দিন বদলেছে। ভোটারদের আনুকূল্য পেতে আর শুধু কাজের হিসেব বা পরিকল্পনার ফিরিস্তিতে চিঁড়ে ভেজে না। বরং এ ক্ষেত্রে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ওই সব কাজ বা প্রতিশ্রুতি উপস্থাপনার কৌশল। যা তৈরি করছে ব্যবসার নয়া সুযোগ। আর তাকেই হাতিয়ার করে এই লোকসভা নির্বাচনে দেশের প্রায় ১৫০ উপদেষ্টা সংস্থা ৭০০-৮০০ কোটি টাকার ব্যবসা করবে বলে বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের দাবি।
সাধারণ ভাবে রেওয়াজ হল, প্রার্থী কী বলবেন, কী ভাবে প্রচার চালাবেন সে সব স্থির করে দেয় তাঁর রাজনৈতিক দল। প্রাধান্য পায় দলের দৃষ্টিভঙ্গী। কিন্তু এখন শুধু রাজনৈতিক তত্ত্বের কচকচানি কতটা পৌঁছয় ভোটারদের কানে? বিশেষত যেখানে এ বার ভোটদাতাদের একটা বড় অংশই নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি? আর তাই প্রচার-কৌশলের খোলনলচে বদলাতে বাধ্য হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলি। কী বলা উচিত থেকে শুরু করে কী ভাবে তা উপস্থাপনা করতে হবে এ সব কিছু সম্পর্কেই পরামর্শ পেতে পেশাদার উপদেষ্টা সংস্থার সাহায্য চাইছে তারা। চাইছে ভোটারের দরজার পাশাপাশি তাঁদের মোবাইলে পৌঁছতে। তার জন্য প্রযুক্তির সন্ধান পেতেও উপদেষ্টাদেরই দ্বারস্থ হচ্ছেন প্রার্থীরা। ফলে নতুন ব্যবসার সুযোগ তৈরি হয়েছে এই চাহিদা থেকে।
তথ্য বলছে, ১৮ থেকে ২৩ বছরের প্রায় ১৫ কোটি ভোটার এ বারই প্রথম ভোট দেবেন। যাঁদের অনেকেই প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবের হিসেব বুঝে নিতে দড়। অনেকে আবার দিনভর ব্যস্ত মোবাইল-ল্যাপটপের প্রযুক্তি নির্ভর দুনিয়ায়। তাই তাঁদের কাছে পৌঁছতে হলে আর যা-ই হোক, শুধু রাজনৈতিক বক্তৃতা যে যথেষ্ট নয়, তা বিলক্ষণ জানে জাতীয় এবং আঞ্চলিক দলগুলি। আর সেই কারণেই প্রচারের কৌশলকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। প্রার্থী বা তাঁর দল কী বলছে, কী ভাবে বলছে, রেডিও বা টিভিতে বক্তৃতা কেমন, এ সমস্ত কিছুই অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠছে জনসংযোগের ক্ষেত্রে। তা ছাড়া আগের থেকে প্রতিযোগিতা এখন অনেক তীব্র। তাই নিজের বুদ্ধি প্রয়োগের পাশাপাশি পেশাদারি ছোঁয়ার প্রয়োজন হচ্ছে সর্বত্র।
রাহুল গাঁধী আলাদা করে তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে বসছেন। চা বিক্রির আসরে জনসংযোগে নেমেছেন নরেন্দ্র মোদী। গত বিধানসভার পরে এ বারও প্রচার কৌশলে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের পড়ুয়ারা সামিল হয়েছেন অনেক ক্ষেত্রে। এমনকী পেশাদার সংস্থাকেও নিয়োগ করছে কেউ কেউ।
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, প্রথমত ভোটারদের মন পেতে নিবিড় জনসংযোগের প্রয়োজন বাড়ছে। আর সেই সূত্রেই পেশাদার ভাবে পা ফেলতে হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলিকে। অ্যাসোচ্যামের সেক্রেটারি জেনারেল ডি এস রাওয়াতের মতে, ভোটে জয়ীরা চান জয় ধরে রাখতে। আর পরাজিতদের লক্ষ্য থাকে, কেন পরাজয় তার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা খুঁজে ভবিষ্যৎ রণকৌশল স্থির করা। তাঁর কথায়, “এ সবের জন্যই প্রয়োজন পেশাদারি ভাবনার।”
ওই বণিকসভাটির হিসেবে, প্রায় ১৫০ ছোট-বড় উপদেষ্টা সংস্থা আসন-পিছু এক লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থ নিয়ে থাকে। অনেক সময় রাজনৈতিক দলগুলিকে বছরে ৫০ লক্ষ টাকায় কিংবা প্রার্থী পিছু পাঁচ লক্ষ টাকায় প্যাকেজও তৈরি করে দেয় তারা।
পরিবর্তে কী ধরনের পরিষেবা মেলে তাদের কাছে? বণিকসভাটি জানিয়েছে, প্রচার ও বিপণন কৌশল স্থির করা, সংবাদ মাধ্যমকে সামলানো, ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জনতার কাছে পৌঁছনো, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সম্ভাবনা বোঝার চেষ্টা ইত্যাদি অনেক কিছুই ওই উপদেষ্টা সংস্থাগুলির কাজের মধ্যে পড়ে। যেমন, কোনও সংস্থা হয়তো গুচ্ছ ই-মেল বার্তা পাঠিয়ে জনমানসে ধাক্কা দিতে চায়। কারণ তারা মনে করে, ভোটারদের মন বুঝে সঠিক বার্তা প্রেরণ এই ভোট-যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
পেশাদার সংস্থার হাত ধরা শুধু বড় শহর বা বড় রাজনৈতিক দলেই সীমাবদ্ধ নয়। বণিকসভার দাবি, এই অস্ত্র আঁকড়ে ধরেছে আঞ্চলিক দলগুলিও। দিল্লি, মুম্বই, কলকাতার মতো বড় শহরের বাইরেও চাহিদা বাড়ছে উপদেষ্টা সংস্থাগুলির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy