Advertisement
১১ মে ২০২৪
নেহাতই চটক, অভিযোগ শিল্পমহলের

লক্ষ্য লগ্নি, গন্তব্য সিঙ্গাপুর থেকে সটান সুন্দরবন

সিঙ্গাপুর থেকে সুন্দরবন। ঝাঁ চকচকে আধুনিক শহর থেকে এ বার জলে-জঙ্গলে লগ্নির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে শিল্পপতিদের নিয়ে সুন্দরবন পাড়ি দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি সূত্রে খবর, আপাতত ঠিক হয়েছে, যে-সব শিল্পপতি সিঙ্গাপুর সফরে গিয়েছিলেন, তাঁদের নিয়েই অক্টোবর শেষে সুন্দরবনের ঝড়খালি যাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:২৬
Share: Save:

সিঙ্গাপুর থেকে সুন্দরবন।

ঝাঁ চকচকে আধুনিক শহর থেকে এ বার জলে-জঙ্গলে লগ্নির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে শিল্পপতিদের নিয়ে সুন্দরবন পাড়ি দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি সূত্রে খবর, আপাতত ঠিক হয়েছে, যে-সব শিল্পপতি সিঙ্গাপুর সফরে গিয়েছিলেন, তাঁদের নিয়েই অক্টোবর শেষে সুন্দরবনের ঝড়খালি যাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সরকারি সূত্রের খবর, ‘কোর-কমিটি’র সাম্প্রতিক বৈঠকে শিল্পপতিদের সুন্দরবনে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সূত্রেই যাঁরা সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন, সেই সব শিল্পপতিদের ৩০ ও ৩১ অক্টোবর ঝড়খালি যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম। যেহেতু জলযানে করে যেতে হবে এবং সেখানে আসন সংখ্যা সীমিত, তাই যাঁরা যাবেন তাঁদের দ্রুত তা জানাতে বলে শিল্প-কর্তাদের ই-মেল পাঠিয়েছেন নিগমের ‘কর্পোরেট কমিউনিকেশন’ বিভাগের আধিকারিক। সরকারি সূত্রের খবর, যে-কোনও শিল্পের পাশাপাশি পর্যটন, অরণ্য এবং পরিবহণ ক্ষেত্রে লগ্নির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখাই এই সফরের মূল উদ্দেশ্য।

শিল্পমহলের কেউ কেউ এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক মনে করলেও অনেকেরই অভিযোগ, ঘোরাফেরা যতটা হচ্ছে, কাজের কাজ ততটা হচ্ছে না।

বাম আমলেই প্রথম ঝড়খালিকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তার আগে সুন্দরবনে সরকারি উদ্যোগে যে-সব পরিকাঠামো গড়ে উঠেছিল তা নিতান্তই ছিল সাদামাটা।

এই মুহূর্তেও সুন্দরবনে পরিকাঠামোর দুর্বলতাই সেখানে লগ্নির ক্ষেত্রে বড় বাধা। পরিকাঠামোর উন্নতি না-হলে কোন ভরসায় বিনিয়োগকারী সেখানে টাকা ঢালতে যাবেন? সেটা অনেকটা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুতে দেওয়ার সামিল হবে না তো, প্রশ্ন রয়েছে শিল্পমহলের একাংশের মনে।

এর উপর রয়েছে সুন্দরবনে পরিবেশ সংক্রান্ত নানা নিষেধাজ্ঞা। কোনও লগ্নির আগে সেই বিষয়টিও স্পষ্ট হওয়া জরুরি, মত শিল্পমহলের। যদিও সরকারি সূত্রের পাল্টা দাবি, পরিবেশ আইন ভেঙে কিছু করা হবে না। নিয়মের মধ্যে থেকেও অনেক কিছুই করা যায়। সরকার পক্ষের যুক্তি, সুন্দরবনের যা সম্ভাবনা রয়েছে, তার বেশিটারই সদ্ব্যবহার করা হয়নি। সেই পড়ে থাকা সুযোগই কাজে লাগাতে শিল্পের কাছে আর্জি জানাচ্ছে রাজ্য।

বস্তুত, দেশে-বিদেশে শিল্প সম্মেলনের কোনও খামতি না-থাকলেও রাজ্যে সার্বিক পরিবেশের উন্নতি না-হলে লগ্নি আদৌ কতটা আসবে, সে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। শিল্প-কর্তাদের ভিন্ন স্বাদ দিতে এর আগে রাজারহাটের ইকো পার্কে (প্রকৃতি-তীর্থ) জলে ঘেরা দ্বীপের ভিতরের কাচঘরেও শিল্প সংক্রান্ত ‘কোর-কমিটি’র বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী। ভিন্ন পরিবেশের স্বাদ পেলেও শিল্পমহলের একাংশের প্রশ্ন ছিল, শুধু জায়গা বদলে লাভ কতটা হবে? নিছক বাহ্যিক আড়ম্বরের চেয়ে জমি নীতি, পরিকাঠামো, এ সব ঠিক না-করে শুধু এই ধরনের চটক খুব একটা ফলদায়ী হবে না।

উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুরের শিল্প সম্মেলনেও জমির সমস্যার মতো প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেই। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ওই শিল্প-সফরে আবাসন বা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে কয়েকটি যৌথ উদ্যোগ চুক্তি হওয়া ছাড়া এখনও পর্যন্ত সে ভাবে স্পষ্ট নয়, রাজ্য এর কতটা সুফল পাবে।

সেখান থেকে ফিরেও বার দুয়েক স্থানীয় শিল্পপতি ও বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, সর্বশেষ বৈঠকে ৮টি দেশের কনসাল জেনারেল বা গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীরা থাকলেও বাকিদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন সাম্মানিক কনসাল জেনারেল, যাঁরা স্থানীয় শিল্পপতি। সে ক্ষেত্রে তাঁদের মাধ্যমে রাজ্যে লগ্নির বার্তা কতখানি ভিন্ দেশে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন উঠেছে।

আবার কিছু দিন আগেও নিগমের দফতরে এক-জানলা ব্যবস্থা ‘শিল্পসাথি’র জন্য যে-ঘর বরাদ্দ ছিল সেটাই বদলে হয়েছে ‘সিনার্জি সেন্টার’। যদিও শিল্পসাথির মতো ওই সেন্টারেরও কাজ একই, সম্ভাব্য লগ্নিকারীদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। তা হলে নতুন কেন্দ্র চালুর দরকার হল কেন, প্রশ্ন রয়েছে শিল্পমহলের অনেকের মনেই।

প্রশ্ন যতই থাকুক না-কেন, বিভিন্ন উৎসব বা পুরস্কারের মতো রাজ্যের শিল্প পরিকল্পনার চটকেও খামতি নেই, এমনটাই অভিযোগ শিল্পমহলের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sundarban investment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE