সুদ কমার পথ প্রশস্ত করার জন্য যথেষ্ট মালমশলা জড়ো হয়েছে গত সপ্তাহে। সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির হার আশাতীত ভাবে নেমে এসেছে মাত্র ১.৭৭ শতাংশে। আগের মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে যা ছিল ২.৩৮ শতাংশ। একই সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছিল অক্টোবরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার ৫.৫২ শতাংশে নামার খবর। এই জোড়া খবরে বাজার ধরেই নেয়, ডিসেম্বরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমাতে চলেছে। ফলে আর শুধু স্পর্শ করে নেমে আসা নয়। শুক্রবার ২৮ হাজারে মজবুত ভাবে চেপে বসে সেনসেক্স। ১০৬ পয়েন্ট বেড়ে বন্ধ হয় ২৮,০৪৭ অঙ্কে। নিফ্টিও পৌঁছয় সর্বকালীন উচ্চতায়।
তবে আগামী ঋণনীতি পর্যালোচনার সময়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যদি সুদ কমানোর পথে না হাঁটে, তা হলে বাজার সাময়িক কিছুটা পড়লেও মাঝারি থেকে দীর্ঘ মেয়াদে কিন্তু তার তেজি থাকার সম্ভাবনা প্রবল। যে সব কারণে সূচকের আরও উত্থান আশা করা যায়, তা হল:
• এখনই যদি না-ও কমে, অদূর ভবিষ্যতে সুদ কমার সম্ভাবনা প্রবল। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে একটু রাশ টানতে পারলেই সুদ কমানো হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
• শিল্পবৃদ্ধির হার গত জুলাই এবং অগস্টে ছিল যথাক্রমে ০.৪ ও ০.৪৮ শতাংশ। অথচ তা-ই এ বার সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৫ শতাংশে।
• কয়েক দিন পরেই সংসদে বসবে শীতকালীন অধিবেশন। সকলের আশা, এই অধিবেশনে মোদী সরকার আর্থিক সংস্কারে গতি আনবে। আলোচনা হতে পারে বিমা বিল, পণ্য পরিষেবা বিল, প্রত্যক্ষ কর বিধি ইত্যাদি নিয়ে। সরকার সংস্কারের পথে হাঁটলে তা শক্তি জোগাবে সূচককে।
• খাদ্যে ভর্তুকি নিয়ে ভারতের দাবি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মেনে নেওয়াতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে ভারতের লড়াইয়ের অবসান হবে। উন্নতি হবে ভারতের সঙ্গে পশ্চিম দুনিয়ার সম্পর্কের।
• আগামী কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ হতে মাত্র সাড়ে তিন মাস দেরি। এই বাজেটে সরকার আগামী চার বছরের জন্য অর্থনৈতিক দিশা দেখাতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
• মন্ত্রিসভায় রদবদল ও সম্প্রসারণ বিশেষ করে রেল এবং প্রতিরক্ষা দফতর বণ্টন বাজারের পছন্দ হয়েছে।
গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক তথা ষান্মাসিক কোম্পানি ফলাফল প্রকাশের পালা। ভাল-খারাপ মিলিয়ে এ বারের ফল মিশ্র বলা চলে। ভাল ফলাফল প্রকাশ করেছে দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। ৭২৫ কোটি টাকা বেড়ে ৩ মাসের লাভের অঙ্ক পৌঁছেছে ৩১০০ কোটি টাকায়। একই সঙ্গে কমেছে ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদের অনুপাত।
তবে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমায় ১০ শতাংশ নিট মুনাফা কমেছে বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ওএনজিসি-র। জুলাই-সেপ্টেম্বর, এই তিন মাসে সংস্থাটির নিট লাভ ৬,০৬৪ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ৫,৪৪৫ কোটি টাকা। বিক্রি বাড়লেও লাভ কমে গিয়েছে টাটা মোটরস-এর। ৬০,১৬৪ কোটি টাকা বিক্রির উপর গত ৩ মাসে সংস্থাটির নিট মুনাফা হয়েছে ৩,২৯১ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫১ কোটি টাকা কম। কলকাতার সংস্থা সিইএসসি-র নিট মুনাফা ১৭১ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ১৯২ কোটি টাকা। গত তিন মাসে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের। ৪৫ শতাংশ লাভ কমেছে স্টিল অথরিটির। ১,১৮০ কোটি টাকা থেকে নেমেছে ৬৪৯ কোটি টাকায়। জমি বিক্রি বাবদ লাভের সুবাদে গত তিন মাসে টাটা স্টিলের নিট মুনাফা ছুঁয়েছে ১,২৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১,১৪৭ কোটি এসেছে মুম্বই শহরে একটি জমি বিক্রির লাভ থেকে।
এ দিকে, সুদ কমার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় শেয়ার বাজার খুশি ঠিকই। কিন্তু এই খবর চিন্তায় রেখেছে অবসরপ্রাপ্ত বহু মানুষকে। বিশেষ করে কয়েক বছর আগে যাঁরা অবসর নিয়েছেন। যাঁদের হাতে লগ্নিযোগ্য তহবিল আছে, তাঁদের উচিত হবে সুদ কমার আগেই বর্তমান সুদে দীর্ঘ মেয়াদে তা লগ্নি করা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy