Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
সেপ্টেম্বরে স্বস্তি দিতে আগাম সওয়াল কেন্দ্রের

সুদ কমালেন না সাবধানী রাজন

সুদ কমানোর অস্ত্র আপাতত বার করলেন না রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন। লক্ষ্য বহু ব্যবহারে তার ধার যাতে পড়ে না-যায়। বেশ কিছুটা আয়ত্তের মধ্যে থাকা পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তলানিতে ঠেকা তেলের দাম সুদের হার কমানোর রাস্তা কিছুটা খুলে দিলেও রাজন সেই পথে হাঁটলেন না।

ঋণনীতি পেশ করে সাংবাদিক বৈঠকে রাজন। ছবি: পিটিআই

ঋণনীতি পেশ করে সাংবাদিক বৈঠকে রাজন। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৫ ০২:৪৭
Share: Save:

সুদ কমানোর অস্ত্র আপাতত বার করলেন না রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন। লক্ষ্য বহু ব্যবহারে তার ধার যাতে পড়ে না-যায়।

বেশ কিছুটা আয়ত্তের মধ্যে থাকা পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তলানিতে ঠেকা তেলের দাম সুদের হার কমানোর রাস্তা কিছুটা খুলে দিলেও রাজন সেই পথে হাঁটলেন না। কারণ, তিনি চান সুদ কমানোর অনুকূলে আরও একটু প্রশস্ত জমি, যাতে সময় এলেই বুঝেশুনে এগোনো যায়। এই যুক্তিতেই মূলধনী বাজারের আশায় জল ঢেলে এবং কিছুটা কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েই সুদের হার কমালেন না রাজন। তবে মঙ্গলবার ঋণনীতির পর্যালোচনায় বসে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগামী ২৯ সেপ্টেম্বরের ঋণনীতির আগে সুদের হার কমানোর কথা ভাবা যেতে পারে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্য এখনই বাড়ি-গাড়ি ঋণে সুদ কমছে না। ফলে স্বস্তি পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। শিল্প-ঋণেও কমছে না সুদের বোঝা। স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান অরুন্ধতী ভট্টাচার্য এ দিনই জানিয়ে দেন, ‘‘খুব তাড়াতাড়ি সুদ আর কমানো সম্ভব হবে না।’’ অাইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের এমডি ছন্দা কোছরও বলেন, ‘‘সুদ কমলেও তার জন্য কিছুদিন সময় লাগবে। আরবিআইয়ের ঋণনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়েই তা কমানো হবে।’’

এ যাত্রায় সুদ না-কমানোর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজনের বক্তব্য, ছোট ছোট মাপে ক্রমাগত সুদের হার কমিয়ে চললে একটা সময়ে কোনও সঙ্কটে বড় ভাবে সুদের হার কমিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আরও যে-বিষয়টি বিবেচনা করেছে তা হল, মূল্যবৃদ্ধিতে কিছুটা লাগাম পরানো গেলেও দেশের রফতানি তেমন বাড়েনি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, চলতি আর্থিক বছরে রফতানি আগের বছরের থেকে কম হবে। বিষয়টি চিন্তায় ফেলেছে রাজনকে। ঋণনীতিতে প্রধানত যে-সব হার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বিবেচনা করে দেখে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে: রেপো রেট (স্বল্প মেয়াদে ব্যাঙ্ককে দেওয়া আরবিআই ঋণে সুদের হার), রিভার্স রেপো (ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার সময়ে রিজার্ভ যে-হারে সুদ দেয়), সিআরআর (আমানতের যে-অংশ আরবিআইয়ের কাছে বাধ্যতামূলক ভাবে বিনা সুদে ব্যাঙ্ককে জমা রাখতে হয়), এসএলআর (বাধ্যতামূলক ভাবে ব্যাঙ্ককে যে-টাকা সরকারি ঋণপত্রে বিনিয়োগ করতে হয়)। সমস্ত হারই অপরিবর্তিত রাখলেন তিনি। ফলে রেপো রেট ৭.২৫%, রিভার্স রেপো ৬.২৫, সিআরআর ৪%, এসএলআর ২১.৫ শতাংশেই বহাল রইল।

কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক অবশ্য মনে করছে, এ বার সুদের হার কমানোর সব শর্তই ইতিবাচক ছিল। কারণ সাধারণ ভাবে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে। তবে মন্ত্রকের শীর্ষস্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, এই দফায় যে শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ ছাঁটাইয়ের পথে না-ও হাঁটতে পারে, সেটা কেন্দ্র আন্দাজ করতে পেরেছিল। মন্ত্রকের ওই সূত্রের মতেও সেপ্টেম্বরে সুদের হার কমানো আরও বেশি জরুরি। কারণ মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ ওই সময়ে তাদের সুদের হার বাড়াতে শুরু করলে এ দেশের মূলধনী বাজার থেকে বিনিয়োগ বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। ভারতে শেষ পর্যন্ত বর্ষার পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, সেই ছবিটাও তখনই স্পষ্ট হবে।

রাজনও সুদ কমানোর আগে তিনটি বিষয়ই ভাল করে দেখে নিতে চান: প্রথমত, মূল্যবৃদ্ধি কতটা স্থায়ী ভাবে আয়ত্তে থাকে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি কোথায় দাঁড়ায়। কারণ, সার্বিক ভাবে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার কমলেও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার জেরেই খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধি মে মাসের ৫.০১% থেকে বেড়ে জুন মাসে দাঁড়িয়েছে ৫.৪%। দ্বিতীয়ত, বর্ষা শুরুতে ভাল হলেও শেষ পর্যন্ত অবস্থা কী দাঁড়ায় কেন্দ্রের মতো তা নিয়ে তিনিও চিন্তিত। তৃতীয়ত, সুদের হার বাড়ানোর ব্যাপারে আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্ত নিয়ে শঙ্কা।

তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ না-কমানোর সিদ্ধান্ত জানার পরে শিল্পমহল হতাশার কথাই জানিয়েছে। সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিল্পে ঋণের চাহিদা নেই। কম সুদে ঋণ মিললে লগ্নির বহর কিছুটা বাড়তে পারত।’’ একই ভাবে ফিকি প্রেসিডেন্ট জ্যোৎস্না সুরি বলেন, ‘‘সুদ না-কমানোর সিদ্ধান্ত শিল্পমহলকে হতাশ করেছে।’’ রফতানিকারীদের সমস্যার কথা জানিয়ে ইইপিসি চেয়ারম্যান অনুপম শাহ বলেন, ‘‘চড়া সুদের জন্য রফতানিকারীদের তহবিল জোগাড়ের খরচ বেশি পড়ছে। রফতানি বাড়ানোয় এটি একটি বাধা। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমালে রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তা সহায়ক হত।’’

অন্য দিকে আজ রঘুরাম রাজন নিজেই বলেছেন, সুদ নীতি কমিটির বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বোঝাপড়া হয়েছে। কিন্তু কী সেই বোঝাপড়া, তা এখনও কোনও পক্ষই খোলসা করতে চাইছে না। তবে আর্থিক বিধির খসড়ায় যে-ভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে কমিটিতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেখান থেকে মোদী সরকার সরে আসবে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আইন সংশোধনের জন্য বিল এনে এবং সংসদে তা পাশ করিয়েই সুদ নীতি কমিটি তৈরি হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE