০ তার লক্ষ্য ছুঁতে চায়, তার
একটি রূপরেখাও জানানো হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। সেগুলি হল:
• শিল্প পরিচালনায় স্বচ্ছতা বাড়ানো এবং কর ফাঁকি বন্ধ করা
• পরিকাঠামোয় লগ্নি বাড়াতে প্রয়োজনে আইন বদল
• শেয়ার বাজার, ব্যাঙ্ক-বিমার মতো ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে এগুলির কাঠামোয় রদবদল
• বিধিনিষেধ তুলে বিভিন্ন অর্থ-নীতিতে অবাধ বাণিজ্যের দরজা খোলা
এর মধ্যে জি-২০-র এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে কর ফাঁকি ঠেকাতে বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের একমত হওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এর জন্য একটি আন্তর্জাতিক কর আইনও চায় জি-২০। নয়া জমানায় এক একটি রাষ্ট্রে নামমাত্র কর দেওয়া, আবার অন্যত্র দ্বৈত কর ব্যবস্থা বাতিল করার পক্ষে সওয়াল করেছে সদস্যরা। সবাই যাতে ন্যায্য কর জমা দিতে বাধ্য থাকে, তার জন্যই এই ব্যবস্থা জরুরি বলে জি-২০ সূত্রের দাবি। প্রসঙ্গত, ভারত ইতিমধ্যেই কর ফাঁকি ঠেকানো নিয়ে কড়া আইন আনার প্রস্তাব জি-২০-র মঞ্চে দিয়েছে। ২০১৩-র জি-২০ বৈঠকে এই লক্ষ্যে সদস্যেরা সর্বসম্মত ভাবে একটি ১৫ দফা প্রস্তাবও এনেছিল।
এ দিকে জার্মানির মতো কিছু সদস্য রাষ্ট্র বৈঠকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, অনেক দেশেই এখনও ঋণের বোঝা বিপুল। ব্যয়সঙ্কোচের উল্টো পথে হেঁটে সরকারি খরচ লাগামছাড়া ভাবে বাড়ালে বিপদ ঘটতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জার্মানি। ফলে বৃদ্ধির হার ২০০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো কতটা যুক্তিসঙ্গত হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তারা। চিন থেকে শুরু করে জাপান, জার্মানি, রাশিয়ায় সম্প্রতি বৃদ্ধির হার যে-ভাবে ধাক্কা খেয়েছে, তাতে এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয় বলে আশঙ্কা তাদের।
আগামী কালই শেষ হচ্ছে জি-২০-র মন্ত্রী পর্যায়ের এই বৈঠক। ভারতের অর্থ প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ছাড়াও যোগ দিচ্ছেন অর্থ সচিব অরবিন্দ মায়ারাম এবং আরবিআই গভর্নর রঘুরাম রাজন।
শীর্ষ সম্মেলনে আসতে পারেন পুতিন। নভেম্বরে ব্রিসবেনে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যোগ দিতে পারেন বলে ইঙ্গিত মিলেছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে পশ্চিমী দুনিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার অসন্তোষের জেরে পুতিন শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দানা বেঁধেছে। তবে ৬ সেপ্টেম্বর রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই করায় পরিস্থিতি কিছুটা ভাল বলে কূটনৈতিক মহলের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy